একটা বিশেষ দরকারে আমার এক বড়ভাইকে ফোন করলাম। কিন্তু ফোন করেই তো আর দরকারের কথা বলে ফেলা যায় না! কুশল বিনিময়েরও প্রয়োজন আছে। আমি সালাম দিয়ে শুরু করলাম কুশল বিনিময়।
বড়ভাই মাঝারি আকারের একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন—আর বলিস না। মার্কেটে ঘুরতে ঘুরতে জান যায় যায় অবস্থা। এটা কোনো কথা হলো! খেলা হচ্ছে রাশিয়ায়, আর আমাকে ঘুরতে হচ্ছে মার্কেটে। এটা অন্যায়, সাংঘাতিক অন্যায়। রীতিমতো মানবাধিকার লঙ্ঘন।
আমি বললাম—কী হয়েছে, যদি বিস্তারিত না বলেন, তাহলে কীভাবে বুঝবো?
বড়ভাই বললেন—কী আর বলবো বল। বলে কী হবে। খেলা শুরু হওয়ার পর থেকে কতদিক থেকে যে ক্ষতির মুখে পড়ছি, তার কোনো হিসাবনিকাশ নেই। বাসার সোফাগুলো বহুবছরের ঐতিহ্যের ধারক বাহক ছিল। কিন্তু খেলা শুরু হতে না হতেই এগুলো ভেঙে যা তা অবস্থা। সোফায় বসা অবস্থায় গোল বলে চিত্কার মেরে লাফ মারলে যা হয়।
আমি বললাম—এগুলো তো পুরনো ব্যাপার। মার্কেটে ঘুরে আপনার জান কেন শেষ, সেটা একটু শুনি। সোফা কেনার জন্য ঘুরছেন কি? এত ঘোরাঘুরির কী আছে? সোফার দোকানে গিয়ে অর্ডার দিয়ে দিলেই হয়।
বড়ভাই বললেন—অর্ডার যে দেবো, মনমতো সোফা তো পাচ্ছি না। বিশ্বকাপের শুরুর দিকে ছিল হালকা ধরনের চাপের খেলা। তাতেই কাঠের সোফা ভেঙে গেছে। সামনে সেমি ফাইনাল। তার মানে ডবল, ট্রিপল চাপ। কাঠের সোফায় আর হচ্ছে না। লোহার হলে ভালো হয়। স্টিল বা ইস্পাতের হলে আরো ভালো। সেমি ফাইনালের চাপ সহ্য করার একটা ব্যাপার আছে না?
সেদিন চাস্টলে আড্ডা দিচ্ছিলাম জমিয়ে।
একজন বলে উঠল—খেলার কারণে কোনো কোনো দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেলেও আমার মর্যাদা একদম মাঠে মারা গেছে।
আমরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম—কীভাবে?
ভদ্রলোক বলল—কীভাবে আবার। যে দশ সাপোর্ট করি, সে দলই হারে। আর বারবার ছুটতে হয় দর্জির দোকানে। বলতে হয় ভাই, আগে তো অমুক দলের পতাকা বানিয়ে দিয়েছিলেন, এবার বানিয়ে দেন তমুক দলের। সেমি ফাইনালের পর ফাইনাল আসতে আসতে আরো কতবার দল বদল করতে হয় আর কতবার দর্জির দোকানে যেতে হয় কে জানে। তো আমার এই নড়চড়ে মনোভাব দেখে আমাকে নিয়ে দর্জি বেটা বিস্তর হাসাহাসি করে। এদিকে হাসাহাসি করে আমার বাড়িওয়ালাও। কারণ, যতবারই পতাকা পাল্টাতে যাচ্ছি, ততবারই তার কাছ থেকে ছাদে দরজার চাবি নিতে হচ্ছে। এই যে বিভিন্নজনের হাসির পাত্র হওয়া, এই অবস্থায় মান ইজ্জত অবশিষ্ট থাকে, বলেন!
আমার পরিচিত একজনকে বললাম—বলেন তো মেসি ফাইনালে কোন কোন দল জিততে পারে?
ভদ্রলোক বললেন—সেমি ফাইনাল বাদ দেন। আমি আপনাকে ফাইনালের খবরই দিতে পারি। কোন দল কাপ নেবে, সেটা কি জানতে চান?
আমি খুশিতে গদগদ হয়ে বললাম—অবশ্যই জানতে চাই।
বলেন কোন দল কাপ নেবে।
ভদ্রলোক বললেন—বেশি না, মাত্র দুটো খেলা জিতবে যে দল, সে দলই কাপ নেবে। বেশি না কিন্তু, মাত্র দুটো। মাইন্ড ইট।