গতকাল সোমবার রাজধানীর কলাবাগানে গিয়ে খুজে পাওয়া গেল ফরিদা-আকলিমাদের। ফরিদা-আকলিমাদের সংসারটি কলাবাগান ফুটওভার ব্রিজের নিচে । তার পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন ফরিদার স্বামী আনসার আলী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে করুন অবস্থায় জীবন যাপন করতেছে।ফরিদা-আকলিমাদের রাজধানীতে এসে ফুটপাতে আশ্রয় নেয়ার কাহিনি বললেন ।
ফুটপাতে শুয়ে থাকা অসুস্থ এক মায়ের মাথায় দুটি শিশুর পানি ঢালার ছবি নিয়ে আলোচনা যেন থামতেই চাইছে না। এক মহৎপ্রাণ মানুষের চোখে পড়ায় তার আপাতত চিকিৎসা হয়েছে। কিন্তু এই নারীর বেঁচে থাকার যে যুদ্ধ সেই চিত্র পাল্টায়নি এতটুকু।হতদরিদ্র বাংলাদেশ উন্নতি করেছে অনেকখানিই। কিন্তু তার ছোঁয়া লাগেনি ফরিদা বেগমের পরিবারে। এখনও যে মানুষগুলো চরম দারিদ্র্যসীমায় রয়ে গেছে তার মধ্যে তার পরিবারটিও রয়েছে।
প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশে ফরিদারের সংখ্যা লাখ লাখ। এর মধ্যে তিনি আলোচিত হয়ে উঠেছেন এক ভিডিওচিত্রের কারণে। রাস্তার পাশে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা ফরিদার মাথায় পানি ঢালছিল তার ১১ বছরের মেয়ে আকলিমা। পাশে সাড়ে তিন বছর বয়সী ছেলে ফরিদুল।ভিডিও চিত্রটি ধারণ করেছিলেন পারভেজ হাসান। পেশায় একজন অনলাইন ফ্রিল্যানসার। জ্বরে আক্রান্ত মায়ের মাথায় পানি দেয়া আকলিমার কাছে মায়ের অবস্থা জানতে চাইলে আকলিমা জানায়, ‘ওষুধ কিনার টাকা নেই’।
দায়িত্ব নিলেন পারভেজ হাসান। তার দেয়া ৬৫ টাকার খাবার ও ওষুধ হাসি ফুটিয়েছিল অসুস্থ মায়ের চিন্তায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আকলিমার মুখে। অসুস্থতা থেকে পরিত্রাণও পেয়েছেন ফরিদা বেগম। এরপর চিকিৎসার জন্য ফরিদাকে নেয়া হয় গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসায় সুস্থ হন তিনি।তাদের বাড়ি ছিল কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানার ইসলামপুর গ্রামে। ক্রমাগত নদী ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে তাদের মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকু। দুই বছর আগে উদ্বাস্তু হয়ে ৯ বছর বছরের মেয়ে ও দেড় বছরের ছেলেকে কোলে তুলে ঢাকায় এসেছিলেন ফরিদা ও আনসার আলী।
কিন্তু এই দুই বছরে মানসম্মত জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত টাকা আর মাথা গোঁজার ঠাঁই যোগাড় করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে রোগশোক হলে চিকিৎসা হয় বুঝি? সেটা হয়নি আর এ কারণেই ফরিদা এখন পরিচিত হয়ে উঠেছেন।প্রায় শতভাগ শিশু এখন দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলেও যারা বাদ পড়ে আছে তার মধ্যে ফরিদার দুই সন্তান। বলতে বলতে কান্না চলে এলো আনসার আলীর। শুরুতে কান্নার শব্দ আটকে রাখার চেষ্টা। কিন্তু আর পারেননি। এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন মানুষটি। বলতে থাকেন, ‘আমি অসুস্থ। হারডের রুগি। নিজে কিছু করতে পারি না। থাকারও একটা জায়গা নাই।’
অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন পারভেজ হাসান। চেষ্টা করছেন তাদের জন্য একটি আবাসনের ব্যবস্থা করতে।পারভেজ হাসান বলেন, ‘আমি যে ৬৫ টাকা দিয়ে তাদের সাহায্যের চেষ্টা করেছি, এই পরিমাণ টাকা দেশের তরুণদের কাছে আছে। তারা চাইলেই দেশের এসব ছিন্নমূল মানুষকে সাহায্য করতে পারে। আমি চাই সমাজে তরুণদের অবদান থাকুক।’