বিশ্বজুড়ে বাংলা বই’ স্লোগানে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হল একটি বাংলা ‘ডিসি বইমেলা-২০১৮’। ড. আশরাফ আহমেদের লেখা ‘পান্ডুলিপির একাত্তর’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যমে মেলার সূচনা করেন সাবেক গভর্নর ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমেদ।
বইটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ফখরুদ্দিন আহমেদ বলেন, আশরাফ আহমেদের সাথে আমার প্রথম পরিচয় আশির দশকে যখন তিনি বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতেন যা এখনও অব্যাহত রেখেছেন। অবশ্য এখন তিনি লেখক হিসেবেই বেশি পরিচিতি পাচ্ছেন। ‘পান্ডুলিপির একাত্তর’ এর কিছু অংশ পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। লেখকের ভাষায় একাত্তর আমাদের জীবনের এক বিশাল প্রান্তর। এখানে অনেকগুলো ঘটনা, অনেকগুলো দ্বন্দ্ব উঠে এসেছে। এখানে উঠে এসেছে তার সময়কার, তখনকার ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের কথা, উঠে এসেছে তার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার ও না যাওয়ার দ্বন্দ্বের কথা, উঠে এসেছে কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে মুক্তিযোদ্ধা নয় সেই দ্বন্দ্বের কথা।
ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠে ভার্জিনিয়ার এনানডেল শহরে নোভা কম্যুনিটি কলেজের সুবিশাল ক্যাম্পাসে মেলার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। বাংলাদেশ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন ‘সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি’ প্রধান ফরিদ আহমেদ, কবি সৈয়দ আল ফারুক, ডঃ নাসরিন জেবিন, পারমিতা হীম এবং শিল্পী নাহিদ নাজিয়া। কবি-লেখক ছাড়াও অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাস, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক, বিশ্বব্যাংক, এবং ভয়েস অব আমেরিকার বর্তমান ও প্রাক্তন সাংবাদিকবৃন্দ।
মেলার লেখক-কুঞ্জে চলে লেখক-পাঠকের আলাপচারিতা। বই পরিচিতির ফাঁকে ফাঁকে চলে ‘ছানাপোনার জটলা’, কবিয়ালের পুঁথিপাঠ, ধারাবাহিক গল্পবলা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি, গানের ছোঁয়ায় কবিতা, এবং অত্যন্ত উপভোগ্য চিত্রনায়িকা সুচিত্রা সেনের জীবনালম্বনে ভিডিও ও গল্পের সাথে সাথে জনপ্রিয় গান। মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে যে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়েছিল সকাল ১১টায়, তার সমাপ্তি ঘটে রাত প্রায় সাড়ে ১১টায়।
এই দিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিল ‘ডিসি বইমেলা-২০১৮ পুরষ্কার’। ‘আগুনমুখার মেয়ে’ নামে আত্মজৈবনিক গ্রন্থটির জন্য পুরষ্কৃত হন নূরজাহান বোস। বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয় এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ঔপন্যাসিক দিলারা হাশেমকে।
বাংলাদেশ থেকে ছয়টি প্রকাশনা সংস্থা ডাকযোগে পাঠিয়েছিলেন অসংখ্য বই। দুটি প্রকাশনা সংস্থা বসেছিল নিজস্ব স্টল নিয়ে। তিনজন লেখক বসেছিলেন নিজ নিজ স্টল নিয়ে। নিজে উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশ ও আমেরিকার অনেক লেখকও তাদের বই পাঠিয়েছেন। ফলে অনুষ্ঠান চলাকালীন বিশাল হলঘরে অনুষ্ঠানস্থলের তিন পাশের দেয়ালঘেঁষে গড়ে ওঠা সবকটি প্রকাশনা সংস্থার স্টলে প্রায় সব সময়েই লেগেছিল ক্রেতাদের ভিড়।
‘দীপালিকা’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করেছিলেন আয়োজকরা। মেলা শেষে প্রধান অতিথি শামসুজ্জামান খান ঘোষণা, আগামী বছর থেকে ঢাকার বাংলা একাডেমি ডিসি বইমেলাকে সরাসরি সহযোগিতা প্রদান করবে।