বাংলা বর্ষপঞ্জির হিসেব মতে প্রকৃতিতে এখন বিরাজ করছে বর্ষাকাল। আর বর্ষাকাল মানেই ঝুম ঝুম বৃষ্টি। এই বৃষ্টি মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার এক অপরূপ সৃষ্টি। যা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনেরই নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়া। তীব্র খরায়, গ্রীষ্মের তাপদাহে জমিন যখন ফেঁটে চৌচির হয়ে যায়, চারদিকে প্রকৃতি খাঁ খাঁ করতে থাকে, তখন মহান প্রভুর ঐশী প্রেরণায় বর্ষার এক পশলা বৃষ্টিই জগতে সঞ্চার করে নতুন প্রাণের। প্রকৃতি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। অঝর ধারায় বৃষ্টিপাত হয় ধরিত্রী। রোদে ঝলসে যাওয়া গাছপালা হয়ে ওঠে সবুজ। বৃষ্টি পরিবেশ আর মনোজগতকে একেবারে বদলে দেয়। তাই বলা যায় বৃষ্টি স্রষ্টার অপার দান। বৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ নিয়ামতও। সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলায় সুশোভিত এই বসুন্ধরা বৃষ্টির স্পর্শেই হয়ে ওঠেছে বাসযোগ্য। পবিত্র কুরআনেও সে কথাই বলা হয়েছে ‘তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন, এবং আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করে তদ্দারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেন। সুতরাং জেনে শুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করিও না।’ (সূরা বাকারা : ২২)
অন্যত্রে বলা হয়েছে, ‘তুমি কি দেখ না, আল্লাহ সঞ্চালিত করেন মেঘ মালাকে, তৎপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন, অতঃপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বারিধারা। তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলাবর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন। তার বিদ্যুৎ ঝলক দৃষ্টিশক্তিকে যে বিলীন করে দিতে চায়।’ ( সূরা আন-নূও : ৪৩)
আহকামুল হাকিমীন মহান আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বৃষ্টি দ্বারা জমিনকে যেমন ঊর্বর ও উৎপাদনশীল করেছেন, তেমনি প্রকৃতিতে লাগিয়েছেন সজীবতার ছোঁয়া। ফুলে ফলে ভরপুর করে দিয়েছেন জগৎ সম্ভারকে। তাই মানব জীবনে বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আর বৃষ্টির এমন গুরুত্বের কারণেই রাসূল (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য বৃষ্টি সংক্রান্ত বেশ কিছু শিষ্টাচার শিখিয়ে গেছেন। যেমন, বৃষ্টি নামলে শরীরের কিছু অংশ অনাবৃত করা। হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূল (সা.) এর সাথে ছিলাম। সে সময় আমাদের বৃষ্টি পেয়েছিল। তখন রাসূল (সা.) তাঁর গায়ের পোশাক কিছুটা সরিয়ে নিলেন, যাতে তার গায়ে বৃষ্টি পড়ে। আমরা জিজ্ঞেস করলাম। ‘আপনি এমনটি কেন করলেন?’ তিনি বললেন ‘যেহেতু বৃষ্টি তার রবের নিকট হতে নবাগত।’ (সহিহ মুসলিম, ৮৯৮)
বৃষ্টি আসে নব সমারোহ জয়বাদ্য বাজিয়ে। নীল নব অঙ্গনে নবীন মেঘের সমারোহে। তাই বৃষ্টি এলেই কবিরা বসে যান বিরহের ঝাঁপি খুলে। প্রাচীনকাল থেকেই বৃষ্টি বন্দনা বাঙালি কবিকুলে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। যেমনটা লক্ষ্য করা যায় এই কবিতায় ‘এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা কেমনে আইলো বাটে/ আঙ্গিনার মাঝে বঁধূয়া ভিজিছে দেখিয়ে পরাণ ফাঁটে।’ (চন্ডিদাস) সাম্য ও প্রেমের কবি কাজী নজরুলের কবিতায় বৃষ্টি এসেছে ভিন্ন আঙ্গিকে। রিমঝিম ধারাকে তিনি বর্ণনা করেছেন প্রিয়তমার আগমনী বারতা হিসেবে। কবি লিখেছেন, ‘বাদল রাতের পাখি/উড়ে চল যেথা আজো ঝরে জল/নাহিক ফুলের ফাঁিক।’ (চক্রবাক, বাদল রাতের পাখি) তবে বৃষ্টির অতি বর্ষণে কখনো কখনো চরম বিপত্তিও দেখা যায়। বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট কাদায় ভরে উঠে। কোথাও বা ডুবেও যায়। দেখা দেয় নানা রোগ- ব্যাধি। তাই অধিক বর্ষণের সময় এই দোয়াটি আমাদের বেশি বেশি পড়া প্রয়োজন, ‘আল্লাহুম্মা, সাইয়্যিবান নাফিআ।’ ( হে আল্লাহ, এ যেন হয় কল্যাণকর বৃষ্টি) (সহীহ বুখারি, ১০৩২) আর হ্যাঁ, এ সময়ে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।