নজরুলের রাগাশ্রয়ী গানের সুরেলা শব্দধ্বনি মাতিয়ে দিয়েছিল ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন। ছায়ানটের শিল্পীরা নজরুলের বর্ষা প্রেম আর দেশের গান গাইলেন। ছায়ানটের প্রধান মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার শুরু হয়েছে দু’দিনের নজরুল উৎসব।
‘অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে’ সম্মেলক কণ্ঠে এ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। শিল্পী সমবেত কণ্ঠে আরও গেয়ে শোনান ‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি’, ‘ব্রজ-গোপী খেলে হরি’, ‘দোলে বন তমালের ঝুলনাতে’, ‘বর্ষা ঋতু এলো বিজয়ার বেশে’। স্বাগত কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সহ সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল। নজরুলকে নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল।
একক কণ্ঠে গান গেয়ে শোনান ফেরদৌস আরা, ইয়াসমিন মুশতারী, মো. ইয়াকুব আলী খান, খায়রুল আনাম শাকিল, মফিজুর রহমান। শিল্পী সুমন মজুমদার গেয়ে শোনান ‘বেদনা-বিহবল পাগল পুবালি পবনে’, ‘প্রমিতা দে ‘বরষা ঐ এলো বরষা’, সুমন চৌধুরী ‘এ ঘন ঘোর রাতে’, নাওশিন তাবাসসুম ‘তুমি সুন্দর কপট হে নাথ’, কানিজ হুসনা আহম্মদী সিম্পী ‘মেঘের ডমরু ঘন বাজে’, তানভীর আহমেদ ‘তোমার বাণীরে করিনি গ্রহণ’, জান্নাত-এ ফেরদৌসী লাকী ‘কথা কও, কও কথা থাকিও না চুপ করে’, ঐশ্বর্য সমাদ্দার ‘শাওন আসিল ফিরে’, নাহিয়ান দুরদানা শুচি ‘এলো শ্যামল কিশোর তমাল-ডালে বাঁধো’, সঞ্জয় কবিরাজ ‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে’ প্রভৃতি। অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও কাজী মদিনা। আজ শনিবারও সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হবে অনুষ্ঠান।
বর্ষা বন্দনায় মেতেছিল নগরবাসী। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল শুক্রবার বসেছিল এ আয়োজন। শিল্পী শেখর মন্ডলের কণ্ঠে মিয়া তানসেনের সৃষ্ট বর্ষার রাগ ‘মিয়া মালহার’ পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এর পরেই ছিল গান আর কবিতার আসর।
একক সংগীত পরিবেশন করেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, লিনা তাপসী খান, সুমন মজুমদার, অনিমা রায়, দিলারা আফরোজ খান, আরিফ রহমান, আবিদা রহমান সেতু, আঁখি বৈদ্য ও রত্না সরকার।
দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন স্বভূমি লেখক-শিল্পী কেন্দ্রের শিল্পীরা, বহ্নিশিখা ও পঞ্চভাস্কর। পরে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী শোনায় রবীন্দ্রসংগীত ‘বজ্র মানিক দিয়ে গাঁথা আষাঢ় তোমার মালা’। এ পর্বে আরও অংশ নেন সমস্বরের শিল্পীরা।
গানের পাশাপাশি বর্ষা বন্দনার এই আয়োজনে নৃত্য পরিবেশন করে বিভিন্ন নৃত্যসংগঠন। এর মধ্যে ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন। ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে নটরাজের শিল্পীরা। ‘মেঘের গায়ে নূপুর পায়ে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা করে স্পন্দন, পরে নৃত্য পর্বে অংশ নেয় বাফা ও স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্রের নৃত্যশিল্পীরা।
একক কণ্ঠে জয় গোস্বামীর ‘মেঘ বালিকার জন্য রূপকথা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন নায়লা তারান্নুম কাকলী এবং নির্মলেন্দু গুণের ‘পনের পাঁচ চুরাশি’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন মাশকুর-এ-সাত্তার-কল্লোল।
সবশেষে ছিল বর্ষাকথন। যাতে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।