বৈধ পথে পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন এবং জীবিকা নির্বাহ করা আল্লাহর দরবারে অনেক মর্যাদাসম্পন্ন কাজ। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে যত নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের প্রায় সবাই নিজ উপার্জিত অর্থ দ্বারাই জীবিকা নির্বাহ করতেন। আল্লাহ তাআলা মানুষকে বৈধ পন্থায় জীবিকা নির্বাহের নির্দেশ প্রদান করেছেন।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে হালাল জীবিকা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘হে মানব জাতি! তোমরা পৃথিবীর দ্রব্য-সামগ্রী থেকে হালাল বস্তু আহার কর এবং (কখনও) শয়তানের অনুসরন করো না। নিশ্চয় সে (শয়তান) তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৬৮)
আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য মহা অনুগ্রহ হলো বৈধ জীবিকা উপার্জন। মনে রাখতে হবে বান্দার যদি আন্তরিক ইচ্ছা ও কর্ম প্রেরণা থাকে তবে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বৈধ পন্থায় জীবিকার সুব্যবস্থা করে দেন। বৈধ জীবিকার আশ্বাস দিয়ে বান্দাকে উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা আমার অনুগ্রহের কথা কিন্তু ভুলে যেওনা যে, আমি তোমাদেরকে আহারের জন্যে এমন উত্তম খাদ্য হালাল করেছি যা অত্যন্ত সুস্বাদু; তোমরা আগ্রহের সঙ্গে তা আহার কর, সে সব খাদ্য তোমাদের দৈহিক বা মানসিক কোনো প্রকার ক্ষতি করে না।’
বৈধ পন্থায় উপাজির্ত জীবিকা বান্দার জন্য মহা নেয়ামত। তিনি বান্দার জন্য এমন সব খাদ্যের ব্যবস্থা রেখেছেন যা খেলে বান্দার কখনো কোনো ক্ষতি হবে না। যা মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়ক। এটা বান্দার জন্য আল্লাহর মহা অনুগ্রহ।
আল্লাহ তাআলা কুরআনের বিভিন্ন জায়গা হালাল খাদ্য গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আবার এ সব খাদ্যের উপকারিতা বান্দাকে জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে জীবিকা দান করেছি তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; যদি তোমরা শুধু তারই উপাসনা করে থাক।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭২)
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার জন্য হালাল বা বৈধ জিনিস খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বৈধ খাবার খাওয়ার সৌভাগ্য লাভের জন্য তারই শুকরিয়া জ্ঞাপনে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর এসবই বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার একান্ত মেহেরবানী।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন- আমি আমার বান্দার জন্য হালাল যে সব সম্পদ দান করেছি তা তাদের জন্য হালাল ঘোষণা করেছি; আমি আমার বান্দাদেরকে আমার একত্ববাদের অনুসারী রূপেই সৃষ্টি করেছি; কিন্তু শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে এবং আমার হালাল স্থির করা বস্তুকে হরাম করেছে।’
পরিশেষে…
জীবিকা নির্বাহ করতে হবে বৈধ পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে। ব্যক্তি পরিবার ও সমাজিক সব কাজে বৈধ অর্থ দ্বারাই পরিচালনা করতে হবে। দান অনুদান প্রদানেও বৈধ পথে উপার্জিত অর্থের বিকল্প নেই।
অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ ব্যয় এবং জীবিকা নির্বাহ মানুষের দুনিয়া ও পরকালের কোনো উপকারে আসবে না। বরং তাতে দুনিয়া পরকালের সার্বিক অকল্যাণ বয়ে আনবে। হালাল খাবার গ্রহণের প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নসিহত তুলে ধরা হলো-
হজরত সা’দ বি আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে আরজ করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার জন্যে এ দোয়া করুন, আল্লাহ তাআলা যেন আমার সব দোয়া কবুল করেন।
জবাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সা’দ! হালাল ও উত্তম খাদ্য আহার কর; তাহলে আল্লাহ তাআলা তোমার দোয়াসমূহ কবুল করবেন।
সেই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রাণ। হারাম খাদ্য মানুষের উদরে প্রবেশ করলে তার কারণে চল্লিশ দিন পর্যন্ত সে ব্যক্তির দোয়া কবুল করা হয় না। আর যে রক্ত-মাংস হারাম দ্রব্য দ্বারা গঠিত তা দোজখে যাবে। (নাউজুবিল্লাহ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বৈধ পথে জীবিক উপার্জনের তাওফিক দান করুন। মানুষের দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে বৈধ পথে উপার্জিত হালাল খাবার গ্রহণের তাওফিক দান করুন। হারাম থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।