‘আমি কোটা সংস্কার আন্দোলনে, একটি যৌক্তিক আন্দোলনে আসছি। একজন মানুষ হিসেবে আমার কিছু অধিকার আছে। এখানে আসার অধিকার আমার আছে। বেঁচে থাকার অধিকার আছে।’ আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মরিয়ম মান্নান। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিতে এসে গত সোমবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে লাঞ্ছনার শিকার হন তিনি।
মরিয়ম মান্নানকে লাঞ্ছিত করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তিন হলের ছাত্রীরা। মিছিল শেষে রোকেয়া হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন তাঁরা। ওই সংবাদ সম্মেলনেই কথা বলেন মরিয়ম মান্নান। মরিয়ম মান্নান তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। গত সোমবার শহীদ মিনার এলাকায় তাঁর সঙ্গে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
মরিয়ম বলেন, ‘যাদের তুলে নেওয়া হয়েছে তাদের জন্য আন্দোলনে যোগ দিতে আমি এসেছিলাম। এর কিছুক্ষণ পরে যে ভাইটাকে মেরেছে (সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক) আমি তাঁকে কখনো দেখি নাই। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো পরিচয় ছিল না। আমি আসছিলাম মানুষ হিসেবে। কিছু মানুষকে কুকুরের মতো মেরেছে! আমি কেন? যেকোনো মানুষ যদি দেখে একটা মানুষকে রাস্তায় ফেলে কুকুরের মতো মারতেছে, তাঁকে সেভ করবে। আমিও তাই করেছিলাম। ভিড়ের মধ্যে তাঁকে বাঁচাতে গিয়েছিলাম।’
মরিয়ম বলেন, ‘এরপর আমার সাথে কী ঘটেছিল তা আপনারা সবাই দেখেছেন। এর পরও যদি আপনাদের বিবেকবোধ না জাগে তবে কি বলব যে, আমাকে কোথায় কোথায় ধরছে, আপনাদের শুনতে ইচ্ছে করতেছে? আমাকে কীভাবে কী করছে, সবাই আমাকে ফোন দিচ্ছে, তোমাকে কী করছে। এখন আমি লাইভে যাব? লাইভে গিয়ে বলব, আমাকে কী করছে? কেমন করে ধরছে? আমি কান্না করব আর সবাই আমাকে সিম্প্যাথি (সহানুভূতি) দেখাবে?’
মরিয়ম বলেন, ‘সিম্প্যাথি দেখানোর মেয়ে আমি না। আমি কোটা সংস্কার আন্দোলনে, একটি যৌক্তিক আন্দোলনে আসছি। একজন মানুষ হিসেবে আমার কিছু অধিকার আছে। এখানে আসার অধিকার আমার আছে। বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আমাকে পুলিশ ধরে নাই। আমার যদি অন্যায় হয় আমাকে কোর্টে চালান করে দিক। আমি সেখানে কথা বলব। বাইরের ছেলেপেলে আমাকে কেন ধরল? আমার গায়ে কেন টাচ করল? এগুলো শুনতে ইচ্ছে করতেছে আপনাদের? দেখেন নাই?’
মরিয়ম বলেন, ‘আমাকে যখন সিএনজিতে তোলা হলো, আমি জানি না ওরা কারা। আমাকে বলেছে, ওরা ছাত্রলীগ। আমি তো জানি না ওরা কী করে। ফারুক ভাইকে যখন নিয়ে গেল, আমি সাইড হয়ে গেলাম। সবাই একদিকে মিডিয়া-প্রেস। আমি সিএনজিতে উঠেছি বাসায় চলে যাওয়ার জন্য। ওই সিএনজিটা ঘিরে ধরেছে মিনিমাম ২০০ মোটরসাইকেল। শহীদ মিনার থেকে কিছুটা দূরে ধরার পরে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার ফোন-ব্যাগ নিয়ে গেছে। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। (আমাকে) ধাক্কাচ্ছে। এরপর যে নোংরা কথাগুলো বলেছে সেগুলো আমি বলতে পারব না।’
মরিয়ম বলেন, ‘সিএনজির ভেতরেও ঢুকছে। তারপরে কী করছে, এগুলোও বলব? কীভাবে কীভাবে আমাকে টাচ করছে? আমাকে বলছে, আমি বেশ্যা। এরপরে আমাকে নিয়ে গেল শাহবাগ থানায়। কিন্তু সিএনজির প্রত্যেকটা মুহূর্ত আমার কাছে মনে হয়েছে জাহান্নাম।’ তিনি বলেন, ‘থানায় গিয়ে মনে হলো থানা আমার জন্য সেকেন্ড জাহান্নাম। সাথে সাথে আমার ব্যাগ খুলল। বলল, ও তো ইয়াবা খায়। তারা আমার ব্যাগ থেকে বের করল একটা ছুরি। আমি কেন ছুরি নিয়ে আসব? আমি তো বলে আসছি, আমি আন্দোলনে যাচ্ছি, ভাইদের কাছে যাচ্ছি।’
মরিয়ম বলেন, ‘তারা বলল, আমি ইয়াবা খাই। আমাকে জোর করতেছে বলতে যে, আমি ইয়াবা খাই। আমি নেশা করি। আমি বললাম, আমার ব্যাগটা তারা নিয়ে গিয়েছিল। আমার ব্যাগে কিচ্ছু ছিল না, ছিল ওয়াটার পট আর দুটো মেকাপ। আর কিছুই ছিল না। কিন্তু তারা ফোর্স করতে লাগল। এটা বলে, ওটা বলে, দুজন সাংবাদিকও এলো। আমি তাদের বললাম কী, আমার বাসায় একটু কল দিতে। আমি তখনো জানি না আমার ছবিটা ভাইরাল হয়েছে। এর মধ্যে আমাকে মানসিকভাবে টর্চার তো করেই যাচ্ছে, স্বীকার করানোর জন্য যে, আমি নেশা করি আর ওই জিনিসগুলো আমার।’
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আফসানা সাফা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক শিক্ষার্থী মৌসুমী বক্তব্য দেন। সেখানে তাঁরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।