মানুষ নানা কারণে মানসিক চাপে ভোগেন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ কর্মক্ষেত্রের জটিলতা, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির প্রেক্ষিতেও সৃষ্টি হয় মানসিক চাপ। অনেক সময় আবার অর্থনৈতিক সঙ্কট, খারাপ স্বাস্থ্য, ঘনিষ্ঠ কারো মৃত্যুর কারণও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
মানসিক চাপ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ঝুঁকি সৃষ্টি করে। তাই এ চাপ কমানো জরুরি। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনেও ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জীবনে চলার ক্ষেত্রে আনন্দ-উদ্দীপনা থেকে উৎসাহী হওয়া, জীবনকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য সহজ-সরল জীবনযাপন করা এবং তাতে সন্তুষ্ট থাকার বিষয়ে কোরআন মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।
পক্ষান্তরে সাময়িক বিনোদন যা কেবল পার্থিব অস্থায়ী আনন্দের খোরাক জোগায়, সে ধরনের বিনোদনকে ভীষণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা এমন বিনোদন প্রকৃত প্রফুল্লতা ও আনন্দের কাছে একেবারে তুচ্ছ। কোরআনে কারিমের বর্ণনা মতে, প্রকৃত মুমিনরা সবসময় প্রশান্ত, হাসিখুশি এবং প্রাণোচ্ছ্বল থাকে। তাদের চেহারায় এই বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে হাসির মাধ্যমে।
ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, সৎ কাজ, পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস, সদয় মানসিকতা, দান-সদকা, গরিবদের সাহায্য ইত্যাদি কাজের দরুণ মুমিনরা আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। এসব কাজ কাজ মুমিনদের অন্তরাত্মায় প্রকৃত সুখ ও প্রশান্তি জোগায়।
এসব কাজ যে শুধু দুনিয়ায় জীবনে শান্তিদায়ক তা নয়- পরকালেও এসব কাজ মুমিনের পাশে থাকবে। কিয়ামতের দিনের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুমিনদের রক্ষা করবে। এটা মুমিনদের প্রতি আল্লাহতায়ালার বিশেষ দয়া ও রহমত।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালা তাদেরকে সেদিনের অকল্যাণ থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে সজীবতা ও আনন্দ দান করবেন।’ –সূরা আদ দাহার: ১১
অন্যদিকে সূরা আন নাহলের ৯৭ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘পুরুষ কিংবা নারী যেই সৎকাজ করবে, সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তাদেরকে আমি দুনিয়ায় পবিত্র-পরিচ্ছন্ন জীবন দান করবো এবং আখেরাতে তাদের প্রতিদান দেবো তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুসারে।’
তবে জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা থেকে কিংবা ইতিবাচক অনুভূতির ভারসাম্য থেকে বেরিয়ে যাওয়া সব দিক থেকে অপছন্দনীয় ও নিন্দনীয়। জীবন চলার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। আনন্দ, হাসি ও প্রফুল্লতার মাত্রা যখন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তখন তা ফুটে ওঠে ব্যক্তির আত্মপ্রচার, অহঙ্কার ইত্যাদির মাধ্যমে। আর এ ধরনের অহঙ্কারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না বলে কোরআনে কারিমের সূরা কাসাসের ৭৬ নম্বর আয়াতের শেষাংশে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অহঙ্কার করো না, আল্লাহ অহঙ্কারীদের পছন্দ করেন না।’
বস্তুত ইসলাস মানুষের কাছে প্রত্যাশা করে, তারা যেন তাদের আবেগ-অনুভূতি ইত্যাদিকে ইতিবাচকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনোভাবেই আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তা ও মানবিক অনুভূতির বিলোপ সাধন করা যাবে নাঅ। সর্বাবস্থায় ভারসাম্যপূর্ণ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, অনর্থক শোরগোলের মধ্যে আনন্দ খুঁজে লাভ নেই। আনন্দ অনুভবের একমাত্র স্থান- মানুষের অন্তর। সুতরাং আমাদের চেষ্টা করতে হবে অন্তরকে কল্যাণ ও সততার আলোয় পরিপূর্ণ করতে এবং প্রফুল্লতার সৌন্দর্য মনে ধারণ করতে।
কোরআনে কারিমে প্রফুল্লতার বহু উপাদান-উপকরণের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কোরআনে বর্ণিত এসব উপাদান হতে পারে একজন মুমিনের জীবন পাথেয়। এগুলোর সাহায্যে একজন মুমিন এবং তার প্রভুর মাঝে গড়ে উঠতে পারে প্রেমের সুদৃঢ় বন্ধন, সফলতা আসতে পারে উভয় জগতে। সর্বোপরি আসমানি নূরের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠতে পারে হৃদয়ভুবন।
অভিজ্ঞ ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, খোদ কোরআন মুমিনের প্রফুল্লতার অনাবিল উৎস। কোরআন তেলাওয়াতে বাড়ে মুমিন মনের প্রফুল্লতা, পাওয়া যায় মানসিক প্রশান্তি।
বস্তুত কোরআনে কারিম যে একটি বরকতময় গ্রন্থ তা আমরা ভালোভাবেই জানি। তবুও মানুষ পিছিয়ে কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে। অথচ ইতিহাস সাক্ষী, মাত্র তেইশ বছরে আরব জাহানের বর্বর একটা জাতিকে দ্রুত সভ্যতার আলোয় বদলে দেওয়া হয়েছিলো কোরআনের বদৌলতে।
তাই, মানুষকে মনে রাখতে হবে- সৃষ্টিকূলের ওপর যেমন আল্লাহতায়ালা সম্মান ও মর্যাদা অপরিসীম। তেমনি সকল বাণীর ওপর, সকল গ্রন্থের ওপর কোরআনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অতুলনীয়।
মানুষের মুখ থেকে যা উচ্চারিত হয়, তার মধ্যে কোরআন পাঠ সর্বাধিক উত্তম। একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সুতরাং মানসিক প্রশান্তি ও জীবনের প্রফুল্লতার জন্য, সর্বপ্রকার বিষন্নতা ও মানসিক চাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য পবিত্র এই গ্রন্থ যত বেশি সম্ভব তেলাওয়াত করা উচিত।