সত্য ঘটনা অবলম্বনে- আমার দ্বিতীয় সন্তান তখন আমার গর্ভে। আমি পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট। সেই সময় আমার স্বামী আমার শাশুড়িকে বলে তার এক দূরসম্পর্কের বোনকে আমার দেখা শুনা করার জন্য আমাদের বাসায় আনেন। মেয়েটি অনেকদিন ধরেই আমাদের বাসায় থাকে।
এর মধ্যে আমার দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের সময় ও ঘনিয়ে আসে।ডেটের এক সপ্তাহ আগেই হাসপাতালে ভর্তি হই। কেননা… প্রথম সন্তান সিজারের তাই ডাক্তারের কথা অনুযায়ী এক সপ্তাহ আগেই দ্বিতীয় সন্তান সিজার করা হয়।
আমি যখন হাসপাতালে আমার বাসায় তখন আমার মা আসে। আমার মা দিনের অধিকাংশ সময় এছাড়া রাতেও আমার কাছে হাসপাতালে থাকতেন। আমার বাসায় সেই মেয়েটি একাই থাকতো রান্না বান্না করে হাসপাতালে দিয়ে যেতো আবার আমার ছেলেটাকেও সামলাতো।
আমি আমার স্বামীকে ফেরেশতা ভাবতাম। বিবাহিত জীবনে কখনো কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও দেখিনি।তাই রাতে যখন বাসায় আমার স্বামী আর অই মেয়েটি থাকতো। পরম নিশ্চিন্তেই আমি ছিলাম।
কিন্তু আমার কপালে যে এত সুখ সইবে না তা দেখে বিধাতা নিশ্চয়ই মুচকি হেসেছিলেন।একসপ্তাহ পর যখন হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় আসলাম সবকিছুর মাঝে কেমন যেন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম।
এক রাতে আমার বাচ্ছার কান্নায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। পাশে তাকিয়ে দেখি আমার স্বামী নেই।বাচ্ছাটাকে শান্ত করে কোলে নিয়েই পাশের রুমের দিকে পা বাড়ালাম যেখানে ডিম লাইটের আলোটা অতি মাত্রায় উজ্জ্বল হয়ে ঠিকরেবেরিয়ে আসছে।
ডাইনিং রুম পার হয়ে আমার বাসায় আনা মেয়েটা যে রুমে থাকে সেই দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো।আমি যেনো আমার নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। আমার স্বামী মেয়েটার বুকের উপর।
যে স্বামীকে আমি ফেরেশতা ভেবেছিলাম তার এহেন ঘৃণ্য রুপ দেখে আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমার স্বামী বিছানা থেকে নেমে এসে আমাকে টেনে আমার রুমে নিয়ে আসলো। এদিকে মেয়েটা কেঁদে ফেলেছে আমার পা চেপে ধরে।
আমার স্বামীর মুখে কোন কথা নেই। যে স্বামী মাত্র এই কয়েকটা দিন তাকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারেনি তার উপর আমার ঘৃণা হচ্ছে। সারারাত জেগে বসে রইলাম। সকাল হতেই শাশুড়িকে ফোন দিলাম। আমার মা আমাকে অনেক বুঝালেন।
কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। শাশুড়ি এসে হাজির হলেন। আমি অই মেয়ে আর আমার স্বামীর বিয়ের সব ব্যবস্থা করলাম। আমি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের এত বড় সর্বনাশ কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না।
হুম , মেয়েটিও দোষী। কিন্তু আমার স্বামীই তার চেয়ে বেশি দোষী আমার চোখে। সে কেন তার স্ত্রী তার ফুলের মত নিষ্পাপ দুইটি সন্তানের কথা একবারও ভাবলো না। আমাকে সবাই বুঝিয়েও কোন লাভ হলো না।
আমার স্বামী আর অই মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলো।আমরা এক বাসায়ই থাকি। যারা জানে না.. তারা এসব নিয়ে কিছু আলোচনা ও করে না। কিন্তু যারা জানে.. অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় আমাকে। আমার সন্তানরাও বড় হচ্ছে।
আমার স্বামী যখন অই মেয়ের সাথে ঘুমায় আমার ছেলেটা প্রশ্ন করে… মা.. বাবা কেন অই আন্টির সাথে ঘুমায়। আমাদের সাথেঘুমায় না কেন? আমার বুক থেকে একটা চাঁপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায়।
এই ছোট্ট বাচ্ছাটার প্রশ্নের জবাবে আমি কি বললে সে বুঝতে পারবে আমি বুঝে উঠতে পারিনা। প্রতিনিয়ত আমার সন্তানরা বেড়ে উঠছে। তারা এক সময় সব কিছু বুঝতে শিখবে। জানতে পারবে।আমি তো মেনে নিয়েছি তারা কি তাদের বাবা নামক লোকটাকে আর কখনো শ্রদ্ধা করতে পারবে।