শরীয়তপুরে দাফনের পর ফিরে এলো তাবাচ্ছুম, হাজার-হাজার উৎসুক জনতার ভীর!

দাফন করা তাবাচ্ছুম ফিরে এসেছে। তার ফিরে আসায় এলাকাজুড়ে আতংক দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে সে বাড়ি ফিরে আসে। গত ২১ জুন রাতে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার পর ২২ জুন ঢাকা আশুলিয়া এলাকা থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। পরে ২৫ জুন তাবাচ্ছুম ভেবে সে লাশ দাফন করা হয়।

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়া সখিপুর তারাবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী তাবাসছুম (১৪)। গতকাল সোমবার সকালে বাড়ী ফিরেছে। এসময় তাকে দেখতে হাজার হাজার উৎসুক জনতা স্থানীয় চরসেনসাস ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ভীড় জমায়।

প্রশ্ন উঠেছে তাবাচ্ছুমের লাশ ভেবে দাফন করা ঐ অজ্ঞাত কিশোরীর লাশটি কার? এ নিয়ে পুরো এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। সৃস্টি হয়েছে নানা রহস্যের। সখিপুর থানা ও এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গত ২১ জুন রাতে শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার সখিপুর ইউনিয়নের কালাই মাঝি কান্দি গ্রামের বাসিন্দা বাদল মাঝির মেয়ে তাবাচছুম চরসেনসাস ইউনিয়নের সৈয়দ আলী মৃধার ছেলে আজিজ মৃধার সাথে পালিয়ে যায়।

পরের দিন ২২ জুন ঢাকা আশুলিয়া এলাকা থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় থানা পুলিশ। ঘটনাটি ফুফু লতিফা বেগম ফেসবুকের মাধ্যমে ছবি দেখে তাবাচ্ছুমের লাশ ভেবে পরিবারের কাছে খবর দেয়। ২৪ জুন রোববার তাবাচ্ছুমের পরিবারের লোকজন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে তাবাসছুমের লাশ সনাক্ত করে। পরের দিন সোমবার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে সখিপুরে এনে দাফন করে।

এ ঘটনায় আশুলিয়া থানা একটি মামলা দায়ের করা হয়। এর আগে সখিপুর থানায় প্রেমিক আজিজকে দায়ী করে তাবাচ্ছুমের পরিবার একটি অভিযোগ দাখিল করে। এর পর গত ২৭ জুন সখিপুরের তারাবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের তাবাচ্ছুমকে হত্যার প্রতিবাদে এবং প্রেমিক আজিজ মৃধার বিচার দাবীতে মানবন্ধন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একাত্ত্বতা প্রকাশ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ মানব বন্ধনে অংশ নেয়।

এ ঘটনার পর আজ সোমবার সকালে তাবাচ্ছুমকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে চরসেনসাস ইউনিয়ন পরিষদে হাজির করা হয়। এদিকে প্রেমিক আজিজ মৃধার পরিবারের দাবী গত ৩০ জুন থেকে তাবাচ্ছুমের প্রেমিক আজিজ মৃধা ও তার বাবা ফোনকলের মাধ্যমে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তাবাচ্ছুম বেঁচে আছে এবং দাফনকৃত ওই লাশ তাবাচ্ছুমের নয় বলে দাবি করে আসছে। এমনকি তারা চট্টগ্রামের একটি বাসায় অবস্থান করছে বলেও জানান।

বিষয়টি নিশ্চিত করতে ওই দিন ভিডিওকলের মাধ্যমে তাবাচ্ছুমের সঙ্গে স্থানীয় বাবুল মাদবর, আক্তার বালা, জব্বর সরদার ও সোহেল মোল্যাসহ অনেকে কথা বলেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে দাফনকরা ওই লাশের পরিচয় নিয়ে আলোড়ণ সৃষ্টি হয়। পুরো এলাকা জুড়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে তাবাচ্ছুম ভেবে যাকে দাফন করা হয়েছে তাহলে ঐ অজ্ঞাত কিশোরির লাশটি কার?

স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল মাদবর বলেন, রোববার স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ভিডিওকলের মাধ্যমে তাবাসছুম আমাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলে। পরে যখন আমাদের মাঝে মেয়েটি হাজির হয়েছে তখন আর কোন সন্দেহ নাই। এর পূর্বে যে লাশ এনে দাফন করেছে এখন তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।

তাবাচ্ছুমের মামা গোলাম মোস্তফা বলেন, তাবাচ্ছুমের ফুফু লতিফা বেগম ফেসবুকে ছবি দেখে লাশ সনাক্ত করে। লাশটি পচে গলে যাওয়ায় কাউকেই দেখতে দেয়া হয়নি। ঘটনার দিন তারিখের সঙ্গে মিল হওয়ায় পুলিশের সহায়তায় আমরা তাবাচ্ছুম ভেবে লাশটি দাফন করেছি। এতদিন ভেবেছি তাবাচ্ছুম মারা গেছে। দাফন করা লাশটি কার তা আমরা জানিনা।

সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে এম মঞ্জুরুল হক আকন্দ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এ ঘটনায় ঢাকার আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। আমরা ঐ থানা য় খবর পাঠিয়েছি দাফন করা লাশটি শরীয়তপুরের তাবাচ্ছুমের না। তাবাচ্ছুম বর্তমানে সখিপুর থানায় আছে।