ফুল কদম


কদম ফুলকে বর্ষার দূত বলা হয়। বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আসে কদম ফুল। নজরুলের ভাষায় ‘দোলে শিহরে কদম, বিদরে কেয়া/নামিল দেয়া…।’ বর্ষা বাঙালির প্রিয় ঋতুর একটি। আর এই বর্ষাতেই কদম ফুলের সৌন্দর্য আর স্নিগ্ধ ঘ্রাণ আমাদের মুগ্ধ করে, চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদম ফুলের মিষ্টি সুবাস। এ যেন জসীম উদদীনের অতি সুমধুর সেই গান—‘প্রাণ সখিরে/ওই শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে…।’ কদম ফুল সমপর্কে নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা তাঁর ‘শ্যামলী নিসর্গে’ লিখেছেন, ‘বর্ণে গন্ধে সৌন্দর্যে কদম এ দেশের রূপসী তরুর অন্যতম।’ কদম Rubiaceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Anthocephalus indicus। এছাড়াও নীপপুষপ, বৃত্তপুষপ, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, প্রাবৃষ্য, ললনাপ্রিয়, সুরভি এবং সিন্ধুপুষপ নামেও পরিচিত।

কদমের একটি পূর্ণ মঞ্জরিকে সাধারণত একটি ফুল বলেই মনে হয়। ফুল গোলাকার। পুরো ফুলটিকে একটি ফুল মনে হলেও এটি আসলে অসংখ্য ফুলের গুচ্ছ। ফুলের ভেতরে রয়েছে মাংসল পুষপাধার, যাতে হলুদ রঙের ফানেলের মতো পাপড়িগুলো আটকে থাকে। পাপড়ির মাথায় থাকে সাদা রঙের পরাগদণ্ড। ফল মাংসল, টক। এগুলো বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাবার।

আয়ুর্বেদিক চিকিত্সাশাস্ত্র মতে কদমের ছাল, পাতা ও ফুলের রস ফোড়া, মুখে ঘা, মুখে দুর্গন্ধ, জ্বরের চিকিত্সায় ব্যবহার করা হয়। কদম্বের ছাল জ্বরনাশক ও বলকারক। এছাড়াও শিশুদের কৃমি রোগ নিরাময়ে কদম পাতার রস প্রাচীন কাল থেকেই ওষুধ হিসাবে ব্যবহূত হয়ে আসছে।

কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত কদম্ব থেকে। কদমগাছ বৌদ্ধধর্মের একটি পবিত্র গাছ। দীর্ঘাকৃতি, বহুশাখাবিশিষ্ট বিশাল বৃক্ষ। রূপসী তরুর মধ্যে অন্যতম। কদমগাছের পাতা লম্বা, উজ্জ্বল সবুজ, চকচকে এবং বিন্যাসে বিপ্রতীপ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্ বৃক্ষগুলোর একটি কদম। উচ্চতা ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত হয়। আদি নিবাস ভারতের উষ্ণ অঞ্চল, চীন ও মালয়ে। চীন, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা, কম্বডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে কদমগাছ দেখতে পাওয়া যায়।