রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের কেবিনে সম্প্রতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভর্তি হন পুরোনো ঢাকার বাসিন্দা প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ীর স্ত্রী নিরা আক্তার (ছদ্মনাম)। আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এ নারী ছয় বছরের একটি শিশু সন্তানের মা।
দেশের একজন খ্যাতনামা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকের অধীনে চিকিৎসাধীন থাকলেও চিকিৎসকের দেয়া ওষুধে কাজ হচ্ছিল না। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ওই অধ্যাপক তার পূর্ব পরিচিত একজন মানসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নিরা আক্তারকে দেখান।
ইতিহাস নিয়ে, রোগ লক্ষ্মণ শুনে বুঝতে পারেন রোগী কনভার্সন ডিসঅর্ডার (মনের মধ্যে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্ব (কনফ্লিক্ট) বা চাপ (স্ট্রেস)) রোগে ভুগছেন। একে আগে হিস্টিরিয়া বলা হতো। বার বার তার খিঁচুনির মতো হচ্ছিল। ওই মনো চিকিৎসক রোগী, তার বড় বোন ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে নেপথ্যে কারণ জেনে মর্মামত হন।
নিরা আক্তার অন্তঃস্বত্তা ছিলেন। স্বামীর চাপে গর্ভপাত ঘটানোর পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
নিরার মাত্র একটি সন্তান ছিল তবুও কেন গর্ভপাত করতে হলো এ প্রশ্নের জবাবে তার বড় বোন জানান, নিরার স্বামী চলতি বছর সস্ত্রীক হজে যাওয়ার ‘নিয়ত’ করেছিলেন। স্ত্রী অন্তঃস্বত্তা হলে হজে যাওয়া অনিশ্চিত ও নিয়তের বরখেলাপ হবে এই সিদ্ধান্ত থেকে স্ত্রীকে গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করেন!
পাঠক নিশ্চয়ই এটি নিছক গল্প বলে ভাববেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অবিশ্বাস্য মনে হলেও এ কথা সত্যি যে এটি একটি সত্য ঘটনা এবং সম্প্রতি এ ঘটনাটি ঘটেছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ নিরা নামে ওই গৃহবধূর চিকিৎসা করেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে (রোগীর নাম পরিচয় গোপন করে) তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে গর্ভপাত নিষিদ্ধ। গর্ভপাত ঘটানো ছাড়া মায়ের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না এমন পরিস্থিতিতে গর্ভপাত করা যেতে পারে।
তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ওই ঘটনাটি শোনার পর নিজের মনেই প্রশ্ন জেগেছে হজের নিয়তই কী বড় হলো।
তিনি আরো বলেন, সন্তান ধারণ বা গর্ভপাতের সিদ্ধান্তে মায়ের মতামত এখনো চরমভাবে উপেক্ষিত। এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বাবাদের একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে থাকেন। এ ঘটনাটি তার বড় প্রমাণ।