বাঁশবাড়িয়ার সমুদ্র সাঁকো!

ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক দুপুর একটা। বৃহস্পতিবার ব্যাংকে কাজের খুব চাপ। এর মধ্যে মোবাইল ফোন বেজেই চলেছে। কাজের যন্ত্রণায় ফোন ধরছিলাম না। অনেকক্ষণ পর ফোন ধরলাম। সজল মামার কণ্ঠ, ‘কীরে ব্যস্ত নাকি?’ আমি বললাম, ‘কিছুটা ব্যস্ত।’ মামা বলল, ‘নতুন একটি জায়গার সন্ধান পেয়েছি। যেখানে তুই সমুদ্রের ওপর দিয়ে হেঁটে যেতে পারবি।’ শুনে আমার কেমন জানি খটকা লাগল। শুনেছিলাম বাসুদেব শ্রী কৃষ্ণকে নিয়ে যমুনা নদী পারি দিয়ে ছিলেন। কলিকালে তো আর তা সম্ভব হওয়ার কথা নয়। বললাম, ‘মামা, ব্যাপারটা খুলে বলো।’ তখন মামা আমাকে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের কথা বলল, ‘চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কি.মি. উত্তরে একটি ছোট্ট বাজারের নাম বাঁশবাড়িয়া বাজার। এই বাজারের মধ্য দিয়ে সরু পিচ ঢালা পথে মাত্র ১৫ মিনিটে পৌঁছানো যায় বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র উপকূলে। এই সমুদ্র সৈকতের মূল আকর্ষণ হলো, প্রায় আধা কিলোমিটারের বেশি সমুদ্রের ভিতর হেঁটে যেতে পারবি।’ বললাম, ‘ঠিক আছে মামা, আমি যাব।’ বিকেল বেলায় ঢাকার বাসে চেপে বসলাম। ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাত বারোটার দিকে পৌঁছালাম ঢাকা শহরে। সেখানে আমার অস্থায়ী ডেরা মাসির বাসায় অবস্থান নিলাম। সূর্যদেব দৃষ্টি মেলে তাকানোর আগেই সজল মামার ফোন, ‘এই ঘুম থেকে উঠে প্রস্তুত হয়ে নে। আমারা একটু পরেই বের হবো।’ গত রাতের যাত্রা পথের ক্লান্তি রয়ে গেছে। তবু নতুন গন্তব্যে যাওয়ার নেশায় লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মামা চার চাকার বাহন নিয়ে উপস্থিত সাথে মামার বন্ধুরা। মিষ্টি এক সকালে আমরা এগিয়ে চলেছি। সকালবেলা তাই রাস্তায় তেমন একটা যানজটের মুখোমুখি হতে হলো না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা পদুয়ার বাজারে অবস্থিত নুরজাহান হোটেলে যাত্রা বিরতি দিলাম। গাড়ি থেকে নেমেই স্বল্প সময়ের মধ্যে পেট পূজা শেষ করে আবার গাড়িতে চেপে বসলাম। দেখতে দেখতে আমরা সীতাকুণ্ডে পৌঁছলাম। দূর থেকে কানে ভেসে আসছিল সমুদ্রের গর্জন। তখন বুঝলাম যে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। সীতাকুণ্ড থেকে কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেলাম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। ঘড়ির কাঁটাতে তখন ঠিক দুপুর একটা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লেগে গেছে। বাঁশবাড়িয়া যাওয়ার পথটা অসাধারণ। গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে আলোর খেলা। উপরে খোলা আকাশ পাশে খোলা জায়গা। একটু সামনে এগিয়ে গেলে বিশাল সমুদ্র। ঝাউ বাগানের সারি সারি গাছ ও নতুন জেগে ওঠা বিশাল বালির মাঠ। সব মিলিয়ে এক অপূর্ব রূপ ধারণ করে আছে প্রকৃতি। আজ আকাশের মন ভালো, তাই মৃদুমন্দ বাতাস বয়ে যাচ্ছে। আমরা এক পাশে জুতা রেখে দৌড় দিলাম সমুদ্রের দিকে। নিজেদের ভিজিয়ে নিলাম তার জলে। এই আনন্দ মনে হয় লিখে প্রকাশ করার মতো না। হাতের ডান দিক দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পর দেখা পেলাম বাঁশের তৈরি ব্রিজের। মামা বলল, ‘এই নে তোর সমুদ্রের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথ।’ ব্রিজের ওপর দিয়ে হেঁটে একদম শেষ প্রান্তে পৌঁছলাম। একটু পর পর ঢেউ আছড়ে এসে পায়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে সমুদ্রের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। দেখা হলো ওই এলাকার মুরুব্বি ফারুক মিয়ার সাথে। তিনি বললেন, ‘এ ব্রিজটা কিন্তু ব্যক্তিমালিকানাধীন, এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির মালিকানায় নির্মিত যা একান্তই সন্দ্বীপবাসীদের চলাচলের জন্য। ব্রিজটা প্লাস্টিকের। কারণ ব্রিজটি সমুদ্রের ওপর করা, আর লবণাক্ত পানি লোহা বা স্টিল তাড়াতাড়ি ক্ষয় করে ফেলে। আপনারা চাইলে স্পিড বোটে করে জনপ্রতি ৪০০ টাকা (আপডাউন) দিয়ে সন্দ্বীপ ঘুরে আসতে পারেন। ২০ মিনিটের মতো সময় লাগে। মামাকে বললাম ঘুরে আসার কথা, কিন্তু কেউ আর সায় দিল না। কারণ সূর্যদেবের পাটে যাওয়ার সময়ও ঘনিয়ে আসছিল। তাই পাশের ঝাউ বনে ঘুরতে গেলাম। কিছুটা পথ আবার কাদাময়। এর পরেও সমুদ্রের পারে হেঁটে বেড়ানোর মজাই আলাদা। দেখতে দেখতে সূর্যদেবের বিদায় নেওয়ার পালা চলে এলো, সাথে আমাদেরও। তবে বলে রাখা ভালো বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে অবস্থিত ব্রিজটি মজবুত খুঁটি ছাড়া নির্মিত, যার কারণে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। অহেতুক বড় দল নিয়ে ব্রিজে না ওঠাই ভালো। যেহেতু কোনো বেষ্টনী নেই, সেহেতু জোয়ার-ভাটার সময় মেনে চলা উচিত।

কি ভা বে যা বে ন

ঢাকা থেকে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে সীতাকুণ্ডে অথবা চট্টগ্রামের অলংকার থেকে সীতাকুণ্ড যাওয়ার যেকোনো বাস বা টেম্পুতে করে বাঁশবাড়িয়া নামতে হবে। ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। অলংকার থেকে চট্টগ্রাম হাইওয়ে ধরে ২৩ কি.মি. যেতে হবে। এটা বাড়বকুণ্ডের একটু আগে। বাঁশবাড়িয়া নামার পর সিএনজিতে করে আরও ২.৫ কি.মি. গেলে বেড়িবাঁধ পাওয়া যাবে। সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা করে। চাইলে রিজার্ভও নেওয়া যায়। ওখানেই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত।