যুক্তরাজ্যের মডেল ক্লোয়ি এইলিংকে গতবছর ইতালিতে অপহরণ করে ছয়দিন আটকে রাখা হয়। কিন্তু তিনি যখন মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন, অনেকেই তার দেয়া বর্ণনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
তিনি মুক্তি পেয়েছেন আর কীভাবে তাকে সন্দেহ করা মানুষজনের সঙ্গে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন এগুলো তিনি বর্ণনা করেছেন। দু’দিন ধরে একটি সুটকেসের মধ্যে শেকলে আটকে থাকার পর, ক্লোয়ি এইলিং তার অপহরণকারীর সঙ্গে বিছানায় যেতে রাজি হন।
তিনি বলেন, ‘যতই আমরা কথাবার্তা বলতে শুরু করলাম, আমাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করল এবং তখনই আমি বুঝতে শুরু করলাম সে আমাকে পছন্দ করছে। তখনি আমি জানতাম আমাকে এর সুযোগ নিতে হবে।’
দক্ষিণ লন্ডনের বাসিন্দা বিশ বছরের ক্লোয়ি এইলিং জানান, ফটোশুটের জন্য লুকায হের্বা নামের একজনের আমন্ত্রণে তিনি গত বছরের জুলাই মাসে ইতালির মিলান শহরে যান। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাকে মাদক ইনজেকশন দেয়া হয় আর হাত বেঁধে গাড়িতে ভরে প্রত্যন্ত একটি ফার্ম হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়।
এইলিং বলেন, এটা ছিল অত্যন্ত ভীতিকর। ওই ফার্ম হাউসে যাওয়ার পর হের্বা নামের তার অপহরণকারী তাকে জানায়, তিন লাখ ইউরো না দেয়া হলে তাকে যৌনদাসী হিসাবে বিক্রি করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম সে যা বলছে, তার সবই সত্যি। তাকে এক সেকেন্ডের জন্যও আমার সন্দেহ হয়নি কারণ, সে আমার প্রতিটি প্রশ্নের খুঁটিনাটি উত্তর দিচ্ছিল।
কিন্তু সেই অপহরণকারী এটাও জানতে চায় যে, সে এইলিংকে চুমু খেতে পারে কি-না এবং তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠা সম্ভব কি-না। আমি তখন ভাবলাম, এটাই আমার এখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ। যখন আমি তাকে বললাম যে, এটা ভবিষ্যতে হতে পারে, তখন সে খুবই উৎফুল্ল হয়ে যায় এবং সত্যিই ভাবতে শুরু করে যে এরকম কিছু হতে যাচ্ছে। সে সব সময় এ বিষয়েই কথা বলতে শুরু করে। তার এই আচরণ দেখে আমি বুঝতে পারি, আমাকে বিষয়টি চালিয়ে যেতে হবে।’
যখন সেই অপহরণকারী বুঝতে পারে যে, কোন মুক্তিপণ পাওয়া যাবে না তখন সে তাকে ছেড়ে দেয় এবং নিজেই গাড়ি চালিয়ে মিলানে ব্রিটিশ কনস্যুলেটে পৌঁছে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যখন তারা কনস্যুলেট খোলার অপেক্ষায় একটি ক্যাফেতে বসে ছিলেন, তাদের হাসতে আর মজা করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ওই মডেল বলেন, হয়তো অনেকের কাছে অবাক লাগতে পারে, কিন্তু কেন আপনি এমন একজনের সঙ্গে মুখ গোমড়া করে থাকবেন, যার আপনার জন্য আবেগ রয়েছে এবং সেজন্য আপনাকে মুক্তিও দিয়েছে? সে যাতে আমার প্রেমে পড়ে, সেজন্য আমার সবকিছুই করতে হয়েছে।
অপহরণকারীর হাত থেকে ওই মডেল উদ্ধার পাওয়ার পর অপহরণকারীকে আটক করা হয়। চলতি বছরের জুনে আদালতের বিচারে ১৬ বছর নয় মাস কারাদণ্ড হয়েছে পোল্যান্ডের নাগরিক হের্বার। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে হের্বা বলেছেন, এর আগে এইলিংয়ের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে এবং তিনি তার প্রেমে পড়ে যান। তার দাবি, তিনি একটি স্ক্যান্ডাল তৈরি করতে চেয়েছিলেন যাতে এইলিং সবার কাছে আরও বেশি পরিচিতি পান।
কিন্তু এইলিং বলছেন, আমি এখনো তার উদ্দেশ্যটি বুঝতে পারছি না। শুধুমাত্র টাকার জন্য সে আমাকে অপহরণ করেনি। সে দু’বছর আগে ফেসবুকে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়। মনে হচ্ছে সে অনেকদিন আগে থেকেই আমার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছিল।
মুক্তির পর যুক্তরাজ্যে ফিরে যখন এইলিং টেলিভিশন সাংবাদিকদের কাছে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন, অনেকে সমালোচনা করেন যে সে সময় তাকে হাসি-খুশী দেখাচ্ছিল। তার পোশাক পরিচ্ছদও ছিল তার নিজের পছন্দ মতো।
তিনি বলেন, বাড়িতে ফিরে আসার আনন্দে তিনি ছিলেন খুবই আনন্দিত, কারণ এটা সত্যি হবে বলে তিনি আশা করেননি। বিমান থেকে নামার সময় তার পরনে ছিল একটি শর্টস আর একটি টপ। ক্লোয়ি এইলিং বলেন, ‘আমি আসলে শুধুমাত্র আমার মতোই ছিলাম। আমি সাংবাদিকদের ডেকেছিলাম, কারণ আমার মনে হয়েছিল এরপরে তারা আর আসবে না। কিন্তু সেটা আসলে কাজ করেনি।
মানুষজন আশা করেছিল যে আমি সারাক্ষণ কান্নাকাটি করবো এবং সারা বিশ্ব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখবো, কোন ক্যামেরার দিকে তাকাবো না। আমি সেটা হয়তো করতে পারতাম, কিন্তু ভেবে দেখলাম সেটা কি আমাকে কোন সাহায্য করবে? কিন্তু এটা নিয়ে কথা বলে, আশপাশের মানুষের সঙ্গে মিশে হয়তো আমি এটা কাটিয়ে উঠতে পারবো।
পুরো ঘটনাটি নিয়ে একটি বই লিখেছেন এইলিং। তিনি বলেন, এটা খুবই অবাক ব্যাপার যে, হের্বার সাজাপ্রাপ্তির পরেও মানুষজন তাকে নিয়ে সন্দেহ করে। তিনি এজন্য গণমাধ্যমকে দায়ী করেন, যারা মানুষের ব্রেইনওয়াশ করেছে। নারীদের কাছ থেকেই তিনি বেশিরভাগ অবমাননাকর মন্তব্য পেয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই কষ্টদায়ক, কারণ আমি আমার নিজের দেশে এতো খারাপ অভিজ্ঞতা আর অবিশ্বাসের ভেতর দিয়ে যাবো, সেটা কখনো আশা করিনি।’
সূত্র: বিবিসি