রুপালি হাওয়া

সোনার প্রলেপ দেওয়া গোল্ড প্লেটেড গয়না তো অনেক হলো। ফ্যাশনের পালাবদলে এখন চলছে রুপার প্রলেপ দেওয়া রুপালি গয়না। খাঁটি রুপার পাশাপাশি তামা, পিতল, দস্তাসহ বিভিন্ন ধাতুর সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে গয়না। এর পর এসব বেজড মেটাল গয়নাকে সিলভার পলিশিং করা হয়। গয়নার জৌলুস বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের স্টোন জুড়ে দেওয়া হয় কিছু ক্ষেত্রে। রুবি, পান্না, কুন্দন ও মুক্তার মতো দামি রত্নপাথর ব্যবহার হচ্ছে রুপালি গয়নার নকশায়। এবারের লাক্স সুপার স্টার মিম মানতাসার গয়না খুব পছন্দ। ছবি তোলার ফাঁকে ফাঁকে গল্প হচ্ছিল তাঁর গয়নাপ্রেম নিয়ে। বললেন, ‘জানেন, এমনও হয়েছে ঈদে সব কেনাকাটা শেষে একটা গয়নাতে চোখ আটকে গেল। আম্মু বললেন, ঈদের জামার সঙ্গে গয়নাটি মানাবে না। কিন্তু নাছোড়বান্দা আমার সেই গয়না চাই। তারপর আর কি সেই গয়না নিয়ে তবেই বাড়ি ফিরলাম। মানাচ্ছে না মেনে নিয়েই সেই গয়না পরেই ঈদে মহানন্দে ঘুরেছি। বিভিন্ন ধরনের গয়নার কালেকশন রাখা আমার শখ বলা যায়। রুপার গয়না আমার বরাবরই ভালো লাগে। সোনার মতো চটকদার লুক নেই অথচ বেশ একটা চাপা আভিজাত্য রয়েছে রুপালি গয়নায়।’

শাড়ি ও গইনা ঃ কনক

কেন রুপালি গয়না

দীর্ঘদিন এক্সক্লুসিভ মেটাল গয়না নিয়ে কাজ করছেন ডিজাইনার লায়লা খায়ের। রুপালি গয়নার ট্রেন্ড সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘ফ্যাশনে কোনো কিছুই হারায় না; বরং ঘুরেফিরে আসে। কিছুদিন আগেও যেখানে গোল্ড প্লেটেড মেটাল গয়নার চল ছিল এখন সেখানে রুপালি বা অক্সিডাইজ সিলভার প্লেটিং গয়না খুব চলছে। শুধু আমাদের দেশে এই ট্রেন্ড তা নয়, বিশ্ব ফ্যাশনে এখন রুপালি গয়নার জয়জয়কার। এমনকি সোনার গয়নার চকচকে সোনালি ভাবটাও আর এখনকার হালফ্যাশনে ঠিক মানাচ্ছে না। তার বদলে অক্সি গোল্ড, রোজ গোল্ড, অ্যান্টিক গোল্ড, রেডিশ গোল্ডের মতো হালকা রঙে পলিশ করা হচ্ছে সোনাকে। রুপা বা মেটাল গয়নার কদরের আরেকটা কারণ হতে পারে আগেকার মতো এখন আর কেউ এক গয়না বারবার পরতে চান না। তাই সোনার মতো দামি গয়নার বদলে রুপা কিংবা মেটাল গয়নার দিকে ঝুঁকছেন ফ্যাশনপ্রেমীরা। মেটাল গয়নার দাম তুলনামূলক কম হলেও এর নকশা, কারুকাজ ও নকশার ভাবনাটা থাকে দামি সোনার মতোই। এখন রুপা কিংবা মেটাল বেইজড গয়না বানাতে ডিজাইনার ও কারিগররা ততটাই শ্রম দেন, যতটা শ্রম দিয়ে সোনার গয়না তৈরি করা হয়। তাই নকশা বা জৌলুস কোনোটাতেই রুপালি গয়না সোনার চেয়ে কম নয়।’

