শিমুর রবীন্দ্রনাথ

শিমু দের এই গানগুলোর বাণী আর সুর একাকার; সংগীতায়াজন আর শিল্পীর পরিবেশনা মিলেমিশে গড়ে উঠেছে এক অপূর্ব শিল্পসৃষ্টি। গানের সঙ্গে মিশে গেছেন শিল্পী, তাঁর সঙ্গে মিশে যাবে শ্রোতারা’—

শিমু দের তৃতীয় অ্যালবাম ‘তোমায় আমায় মিলে’র প্রচ্ছদ ভূমিকায় কথাগুলো লিখেছেন ঔপন্যাসিক আনিসুল হক।

গত সপ্তাহে ছায়ানটে এক অনুষ্ঠানে অ্যালবামটির মোড়ক খোলা হয়। সাজানো হয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রেম আর পূজা পর্বের আটটি গান নিয়ে। যন্ত্রানুষঙ্গ পরিচালনায় হিমাদ্রি শেখর। শিমু বলেন, ‘অনেক যত্ন নিয়ে অ্যালবামটির কাজ করেছি। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন অন্য সব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মতো নয়। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যুগেও তারা সিডি প্রকাশ করে। এতে অন্য রকম একটা আবহ তৈরি হয়, ভালো লাগা কাজ করে। একটা আর্কাইভাল ভ্যালু থাকে।’

কেমন সাড়া পাচ্ছেন? ‘এখন তো সিডির যুগ নয়; মিউজিক ভিডিওর সময়। সবাই অনলাইনে গান শোনে। তার পরও অনেকেই গানগুলো শুনে পছন্দ করেছে, ভালো লাগার কথা জানিয়েছে।’

আপনিও কি ভিডিও করবেন? শিমু জানান, মিউজিক ভিডিওর একেবারেই পক্ষে নন তিনি। তাঁর মতে, গান কোনোভাবেই দেখার বিষয় না। এটাকে হূদয় দিয়ে অনুধাবন করতে হয়। তবেই আসল স্বাদ পাওয়া যায়।

২০১২ সালে লেজার ভিশন থেকে আসে শিমুর প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘চাই শুনাবারে’। সংগীতায়োজনে ছিলেন ভারতের শুভায়ু সেন মজুমদার। দ্বিতীয় একক ‘সাগরপারের সুর’ বের হয় এ বছর পহেলা বৈশাখে ইমপ্রেস অডিও ভিশন থেকে। এটির সংগীতায়োজন করেছেন ভারতের ইন্দ্রজিৎ দে। দ্বিতীয় অ্যালবামটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করেছিলেন গায়িকা। রবীন্দ্রনাথের পাশ্চাত্য সুরের গানগুলো দিয়ে সাজান এটি। বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লন্ডনে অনেক গান শুনে অনুপ্রাণিত হন। এসব পাশ্চাত্য সুরে তাঁর অনেক গান আছে। এই অ্যালবামে সেই গানগুলো গেয়েছি। তিনি যে গান শুনে অনুপ্রাাণিত হয়েছিলেন সেই ইংরেজি গানটাও অ্যালবামে রেখেছি। বাইরের দেশে এ রকম কাজের অনেক উদাহরণ আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এটাই প্রথম।’

আধুনিক গানেও পারঙ্গম শিমু। ২০০৬ সালে ‘বেঙ্গল বিকাশ’-এ নাম লিখিয়ে আধুনিক ও রবীন্দ্রসংগীত দুই বিভাগেই সেরা তিনে জায়গা করে নেন। পরের বছর বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে সেরা তিন প্রতিযোগীকে নিয়ে আধুনিক ও রবীন্দ্রসংগীতের দুটি অ্যালবাম বের করা হয়। দুই অ্যালবামেই দুুটি করে রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক গানে কণ্ঠ দেন।

ছেলেবেলায় বাবার হাত ধরে গানের জগতে প্রবেশ করেন শিমু। বড় দুই বোনও গান করতেন। পরিবার থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছেন গান নিয়ে স্বপ্ন দেখার। অল্প বয়সেই বাবাকে হারান। এরপর গান শিখেছেন সিরাজগঞ্জের ওস্তাদ ভরতচন্দ্র প্রসাদ ও রতনলাল সূত্রধরের কাছে।

২০০৮ সালে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে রবীন্দ্রসংগীতে অনার্স করেন। পরের বছর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স। গানের তালিম নিয়েছেন ওয়াহিদুল হক, সুজিত মোস্তফা, লিলি ইসলাম, হিমাদ্রি শেখর ও ভারতের সারথি চ্যাটার্জির কাছ থেকে।

১৯৯৮ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। ২০০১ ও ২০০৩ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে আরো দুইবার স্বর্ণপদক জমা হয় তাঁর ভাণ্ডারে।

২০০৩ সালে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের প্রতিযোগিতায় পেয়েছিলেন ‘অনন্য মান’। পর পর দুটি অ্যালবাম বের হলো। এবার নিশ্চয়ই একটু বিরতি নিতে চান? শিমু হেসে বলেন, ‘আমার কোনো বিরতি নেই। বাংলাদেশ বেতারে প্রযোজক হিসেবে কাজ করছি ২০১৩ সাল থেকে। সেখানেও আমার কাজ গান নিয়ে। বাসায় ফিরেও গানের রেওয়াজে বসে যাই। একটু অবসর পেলে পিয়ানো নিয়ে নাড়াচাড়া করি। এটা আমার শখ। শিগগিরই বড় একটি কাজে হাত দেব। শ্রোতাদের একটু চমকে দিতে চাই বলেই আপাতত সব খোলাসা করতে পারছি না।’