ঢাকার সবুজবাগ। বড্ড বেকায়দায় পড়ে গেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মজিবর রহমান। তরুণী এক যাত্রীকে নিয়ে এসেছেন। পানি কিনতে গিয়ে তিনি হাওয়া। ফেলে গেছেন একটা লাগেজ। এটার কী হবে? কী আছে ওতে? তরুণীর কথা অন্যদের বলতেই লোক জমে গেল। খোলা হলো লাগেজ। ভেতরে এক বৃদ্ধের লাশ। হত্যা করা হয়েছে তাঁকে। ৮ এপ্রিলের ঘটনা এটি।
তরুণীর যাওয়ার কথা ছিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে। অটোরিকশা যখন সবুজবাগের নন্দীপাড়া আসে, তখন রাত নয়টা, রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট। তরুণী তখন চালককে বলেন, তাঁর খুব তেষ্টা পেয়েছে। এক বোতল পানি কিনেই চলে আসবেন।
কিন্তু তরুণী সেই যে গেলেন, আর দেখা নেই। চালক তখন বাধ্য হয়ে সবুজবাগ মাদারটেক প্রজেক্টের মুখে আলমগীরের চায়ের দোকানের সামনে অটোরিকশা নিয়ে আসেন। তরুণীর ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। আশপাশে ঘুরে যখন তরুণীর খোঁজ পাওয়া গেল না, তখন স্থানীয় লোকজনকে ঘটনাটি জানান তিনি। প্রশ্ন জাগে, তরুণীর লাগেজের ভেতর কী?
লাগেজটাকে ঘিরে ভিড় জমে যায়। স্থানীয় চায়ের দোকানদার আলমগীর ও যুবক রহিম তরুণীর লাগেজ খোলেন। আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাগেজের চেইন খুলেই দেখি বৃদ্ধের লাশ। বয়স ষাটের মতো। আমরা সবাই ভয় পেয়ে যাই।’
রহিম মুঠোফোনে সবুজবাগ থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। লাশের পরিচয় না পাওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে ৯ এপ্রিল অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। শুরু হয় তদন্ত।
মামলায় অজ্ঞাত বৃদ্ধের বয়স দেখানো হয় ৫৭ বছর। গায়ের রং ফরসা। গলায় কালো দাগ। লাগেজটি বাদামি রঙের ওড়না ও স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো ছিল। লাগেজের ভেতর দড়ি আর কালো বোরকা ছিল। লাশের ছবি তুলে পুলিশ তাঁর পরিচয় জানতে বিভিন্ন জায়গায় বেতার বার্তা পাঠায়। কিন্তু দুই দিনেও লাশের পরিচয় মেলেনি।
মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরিফুজ্জামান অটোরিকশাচালক মজিবর রহমানকে খুঁজে বের করেন। তিনি ভেবেছিলেন, তরুণী কোন এলাকা থেকে সিএনজি ভাড়া করেন, চালক হয়তো তাঁকে জানাতে পারবেন। কিন্তু মজিবর তাঁকে জানান, তরুণী আরেকটি অটোরিকশায় করে সবুজবাগ প্রজেক্টের মুখে আসেন। সেই চালককে তিনি চেনেন না। মজিবরের কাছ থেকে তরুণীর চেহারা ও শারীরিক গঠন সম্পর্কে জেনে নেন এসআই শরিফুজ্জামান। শুরু করেন তদন্ত। একে একে খুলে যায় এই হত্যা রহস্যের জট।
জানা গেল, মৃত ব্যক্তি শফিউল আলম ভূঁইয়া। আদম ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁকে কোথায়, কীভাবে হত্যা করা হয়, সে রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে পুলিশ ওই বৃদ্ধের ছেলের সঙ্গে এক তরুণীর গভীর সম্পর্ক খুঁজে পায়। এই সম্পর্কের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড।
শফিউলের ছেলে সৈকত হোসেন। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট হলেও ৩০ বছরের এই যুবকের জন্ম ঢাকায়। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। মা-বাবার সঙ্গে খিলগাঁওয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার পর মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শেখেন। খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে একটি দোকানও নেন। ২২ বছর বয়সে নূর চাঁদ হোসেনকে বিয়ে করেন। এখন শাফিন আল আহসান নামের ২ বছরের এক ছেলের বাবা। তবে স্ত্রী শুরু থেকে অনেক দিন ঢাকায় থাকেননি। ঝালকাঠিতে বাবার বাড়িতে ছিলেন।