বাজারি হাল

বাজার ঘুরে দেখা গেল, রুপালি গয়নায় রয়েছে বেশ বৈচিত্র্য। নকশা তো বটেই উপাদানেও রয়েছে ভিন্নতা। গয়নায় মূল উপাদান হিসেবে খাঁটি রুপা যেমন থাকছে তেমনি রুপার সঙ্গে অন্য ধাতুর সংমিশ্রণে সংকর ধাতুর গয়নাও আছে। সস্তায় চাইলে তামা, পিতল, দস্তা ব্যবহার হচ্ছে বেইজ মেটাল হিসেবে। চাঁদনী চকের মণিমা জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী ও গয়না করিগর বিনয় বিশ্বাস বলেন, ‘রুপাসহ সব ধরনের মেটাল গয়নার ওপর হাতের নকশা করি আমরা। দেশি রুপার গয়না ক্রেতারা বেশি চায়। এ ছাড়া ব্রাশ মেটালের চাহিদাও রয়েছে। নিজেদের মতো করে নকশা করে গয়না গড়ি আবার ক্রেতার ফরমাশমতো কাস্টমাইজড গয়নাও গড়ে দিই। রুপার গয়না সহজেই কালো হয়ে যায়। অক্সিডাইজড মেটাল গয়নায় সেই ভয় নেই। তাই সিলভার প্লেটিং গয়নার পাশাপাশি অক্সিডাইজড মেটাল গয়নাও চলছে খুব।’ রুপালি গয়নার নকশায় আরো থাকে মুক্তা, বিডস ও স্টোন। চাঁদনী চকের একতলা ও দোতলা ঘুরে প্রায় সব দোকানেই রুপালি গয়নার দেখা মিলল। অন্যান্য ধাতব গয়নার চেয়ে দেশি রুপার গয়নাই বেশি। সীতা হার, কণ্ঠ হার, জড়োয়া নেকলেস, ঝোলানো মালা, লকেট সেট, লহরি মালা, ঝুমকা, কানপাশা, দুল, ব্রেসলেট, চুড়ি, বালা, রতনচূড়, আংটি, টিকলি, টায়রা ঝাপটা, মাকড়ি, বাজু, হাঁসুলিসহ সব ধরনের গয়নারই দেখা মিলল। প্রীতিলতা জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপক প্রদীপ কর্মকার জানান, ‘কিছুদিন ব্যবহারের পর দেশি রুপার গয়না বদলে নতুন নকশার গয়না বানিয়ে নিতে পারে ক্রেতারা। অন্য ধাতুর ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। তাই রুপার গয়নাই বেশি রাখেন তারা। ক্রেতা ফরমাশ দিলে সংকর ধাতুর গয়না বানিয়ে দেন। গয়না হাউস কনক দ্য জুয়েলারি প্যালেসের ডিজাইনার লায়লা খায়ের হালের গয়না সম্পর্কে জানালেন, ‘গত্বাঁধা ট্রেন্ড থেকে বেরিয়ে এসেছে হাল ফ্যাশন। ময়ূর নকশা, বিভিন্ন ধরনের ফুলেল নকশা যেমন—কদম ফুল, গোলাপ, গয়না, কাঁঠালি চাপা, পদ্মসহ বিভিন্ন ফ্লোরাল থিম এখন চলছে। ক্রেতার চাহিদা মাথায় রেখে চেষ্টা করছি গয়নায় সাবেকি নকশায় আধুনিক রূপ দিতে। ফুলের নকশার পাশাপাশি জ্যামিতিক নকশার গয়নাও ডিজাইন করছি এখন।’

মানানসই সাজ-পোশাক

পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না নয়, গয়নাপ্রেমীরা আজকাল গয়নার সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক বেছে নিচ্ছেন। রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন জানান, রুপালি গয়নার সাজে একটু স্নিগ্ধ ভাব থাকলে ভালো দেখায়। চোখের সাজে থাকতে পারে কপার, ব্রোঞ্জ ও কালো আইশ্যাডোর স্মাকি ভাব। টিনএজাররা লাইনার কিংবা কাজলের বদলে রুপালি আই পেনসিল ব্যবহার করলে ভালো দেখাবে। সব রঙের পোশাকের সঙ্গেই এই গয়না মানিয়ে যায়। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ বা পশ্চিমা যেকোনো পোশাকের সঙ্গেই পরতে পারেন রুপালি গয়না। এমনকি সোনালি অথবা জরি নকশা করা শাড়ি বা পোশাকের সঙ্গেও অনায়াসে বেছে নিতে পারেন। তবে মাথায় রাখতে হবে উপলক্ষ ও পরিবেশ। জমকালো পোশাকের সঙ্গে হালকা গয়না আর জমকালো গয়নার সঙ্গে সাদামাটা নকশার পোশাক বেছে নিন। গলার ভারী মালা বা নেকলেসের সঙ্গে দুলটা হবে ছোটখাটো। আর বড় দুলের সঙ্গে গলায় কিছু না পরাই ভালো। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, টপস সব কিছুর সঙ্গেই পরতে পারেন চুড়ি ও বালা। এক হাতে ব্রেসলেটও পরতে পারেন। পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গে পরুন লম্বা মালা।