গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর পাচ্ছেন ৬৬১ কোটি টাকা!

নির্বাচিত হওয়ার মাস না পেরোতেই প্রায় ৬৬১ কোটি টাকার প্রকল্প পাচ্ছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়নে এই অর্থ ব্যয় করতে পারবেন তিনি। এ জন্য ২০২০ সাল নাগাদ সময় দেয়া হচ্ছে। এর বড় অংশ দেয়া হবে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) মঙ্গলবারের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কমিশন সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে জিসিসি আওতাভুক্ত নতুন এলাকার বিভিন্ন অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার (জিওবি) থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে ৫২৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, আর জিসিসি থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে ১৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটির অনুমোদন পেলে জিসিসি কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে।

প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুসারে বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সব এলাকায় নতুন পাকা সড়ক নির্মাণ ও বিদ্যমান সড়ক প্রশস্ত করা হবে। এতে যানজট কমে আসবে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন করে ড্রেন নির্মাণ এবং বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার করা হবে।

জিসিসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমানা আয়তনে জিসিসি দেশের সবচেয়ে বড় সিটি কর্পোরেশন। ভোটার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ ২৬ হাজার। গুরুত্বের দিক থেকে দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের চেয়ে গাজীপুর কম নয়। তবে উন্নয়নে কিছুটা পিছিয়ে জিসিসি।

২০১৩ সালে গাজীপুর, টঙ্গী পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন (কাশিমপুর, কোনাবাড়ি, বাশন, কাউলতিয়া, গাছা ও পূবাইল) নিয়ে সিটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ছয়টি ইউনিয়ন (প্রায় ৮৫ বর্গকিলোমিটার) পশ্চাৎপদ ও অনুন্নত। এসব এলাকার বেশিরভাগ রাস্তা কাঁচা। এ ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যমান পাকা সড়কগুলোর প্রশস্ততা কম হওয়ায় যানজট লেগেই থাকে। বর্ষাকালে কাদাপানিতে এসব রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হয় এবং অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

এর আগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন জাগো নিউজকে বলেছিলেন, ‌’ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে সিটির রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে সাড়ে ছয়শ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনাটি সরকারের কাছে পেশ করেছি। প্রকল্পটি পাশ হলে সিটি কর্পোরেশনের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত হবে এবং বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।’

এই প্রকল্পই এখন অনুমোদন পাচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পটি গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বরাদ্দহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। সম্ভাব্যতা যাচাই করে ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (রাস্তা ও ড্রেন)’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রাকমূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। পিইসি সভার সুপারিশের আলোকেই প্রকল্প ব্যয় ৬৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা চূড়ান্ত করা হয়। বছরভিত্তিক জিওবি অর্থের চাহিদা হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চলতি অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৭৭ কোটি টাকা এবং প্রকল্পের শেষ বছরে ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। একই সময়ে জিসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে যথাক্রমে ৭৫, ৪৪ ও ১৩ কোটি টাকা।

জানা গেছে, প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হলো- ৮০ দশমিক ৩৯১ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং, ১২০ দশমিক ১৫৬ কিলোমিটার আরসিসি সড়ক নির্মাণ, ১১৪ দশমিক ৫২৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, তিনটি ডাবল কেবিন পিক-আপ ক্রয় ইত্যাদি।