সৈকতের দুই বোনের মধ্যে ২০ বছর বয়সী ছোট বোন নাসরিন জাহান স্বামীসহ মা-বাবার সঙ্গে খিলগাঁওয়ে থাকেন। নাসরিনের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী লাবণী আক্তার (১৯)। ছয় বছর বয়সে লাবণীর বাবা মারা যান। মা নতুন সংসার পাতেন। তখন থেকে দাদি আসমা বেগমই তাঁর সব। দাদির কাছে থেকে লাবণী খিলগাঁওয়ের একটি কলেজে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ছেন।
বোনের বান্ধবী হিসেবে লাবণীর সঙ্গে পাঁচ বছর আগে পরিচয় সৈকতের। বিয়ের বিষয়টি লাবণীর কাছে গোপন করেন সৈকত। ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।নাতিকে কোলে নিয়ে শফিউল। ছবি: সংগৃহীত
নাতিকে কোলে নিয়ে শফিউল। ছবি: সংগৃহীত
সৈকতের বোন নাসরিনের ভাষ্য, সৈকতকে ভালোবেসে ফেলেন লাবণী। কক্সবাজার, রাঙামাটিসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা ঘুরে এসেছেন। লাবণী তাঁদের বাসায়ও আসতেন। সৈকতকে বিয়ে করার জন্য ব্যাকুল ছিলেন লাবণী। বছর দুয়েক আগে একপর্যায়ে লাবণী সৈকতের বিয়ের ঘটনা জেনে ফেলেন। এরপরও লাবণী মুখ ফেরাননি। সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
লাবণী সৈকতকে যেমন অন্ধের মতো ভালোবাসতেন, তেমনি বিভিন্ন সময় সৈকতকে অর্থ দিয়েও সহায়তা করেছেন। সৈকতের বিয়ের খবর শোনার পর লাবণী হতাশ হয়ে পড়েন।
প্রথম আলোকে দেওয়া লাবণীর দাদি আসমা বেগমের ভাষ্য, সৈকতের সঙ্গে লাবণীর প্রেম পাঁচ বছরের। সৈকত তাঁর নাতনিকে বিয়ে করতে চাইতেন, কিন্তু লাবণী যখন জানতে পারেন যে সৈকত বিবাহিত, তখন লাবণী আর রাজি হননি। বিদেশে চলে যাবেন বলে জানান। কষ্ট করে তিনি টাকাপয়সাও জোগাড় করেন। ভিসাও আসে।
লাবণীর বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা শুনে সৈকতও সৌদি আরবে যেতে টাকাপয়সা জমা দেন। এ ব্যাপারে সৈকতের বোন নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, ভাইয়া বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকাপয়সা জমা দেন। শেষ পর্যন্ত আর ভাইয়ার ভিসা হয়নি। তবে লাবণীর লন্ডনের ভিসা হয়। ভাইয়ার ভিসা না হওয়ায় লন্ডনে আর যাননি লাবণী। তাঁরা দুজনে বিদেশে গিয়ে বিয়ে করবেন বলে পরিকল্পনা করেন।
সৈকতের কাছে টাকা পেতেন স্থানীয় দুই যুবক। নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিশোধ না করায় একদিন যুবকেরা খিলগাঁও এলাকায় সৈকতকে আটকান। খবর পেয়ে লাবণী সেখানে ছুটে যান। সৈকত টাকা দিতে না পারলে তিনি দেবেন বলে কথা দেন।
লাবণীর দাদি বলেন, সৈকতের পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছেন লাবণী। সৈকতের বোন নাসরিনও এ কথা স্বীকার করেন। সৈকতকে না পাওয়া, তাঁর পেছনে প্রচুর টাকা ঢালা—এসব থেকে লাবণীর মনে হতাশা আর ক্ষোভ জমে বলে ঘনিষ্ঠজনেরা জানান।
আট বছরের বিবাহিত জীবনে সৈকতের স্ত্রী নূর চাঁদ বেশির ভাগ সময় ঝালকাঠিতে বাবার বাড়িতে থেকেছেন। মাস ছয়েক আগে সৈকতের বাবা শফিউল তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। বিষয়টি জানতে পারেন লাবণী।
শফিউলের নিখোঁজ হওয়া
সেদিন ছিল রোববার। পল্টনের অফিস থেকে কাজ শেষে বেলা তিনটার দিকে বাসায় ফেরেন শফিউল। বিকেল চারটার দিকে তাঁর মুঠোফোনে কল আসে। অজ্ঞাত লোকের সঙ্গে কথা বলার পর স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনকে শফিউল বলেন, একজনের সঙ্গে দেখা করতে হবে। শিগগিরই ফিরে আসবেন।
বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি। মেয়ে নাসরিন বাসার নিচে গিয়ে ছাতা দিয়ে আসেন। বৃষ্টির মধ্যে শফিউল রাস্তা ধরে হেঁটে যান খিলগাঁও ঈদগাহ মসজিদের দিকে। বিকেল পাঁচটার পরও ফিরে না আসায় সন্ধ্যার দিকে স্ত্রী ফরিদা স্বামী শফিউলের মুঠোফোনে কল করেন। কিন্তু বন্ধ পান। যেখানেই যান শফিউল কখনো মুঠোফোন বন্ধ রাখেন না।
মুঠোফোন বন্ধ পেলেও স্ত্রী ফরিদার ধারণা ছিল, স্বামী ভালোই আছেন। নিশ্চয়ই রাতে ফিরে আসবেন।
শফিউল যেখানেই থাকেন না কেন, রাত ১০টার মধ্যে ফিরতেন। কিন্তু সেদিন রাত ১২টার পরও তিনি বাসায় ফিরলেন না। মুঠোফোনও বন্ধ। তখন শফিউলের পরিচিত ব্যক্তি, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে ফোন করেন ফরিদা আর নাসরিন।
রাত দুইটার দিকে শফিউলের বন্ধু লোকমানকে মুঠোফোনে কল দেন ফরিদা। লোকমান জানান, দুপুরে কোনো এক মেয়ে শফিউলকে ফোন দিয়েছিলেন বলে তিনি জানেন। এর বেশি কিছু জানেন না।
মায়ের কাছে এ কথা শুনে নাসরিনের মনে নানা সন্দেহ ঘুরপাক খায়। পরদিন দুপুরে লাবণীর বাসায় গিয়ে বাবার নিখোঁজ সংবাদের কথা তিনি বলেন। লাবণী তখন শফিউলের জন্য কান্নাকাটি করেন।
ঘটনার পরদিন খিলগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন নাসরিন। খিলগাঁও এলাকায় খোঁজ না পেয়ে এক দিন পর নাসরিন তাঁর মাকে নিয়ে র্যাব অফিসে যান। কিন্তু খোঁজ না পেয়ে তাঁরা চলে আসেন বাসায়।
দুদিন পর তাঁরা জানতে পারেন, সবুজবাগ থানার পুলিশ একটি লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছে। নাসরিন তাঁর মাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে বাবা শফিউলের লাশ শনাক্ত করেন। ছেলে সৈকত এ সময় বাগেরহাট ছিলেন বলে তাঁর মা জানান। বাবার লাশ শনাক্ত করার পরও তিনি ঢাকায় আসেননি। কারণ, ময়নাতদন্ত শেষে শফিউলের লাশ নেওয়া হয় বাগেরহাটের শরণখোলায়। বাবাকে দাফন করার পর মা, বোন আর স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হন সৈকত। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে পৌঁছার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সৈকতকে গাড়িতে তুলে নেন। সৈকতকে থানায় নিয়ে বাবার মৃত্যুর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর মোবাইল ফোনের কথোপকথনের রেকর্ড তল্লাশি করা হয়। বেরিয়ে আসে লাবণীর নাম।
মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরিফুজ্জামান এই তদন্ত করেন। লাবণীর দাদির বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। লাবণীর কক্ষ থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করেন শরিফুজ্জামান। শফিউলকে কীভাবে হত্যা করতে হবে, খুনের আগে কী কী করতে হবে, তা লেখা ছিল এই চিরকুটে।
পরে মামলার তদন্তভার পান ডিবির পরিদর্শক আরিফুর রহমান। লাবণীর মুঠোফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) পর্যালোচনা করে ডিবি দেখে, শফিউলের মুঠোফোনে সেদিন কল দিয়েছিলেন লাবণী। তাঁদের মধ্যে আলাপও হয়েছে। এরপর লাবণীকে গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের নয় দিন পর ১৭ এপ্রিল সন্দেহভাজন খুনি হিসেবে লাবণীকে মাগুরা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
