গাজীপুরের উত্তর সালনা এলাকায় একটি গাছের আজব কাঁঠাল নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে কৌতুহল। কাঁঠালের ব্যতিক্রমী বৈশিষ্টের কারণে প্রতিদিন শত শত লোক ভিড় করছেন স্থানীয় রমিজ উদ্দিনের বাড়িতে। শুরুতে ওই গাছের কাঁঠাল খেতে সুস্বাদু হলেও এখন কাঁঠাল বড় হয়ে কোষগুলো বাইরে বেরিয়ে যায়। দেখতে থোকা থোকা ফুল মনে হওয়ায় এই কাঁঠালের ছবি ইতোমধ্যে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোগ অথবা জিনগত কারণে এমনটি হতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে এবং সমাধান দেয়া যাবে।
সরজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুরের উত্তর সালনা এলাকায় কৃষক রমিজ উদ্দিনের বাড়িতে প্রায় ১৬ বছর আগে কাঁঠালের গাছটি রোপন করা হয়। কয়েক বছর পর সেই গাছে কাঁঠাল ধরে এবং শুরুতে এই কাঁঠাল খেতেও বেশ সুস্বাদু ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ওই গাছের কাঁঠাল বড় হলে সেটির কোষ আর আবদ্ধ থাকে না। কোষগুলো বাইরে বেরিয়ে থোকায় থোকা ফুলের মতো ঝুলে থাকে। এ অবস্থায় কাঁঠালগুলো আর খাওয়ার উপযোগী থাকছে না। কিন্তু কাঁঠালের থোকা থোকা কোষগুলো দেখতে কৃষক রমিজের বাড়িতে ভিড় করছেন আশেপাশের এলাকার শত শত মানুষ। অনেকে ব্যতিক্রমী এ কাঁঠালের ছবি তুলে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
কৃষক রমিজ উদ্দিন জানান, গাছে যথারীতি মুচি হয় এবং বড় হয়। কিন্তু পাঁকার সময় হলে কাঁঠাল ফেটে গিয়ে এর কোষগুলো বাইরে বেরিয়ে যায়। ফলে এখন এই গাছের কাঁঠাল তারা আর খেতে পারছেন না। কী কারণে এমন হল তা জানেন না তিনি।
স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন, এই প্রথমবার তারা এমন ব্যতিক্রমধর্মী কাঁঠাল দেখছেন। তাই লোকজনের মুখেশুনে এখানে দেখতে এসেছেন। ইতোমধ্যে থোকা থোকায় কাঁঠালের ছবি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়ে গেছে।
ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের এই কাঁঠাল নিয়ে আগ্রহী কৃষি বিজ্ঞানীরাও। তারা বলছেন, কাঁঠালের স্বাভাবিক যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা থেকে এই গাছের কাঁঠালে আলাদা। এটি কাঁঠাল গাছের কোন নতুন রোগ অথবা জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে এমনটি হতে পারে বলে ধারণা তাদের।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান জানান, এদেশের কাঁঠাল গাছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জাতের সমস্যাও রয়েছে। তবে এই প্রথম সালনা এলাকায় যে কাঁঠাল গাছটি দেখা গেছে সেটির কাঁঠাল বড় হয়ে পাকার উপযোগী হলে এর কোষগুলো ফেটে বাইরে বেরিয়ে আসছে। এটি শারীরতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে হতে পারে। এছাড়া গাছের জিনগত অথবা রোগাক্রান্ত হয়ে এমনটি হতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এর সমস্যা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন এই কৃষি বিজ্ঞানী।
কাঁঠালের এই গাছটি আরো অন্য কোন গাছের জন্য বা মানুষের জন্য কতটুকু উপকারী, না ক্ষতিকর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এখানকার স্থানীয়রা।