নিখোজ মালয়েশিয়ার এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৩৭০ এর পাইলট ২৩৯ আরোহীকে হত্যা করে আত্মঘাতী হয়েছিলেন বলে ধারনা করছেন উড়োজাহাজ চালনা বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৩৭০-এর পাইলট পূর্বপরিকল্পিত উপায়ে গণহত্যা চালাতে ভারত মহাসাগরে আছড়ে পড়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের একটি আন্তর্জাতিক দল রোববার রাতে ‘৬০ মিনিটস অস্ট্রেলিয়া’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন। তাদের মতে, পাইলট জাহারি আহমেদ শাহ যাত্রী ও ক্রুদের গণহত্যা করে আত্মঘাতী হয়েছেন।
বোয়িং ৭৭৭ মডেলের উড়োজাহাজটির কিছু ধ্বংসাবশেষ ভারত মহাসাগরের তীরে ভেসে এসেছিল। অস্ট্রেলিয়ার ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরোর সমন্বয়ে বিমানটির খুঁজতে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অনুসন্ধান অভিযান চালানো হয় সাগরতলে। দুই বছর খোঁজার পর নিষ্ফল ওই অভিযান ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সাগরতলের ওই অনুসন্ধানের নেতৃত্বে থাকা মার্টিন ডোলান দুর্ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘এটা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত, ইচ্ছাকৃত এবং দীর্ঘ সময় নিয়ে এটি করা হয়েছে।’দুর্ঘটনারতদন্তকারী ল্যারি ভ্যান্স বলেন, বিমানটির পাইলট জাহারি আহমেদ শাহ ভেবেচিন্তে ওই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন।‘তিনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি বিমানের সব আরোহীকেও হত্যা করছিলেন, এবং এটা তিনি ভেবেচিন্তেই করেছেন’, বলেন ভ্যান্স।
ভ্যান্স মনে করেন বিমানের যাত্রী ও ক্রুদের অচেতন করতে জাহারি এটির ভিতরের বাতাসের চাপ কমিয়ে দেন এবং তা করার আগে নিজে অক্সিজেন মাস্ক পরে নেন।ক্যাপ্টেন জাহারির সাথে বিমান ওড়ানোর দায়িত্বে ছিলেন অনভিজ্ঞ ফার্স্ট অফিসার ফারিক আব্দুল হামিদ। সেটি ছিল কোনও প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধান ছাড়া ফারিকের প্রথম ফ্লাইট।
বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার ছয় দিন পর জাহারি ও ফারিকের বাড়ি থেকে তাদের কম্পিউটার নিয়ে আসে তদন্তকারীরা। তারা দেখতে পান ক্যাপ্টেন জাহারি ফ্লাইট সিমুলেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিমানটির গতিপথ বদলানোর পরিকল্পনা করেন।হার্ভি মন্তব্য করেন, উড়োজাহাজটি গায়েব করে দেয়ার নিখুঁত পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যেন থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ না নেয়।
বোয়িং ৭৭৭-এর পাইলট ও প্রশিক্ষক সাইমন হার্ডি মিলিটারি রাডার ব্যবহার করে মালয়েশিয়ার এমআইচ ৩৭০-এর উড়বার পথ পুনঃনির্মাণ করেন। তিনি নিশ্চিত হন পাইলট জাহারি আহমেদ শাহ পর্যবেক্ষকদের বিভ্রান্ত করতে পালাক্রমে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করতে থাকেন ও বেরিয়ে আসেন।
‘তার পরিকল্পনা সফল হয়েছিল, কারণ আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পেরেছি মিলিটারি এসে ওই বিমানটির পথরোধ করেনি,’ যোগ করেন হার্ডি।
নিখোঁজ বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ‘মরণ ঝাঁপ’ দিয়েছিল বলে যে মন্তব্য অস্ট্রেলিয়া ট্রান্সপোর্ট সেফটি ব্যুরো দিয়েছে তার সাথে বিশেষজ্ঞরা একমত নন।হার্ডি বলেন, ‘আমার মনে হয় কেউ একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ওই উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণ করছিল।’এর আগে বিমানের যাত্রীদের নিয়ে পাইলটের আত্মহত্যার কয়েকটি ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
২০১৫ সালে জার্মান উইংসের ফ্লাইট ৯৫২৫-এর ফার্স্ট অফিসার ১৫০ জন যাত্রী নিয়ে ফ্রেঞ্চ আল্পস পর্বতে আছড়ে পড়ে। তাকে আগেই বিমান পরিচালনার অনুপযুক্ত বলে ঘোষণা করেছিলেন ডাক্তার।