স্বামীর বিরুদ্ধে শ্রাবন্তীর মামলা: যে তথ্য জানলেন পুলিশ!

ছোট ও বড় পর্দার একসময়ের জনপ্রিয় তারকা ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তীর সংসার ভাঙার পথে। স্বামী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম গত ৭ মে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশের পর স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আর যৌতুকের মামলা করেন শ্রাবন্তী। কিন্তু সে মামলা সম্পর্কে খোদ পুলিশই অন্ধকারে!

জানা গেছে, গত ৭ মে বগুড়া সদরের কালীতলার শিববাড়ির শ্রাবন্তীর বাবার বাসার ঠিকানায় তালাকের নোটিশ পাঠান স্বামী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। বিষয়টি জানাজানি হবার পর তালাক নিয়ে গণমাধ্যমে কথাও বলেন স্বামী খোরশেদ। এরপরই উঠে আসে স্ত্রী শ্রাবন্তীর করা মামলার বিষয়টিও। তবে মামলা সম্পর্কে স্বামী খোরশেদ কিছু জানেন না বলে জানান।

রাজধানীর খিলগাঁও থানায় শ্রাবন্তী মামলা করলেও অজ্ঞাত কারণে অন্ধকারে পুলিশ।

স্বামীর বিরুদ্ধে করা শ্রাবন্তীর মামলার তদন্ত কত দূর জানতে চাইতেই খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান এই প্রতিবেদকের কাছে প্রশ্ন রাখেন, কবে-কখন মামলা হয়েছে? এরপর বলেন, কে তদন্ত করছেন তা আমি জানি না।

পরে আবার জানান, মামলা ওভাবেই আছে। মামলার তদন্ত চলছে। স্বামী-স্ত্রী আপস করে কি না সেজন্য মামলা ওভাবেই আছে। আমরা চেষ্টা করছি, তাদের মধ্যে যদি আপস হয়। তাদের সংসার যাতে না ভাঙে। সেজন্য মামলার ক্রস চেক চলছে।

যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল তা কি তবে তদন্ত হবে না? জবাবে ওসি বলেন, মামলা তো তদন্তাধীন। যিনি মামলাটি তদন্ত করছেন তিনিই বলতে পারবেন তদন্তের অবস্থা। থানার এসআই নগেন্দ্র মামলাটি তদন্ত করছেন বলে জানান তিনি।

তবে যোগাযোগ করা হলে খিলগাঁও থানার এসআই নগেন্দ্র বলেন, ‘কী বললেন? এ রকম মামলা তো আমার কাছে নাই? মামলার বাদী ও মামলা দায়েরের তারিখ সম্পর্কে তথ্য দিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না না, এ রকম কোনো মামলা আমার কাছে নাই। ওসিই ভালো বলতে পারবেন। এরপর আরও অনেক তথ্য এ প্রতিবেদকের কাছ থেকে নিলেও মামলা তার তদন্তাধীনে হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর ইপসিতা শবনম শ্রাবন্তী ও মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সংসার জীবন শুরু করেন। এখন ভেঙে যাওয়ার পথে সেই সংসার। শ্রাবন্তী দীর্ঘদিন যাবৎ যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। গত ২৫ জুন তিনি দেশে ফেরেন। এখন আছেন বগুড়ায়।

শ্রাবন্তী জানান, যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেই স্বামীর পাঠানো তালাকের এই নোটিশের খবর পেয়েছেন তিনি। এরপর দ্রুত দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে দেশে আসেন। তাদের বড় মেয়ে রাবিয়াহ আলমের বয়স সাত আর ছোট মেয়ে আরিশা আলমের সাড়ে তিন বছর।

তালাকনামা ও মামলা সম্পর্কে গণমাধ্যমে শ্রাবন্তীর কথা বলার পর মুখ খুলেন স্বামী মোহাম্মদ খোরশেদ আলমও।

রোববার দুপুরে মোহাম্মদ খোরশেদ বলেন, ‘ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছি, এটি সত্যি। তবে আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেছে কি-না এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমাকে কিছু বলেওনি।’

ডিভোর্সের সিদ্ধান্তটি আরও ভালো করে বিবেচনা করে দেখবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখুন, একসঙ্গে থাকার জন্য পারিবারিকভাবে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। সবরকম চেষ্টা করেই আমরা ব্যর্থ। এরপর ডিভোর্সের এই সিদ্ধান্তও পারিবারিকভাবেই এসেছে। সুতারাং বিবেচনা করার আর কিছু নেই।’

আপনাদের দুটি সন্তান আছে। ডিভোর্সের পর তাদের সামাজিক অবস্থান হবে মন্দ। তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকাটা মিস করবে। সন্তানদের নিয়ে আপনাদের নিজেদের অবস্থান কেমন হবে?

জবাবে মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘তাদের প্রতি বাবা হিসেবে আমার যে দায়িত্ব, সেটা পালন করতে আমি সবসময়ই প্রস্তুত। আইনগতভাবে মায়ের অধিকার বেশি থাকে। ওদের মা যদি মনে করে সন্তানের দায়িত্ব আমাকে দিয়ে দেবে, আমি খুবই উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এ ছাড়া তাদের সবরকম সহযোগিতা করার জন্য আমি সবসময়ই প্রস্তুত আছি।’

শ্রাবন্তীর বিরুদ্ধে স্বামী হিসেবে প্রধান অভিযোগ কী? জানতে চাইলে খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমাদের ভেতরে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আস্থার জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে। যেটা একসঙ্গে থাকলে আরও ধ্বংস হবে। আরও খারাপ দিকে যাবে বলে আমি মনে করছি। সরে আসাই দুজনের জন্য ভালো হবে।’

আপনার বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ করেছেন শ্রাবন্তী- মেয়েটি নাকি মালয়েশিয়ায় থাকেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। তখন ওই মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। এর বেশি কিছু না। শ্রাবন্তী এ ব্যাপারে রঙ মাখাচ্ছে। নিজের দোষ আড়াল করতে অন্যকে দোষারোপ করা খুবই সাধারণ একটি বিষয়।’

তবে সব মিলিয়ে শ্রাবন্তী যা বলেছেন এ বিষয়ে তাতে করে মনে হয়েছে সংসারটা বাঁচানোর প্রতি তার আগ্রহ আছে। বিশেষ করে আপনাদের দুটি সন্তানের জন্যও আপনারা এক সঙ্গে থাকতে পারেন, এমনটাই দাবি তার। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?

এর উত্তরে খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি কোনো বিষয়ে কারো বিরুদ্ধেই নেগেটিভ কথা বলতে চাই না। সে যে আকুতি প্রকাশ করেছে, এসব জায়গাগুলো আমি এর আগে অনেকবার অতিক্রম করে এসেছি। এই কথাগুলোর ওপরে আমার ভরসা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি সাত বছর তো সংসার করেছি। এ ধরনের বিষয় অনেকবার হয়েছে। আস্থাটা নষ্ট হয়ে গেছে আসলে মন থেকেই। শত চেষ্টা করেও আর হবে না।’