কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ৮৮ লাখ টাকা

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক থেকে এবার ৮৮ লাখ ২৯ হাজার ১৭ টাকা পাওয়া গেছে। শনিবার বিকালে গণনা শেষে বিপুল পরিমাণ দানের এই টাকার হিসাব পাওয়া যায়। বিপুল পরিমাণ এই নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও দান হিসেবে অনেক স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। এর আগে গত ৩০শে মার্চ দান সিন্দুক খোলার পর ৮৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা পাওয়া যায়।

এর দেড় মাসের মাথায় গত ১৩ই মে পাগলা মসজিদের একটি দানবাক্স খুলে এক দুর্বৃত্ত টাকা চুরির চেষ্টা চালায়। কিন্তু টাকার বস্তা ফেলে রেখেই শেষ পর্যন্ত ওই দুর্বৃত্তকে পালাতে হয়। ওই সময় বস্তাভর্তি টাকা গণনা করে ৮ লাখ ৪ হাজার ৯৮১ টাকা পাওয়া যায়। ফলে গত তিন মাস সাত দিনে পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে জমা পড়েছে মোট ৯৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৯৮ টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন মসজিদটিতে এক লাখ টাকা মানুষ দান করেন। এর আগে এ বছরের শুরুতে ৬ই জানুয়ারি মসজিদের ৫টি দানসিন্দুক খুলে গণনা করে সর্বোচ্চ এক কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। চার মাস ১০ দিনে তখন ওই টাকা দান হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল।

এর আগে গত ২৬শে আগস্ট মসজিদের দানসিন্দুক খুলে গণনা করে এক কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার সকালে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়। দান সিন্দুক থেকে টাকা খুলে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এরপর শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা। টাকা গণনায় মসজিদ মাদরাসার ৬০ জন ছাত্রশিক্ষক ছাড়াও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ অংশ নেন। টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেটের সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের সাঈদ।

টাকা গণনার কাজ পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তরফদার মো. আক্তার জামীল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হোসাইন প্রমুখসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ। সিন্দুক খোলা কমিটির সদস্য সাংবাদিক সাইফুল হক মোল্লা দুলুসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। টাকা গণনার এই এলাহী কাণ্ড নিজ চোখে অবলোকন করতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান।

প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। কথিত আছে, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। সেজন্য দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন। জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে এ মসজিদটির অবস্থান। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়। টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মো. সাঈদ জানান, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে এবার ৮৮ লাখ ২৯ হাজার ১৭ টাকা পাওয়া গেছে। টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ান ডলার, সিংগাপুরী ডলার, সৌদি রিয়াল, মালোয়েশিয়ান রিংগিত ভাল পরিমাণের স্বর্ণালঙ্কার পাগলা মসজিদের দান বাক্সে জমা পড়েছে।