লাকির বাসা থেকে কোটা আন্দোলনের নেতা ‘আটক’

কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন করা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা এ বি এম সুহেলকে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকি আক্তারের বাসা থেকে আটকের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে কোটা আন্দোলনের অন্তত ‍তিন জন নেতা এখন নিরাপত্তা হেফাজতে। এদের মধ্যে রাশেদ খাঁন দুই দফায় ১৫ দিনের রিমান্ড পার করছেন। আর ফারুক হাসান আছেন কারাগারে। তবে সুহেলের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ সেটা স্পষ্ট নয়।

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমানকে কয়েকবার কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সুহেল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গত এপ্রিলে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামার পর তিনি হামলার শিকার হয়েছিলেন।

লাকি ফেসবুকে লেখেন, ‘ক্যাম্পাসে আমার ডিপার্টমেন্টের ছোটভাই এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক সুহেল আমার বাসায় ছিল। তারা তাকে তুলে নিয়ে গেছে।’

ভোর সোয়া চারটা নাগাদ তার বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালায়। শুরুতে তারা বেশ উত্তেজিত ছিলেন বলেও জানান ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী।

এত রাতে কোন অভিযোগে আমার বাসায় তল্লাশি করবেন-এমন প্রশ্নও করেন লাকি। আর তর্কা-তর্কির এক পর্যায়ে তারা দরজা ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়।

‘আমি বললাম আপনারা সকালে আসেন। অনেকক্ষণ বাক-বিতণ্ডার পর অবশেষে তারা বাড়িওয়ালা আংকেলকে নিয়ে আসলে সাড়ে চারটার দিকে আমি দরজা খুলি’-লেখেন লাকি।

‘যাওয়ার আগে বাসার কম্পিউটারের হিস্ট্রি চেক করেন। এছাড়া সুহেল যে রুমে ছিল সেখানে তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালান। সুহেলের ব্যবহৃত একটি ফোন ছাড়া আর কিছুই তারা পাননি।’

‘প্রায় দেড় ঘণ্টা তারা আমার বাসায় অবস্থানকালে সুহেলকে আলাদারুমে হাতকড়া পরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় আমাদের সব ফোনগুলো তারা জব্দ করে রাখেন। আমার ফোনও তারা চেক করেন। যদিও ঘরে প্রবেশ করার পর আমাদের কারও সাথে উত্তেজিত আচরণ করেননি তারা।’

‘সুহেলকে নিয়ে যাওয়ার আগে আমি জানতে চাইলাম ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ কী। তারা বললেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। আমার বাসায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের লিফলেট-পোস্টার আছে কি না জানতে চান। বাসায় সেরকম কোনো কিছু না থাকায় আমি তাদের দেখাতে পারিনি। তবে সেজন্য তারা বাড়তি কোনো তল্লাশিও করেননি।’

লাকি জানান, যাওয়ার আগে সুহেল তার মাকে কিছু না জানাতে অনুরোধ করেছেন। কিছুদিন আগে তার বাবা মারা গেছেন। তাই এই ঘটনা জানতে পারলে তারা মা আরও ভেঙে পড়তে পারেন।

লাকি গোয়েন্দাদের এই অভিযানের তীব্র নিন্দা জানান। বলেন, ‘যখন তখন সাদা পোশাকে নাগরিকদের ঘরে হানা দেওয়ার এই সংস্কৃতি একজন নাগরিক হিসেবে আমাকে শঙ্কিত করে। তবে কি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত থাকলে মানুষকে এভাবে আতঙ্ক নিয়ে রাত কাটাতে হবে?’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১১ এপ্রিল সংসদে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এরপর ২ মে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন এবং ২৭ জুন সংসদে আবার একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

কিন্তু ২৭ জুন রাতেই ফেসবুকে কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খাঁনের এক ভিডিওবার্তা পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলে।

রাশেদ অভিযোগ করেন, কোটা বাতিলের বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তার রক্ত গরম হয়ে গেছে জানিয়ে আবার আন্দোলনে নামতে ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এমন কথাও বলেন, ‘মনে হয় এটা তার বাপের দেশ’

এই কটূক্তি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে রাশেদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ছাত্রলীগ নেতা আল নাহিয়ান জয়। ১ জুলাই রাশেদকে গ্রেপ্তারের আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনের কয়েকজন নেতার ওপর হামলা হয়।

এই হামলার প্রতিবাদে দুই দিন পর ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মসূচিতে আবার হামলা হয়। সেখান থেকে আটক করা হয় কোটা আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানকে। একই দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরিকুল ইসলামকে।

এর মধ্যে দুই দফায় রিমান্ডে নেয়া হয়েছে রাশেদকে। ২ জুলাই থেকে ৭ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আট জুলাই আদালতে হাজির করে দুই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তাকে।

আবার কোটা বিষয়ে সুপারিশ করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি কাজ করছে। তাদেরকে ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ৫৬ শতাংশ কোটা আছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, ১০ শতাংশ করে নারী ও জেলা কোটা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা পাঁচ শতাংশ এবং এক শতাংশ আছে প্রতিবন্ধী কোটা।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা সন্তানদেরকেও দেয়। এরপর জামায়াত-শিবির অনুসারীরা এই কোটা বাতিলের দাবিতে নানা সময় আন্দোলন করে ব্যর্থ হয়েছে। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে কোনো বিশেষ কোটার নাম উল্লেখ না করে সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানানো হয়।