১৮ এপ্রিল লাবণী ঢাকার আদালতে শফিউলকে খুন করার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। এর আগেই লাবণীর বোন হীরা ও ভাই অনিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা এখন কারাগারে।
ডিবির পরিদর্শক আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শফিউলকে লাবণীর দাদির বাসায় খুন করা হয় বলে তথ্য দিয়েছেন তিনি।
দাদি আসমা বেগম অবশ্য প্রথম আলোকে বলেন, ষড়যন্ত্র করে তাঁর নাতনিকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। শফিউল খুনে লাবণী বা তার ভাই, বোন জড়িত নন। বিনা দোষে তাঁরা জেল খাটছেন।
আরিফুর রহমান বলছেন, লাবণী আদালতকে জানিয়েছেন, কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে শফিউলকে খাওয়ানো হয়। পরে শ্বাসরোধে তাঁকে হত্যা করা হয়। সৈকত স্বয়ং এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। সৈকত অবশ্য খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে কোনো জবানবন্দি দেননি।
কোথায় খুন করা হয়েছে—এ ব্যাপারে পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা, লাবণী তাঁর দাদির বাসায় শফিউলকে খুন করেছেন।
লাবণীর দাদির বাসায় গিয়ে দেখা যায়, এটি একতলা ভবন। তিনটি কক্ষের একটিতে থাকেন লাবণী। একতলা ভবনের পাশে আছে আরেকটি টিনশেড ভবন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরিফুর বলেন, তাঁরা এখনো শতভাগ নিশ্চিত না যে কোথায় শফিউলকে খুন করা হয়েছে? আগের অটোরিকশাচালককে খুঁজে পাওয়া গেলে জানা যেত লাগেজ নিয়ে লাবণী কোত্থেকে উঠেছিলেন।
শফিউল কেন খুন হলেন?
তদন্তের সূত্র ধরে ডিবি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলছেন, মাস ছয়েক আগে লাবণীর ফোন নম্বর সংগ্রহ করেন শফিউল। তখন থেকে লাবণীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন তিনি। লাবণীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করেন। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি লাবণী ও সৈকত। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে শফিউল লাবণীর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
আরিফুর রহমান বলেন, এভাবে চলতে থাকার পর লাবণীই শফিউলকে খুন করার পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ হিসেবে মৃত্যুর কয়েক দিন আগে থেকে লাবণী মুঠোফোন বার্তায় শফিউলকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা চালান। ঘটনার দিন লাবণী তেমনই এক বার্তা শফিউলের মুঠোফোনে পাঠান।
আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে পুলিশ বলেছে, লাবণীর জবানবন্দি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শফিউল হত্যাকাণ্ডে তাঁর ছেলে সৈকত সরাসরি জড়িত।
শফিউলের স্ত্রী ফরিদা অবশ্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাবণী আমার স্বামীকে বলেছিল, “চাচা, সৈকতের স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, আমি দেনমোহরের ৫ লাখ টাকা দিয়ে দেব।” তখন আমার স্বামী তাঁকে বলেছিল, “লাবণী, এটা হয় না। সৈকতের বউ আছে, ছেলে আছে।”’
শফিউলের মেয়ে নাসরিন বলেন, ‘একটা পর্যায়ে লাবণী হয়তো উপলব্ধি করে যে আমাদের পরিবার কোনো দিন তাকে বাড়ির বউ করবে না। তাকে আমরা নাচাচ্ছি। আমাদের ওপর তার ক্ষোভ ছিল। আব্বু যখন লাবণীকে এ ব্যাপারে মেসেজ দিয়েছিল, তখন এ সুযোগটাকে লাবণী কাজে লাগিয়েছে।’
নাসরিন কেবল এটুকুই বলেছেন। লাবণী কীভাবে সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছেন, এ নিয়ে আর কিছু বলেননি।