ইসলামের ইতিহাসে নবী-রাসূলদের পর সাহাবাদের স্বীকৃত বিষয়। তারা সবচেয়ে বেশি অনুসরণীয়।
আল্লাহতায়ালা সাহাবিদের সম্পর্কে আরও বলেন, ‘এই সম্পদ নিঃস্ব মুহাজিরদের জন্য ও যাদেরকে নিজেদের ঘর-বাড়ি ও ধন-সম্পত্তি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ এরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির অন্বেষণ করে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলকে সাহায্য করেন। এরাই তো সত্যবাদী। আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদিনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালোবাসে। আর মুহাজিরদের যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ -সূরা হাশর: ০৮-০৯
সাহাবিদের প্রশংসায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে তারাই সবচেয়ে নেক লোক যাদের মাঝে আমি প্রেরিত হয়েছি। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সবচেয়ে সেরা মানব আমার সাহাবারা। আরেক বর্ণনায় সাহাবাদের প্রতি ভালোবাসাকে ঈমানের চিহ্ন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবিদের গালাগাল করো না। কেননা তাদের এক মুহূর্তের (ইবাদতের) মর্যাদা তোমাদের প্রত্যেকের জীবনের আমলের চেয়ে বেশি।’ –ইবনে মাজা: ১৬২
সামগ্রিক বিচারে সাহাবারা অন্যসব উম্মত অপেক্ষা উত্তম। তবে সাহাবাদের সবাই কিন্তু এক স্তরের নন। বরং কেউ কেউ মর্যাদায় অন্যদের চেয়ে উত্তম। তাদের নিজেদের মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে শ্রেণি ও স্তর রয়েছে। নিম্নে তাদের ক্রমধারা উল্লেখ করা হলো-
সাহাবাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন চার খলিফা। অর্থাৎ হজরত আবু বকর (রা.), হজরত উমর (রা.), হজরত উসমান (রা.) ও হজরত আলী (রা.)।
এরপরের স্তরে আছেন দুনিয়ায় থেকে যারা বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন ওই তালিকার অবশিষ্টরা।
আশারায়ে মুবাশ্বারা বা দুনিয়াতেই যে দশজন সাহাবি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। তারা হলেন-
০১. ইসলামের প্রথম খলিফা এবং পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হজরত আবু বকর ইবনে আবি কুহাফা রাদিয়াল্লাহু আনহু
০২. ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা, আমিরুল মুমিনিন খেতাবে ভূষিত হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু
০৩. ইসলামের তৃতীয় খলিফা, জিন্নুরাইন হজরত উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু
০৪. ইসলামের চুতর্থ খলিফা, আসাদুল্লাহিল গালিব হজরত আলী ইবনে আবু তালিব রাদিল্লাহু আনহু
০৫. তলহাতুল খায়র উপাধিপ্রাপ্ত হজরত তলহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু
০৬. আল্লাহর রাহে সর্ব প্রথম তরবারী ধারণকারী হজরত যুবাইর ইবনে আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু
০৭. ইসলামের সব যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু
০৮. ইসলামের সব যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও আল্লাহর রাস্তায় সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপকারী হজরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু
০৯. বদর যুদ্ধ ছাড়া সব যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু
১০. ওহুদ যুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চোয়ালে বিঁধে যাওয়া লৌহবর্ম দাঁত দ্বারা উত্তোলনকারী হজরত আবু উবাইদাহ আমের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু।
জান্নাতের সুসংবাদ এই দশ সাহাবি সম্পর্কে হাদিসে প্রচুর বর্ণনা রয়েছে। তাদের মর্যাদা সম্পর্কে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- আবু বকর জান্নাতি, উমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, তালহা জান্নাতি, যুবাইর জান্নাতি, আবদুর রহমান জান্নাতি, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ ইবনে যায়েদ জান্নাতি এবং আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)। -তিরমিজি
হজরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব (রা.) বলেন, আবু বকর, উমর, আলী, তালহা, যুবাইর, সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস, আবদুর রহমান বিন আওফ এবং সাঈদ বিন যায়েদ লড়াইয়ের ময়দানে রাসূল (সা.)-এর সামনে প্রথম সারিতে থাকতেন এবং নামাজের মধ্যে রাসূলের পিছনেই থাকতেন।
আল্লাহতায়ালা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবায়ে কেরামের চারিত্রিক জজবা বা প্রেরণা দান করুন।