বর্ষার শুরুতেই তীব্র নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে শরীয়তপুরবাসী। পদ্মা নদীর পানি বেড়ে প্রবল স্রোতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। সাত দিনের ভাঙনে বেড়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে পদ্মাপারের হাজার হাজার মানুষ।
বর্ষার শুরুতেই উত্তাল হয়ে উঠেছে পদ্মা। তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পদ্মা তীরবর্তী এলাকার মানুষ। ঘরবাড়ি হারানোর ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন এসব এলাকার মানুষ। এদিকে ভাঙন প্রতিরোধে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গত দুই সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ভাঙনে নড়িয়ার বাঁশতলা এলাকায় অন্তত ২শ’ ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙতে শুরু করেছে সুরেশ্বর, চরমহন, হালইসার, মূলপাড়া, কেদারপুর, চর নড়িয়া, সাহেবের চর, পূর্ব নড়িয়া, পাঁচগাও, চর জাজিরা, মাদবর কান্দি ও শেরআলী কান্দী। এতে পদ্মা পাড়ের এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মাদরাসা, মসজিদসহ অন্তত অর্ধশতাধিক সরকারি বেসরকারি স্থাপনা নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে।
গত দুই বছরে পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার প্রায় ৭ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে ৮ হাজার বসত বাড়ি, ১৮৫ কিলোমিটার সড়ক, ১ কিলোমিটার সুরেশ্বর রক্ষা বাঁধ, ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫৫ মসজিদ মাদরাসাসহ প্রায় ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার সম্পদ।
এ ক্ষতি এড়াতে নড়িয়া-জাজিরা উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গত ২ জানুয়ারি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পের আওতায় দুই উপজেলায় ৯ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ ও চর ড্রেজিং করা হবে।
তবে এ বিষয়ে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছে, একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পটি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার কারণে বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। তবে জরুরি ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানান তারা।
কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফেজ সানাউল্লাহ্ বলেন, নদী ভাঙনের ভয়াবহতা এতো বেশি যে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়ি অথবা স্থাপনা নদীতে চলে যাচ্ছে। এই বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।
মূলপাড়া গ্রামের আব্দুল গণি ছৈয়াল ও বাঁশতলা গ্রামের আলমগীর হোসেন আলম বলেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরও ভাঙন দেখা দিয়েছে। জানি না ভিটেমাটি নিয়ে এ বছর থাকতে পারবো কিনা। বর্ষার শুরুতেই ভাঙন শুরু হওয়ায় ভয় হচ্ছে।
নড়িয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল লতিফ বেপারী বলেন, অব্যাহত ভাঙনে ফসলি জমি, গাছপালা এবং বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। নদী ভাঙনের ভয়াবহতা এতো বেশি যে, প্রতিদিনই ঘরবাড়ি নদীতে চলে যাচ্ছে। যেভাবে ভাঙছে তাতে নড়িয়া উপজেলাটি কিছু দিনের মধ্যে শরীয়তপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন জানান, জেলা প্রশাসক সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তারেক হাসান বলেন, বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প থাকলেও তা বাস্তবায়নে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার কারণে একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। আগামী নভেম্বর নাগাদ প্রকল্পটির কাজ শুরু করা যাবে। তবে বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে অস্থায়ী বাধ নির্মাণ করার জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।