কুমিল্লায় দাফনের ৯ মাস পর ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে এক ব্যবসায়ীর কঙ্কাল উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে রোববার সন্ধ্যায় কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কালির বাজার ইউনিয়নের ধনুয়াইশ গ্রামের খলিলুর রহমানের কঙ্কাল উত্তোলন করা হয়। খলিলুর রহমান একই এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মৃত খলিলুর রহমান কুমিল্লা সদরের কালিরবাজারে একটি স্টুডিওসহ পাঁচটি দোকানের মালিক ছিলেন। ব্যবসায়ীক ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী উজিরপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের সঙ্গে তার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে আলমগীর হোসেনের পরিবারের সকল সদস্যদের সঙ্গেও খলিলুর রহমানের সম্পর্ক তৈরি হয়।
সম্পর্কের এক পর্যায়ে আলগীরের মেয়ে রুনা আক্তারের (১৯) সঙ্গে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েন খলিল। খলিলের স্ত্রী ও ছেলে থাকা শর্তেও আলমগীর ও তার স্ত্রী শাহিদা বেগম চাপ দেন রুনা আক্তারকে বিয়ে করার জন্য। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে খলিলকে কালিরবাজারে নিপা স্টুডিও থেকে রুনা আক্তার ও তার মা শাহিদা বেগম পার্শ্ববর্তী বরুড়া উপজেলার আমতলী খটকপুর গ্রামের নানার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে খলিলকে বিয়ের জন্য জোর করলে খলিল অস্বীকার করায় তাকে কৌশলে হত্যা করে।
পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর সকালে খলিলের পরিবারকে জানানো হয় খলিল স্ট্রোক করেছে। তাকে কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। খলিলের পরিবার বিশ্বাস করে হাসপাতাল থেকে মরদেহ এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে।
পরবর্তীতে খলিলের পরিবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, মেয়ের সঙ্গে পরকিয়ার সুবাদে আলমগীর হোসেন বিভিন্ন সময় খলিলের থেকে প্রচুর টাকা ধার দেয়। ধার নেয়া টাকা ফেরত চাওয়া ও মেয়েকে বিয়ে না করায় তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়।
পরবর্তীতে ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের মা মাফিয়া বেগম বাদী হয়ে রুনা আক্তারকে প্রধান আসামি করে রুনার মা শাহিদা বেগম, বাবা আলমগীর হোসেন, মামা ও খালুসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে কুমিল্লা আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আদালত হত্যা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে ময়নাতদন্তের জন্য রোববার আদালতের নির্দেশে মৃত খলিলুর রহমানের মরদেহের কঙ্কাল কবর থেকে উত্তোলন করে পিবিআই।
এ সময় কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একেএম ফয়সাল, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লা শাখার ইন্সপেক্টর আলাউদ্দিন চৌধুরী, কুমিল্লা কালির বাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সিকান্দার আলী উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লা শাখার ইন্সপেক্টর আলাউদ্দিন চৌধুরী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আদালত পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা দীর্ঘদিন তদন্ত করে বিভিন্ন ধরনের হত্যার ক্লু পেয়েছি। যেহেতু মৃত্যুর পর মরদেহটির কোনো ময়নাতদন্ত হয়নি সেহেতু মামলার তদন্তের স্বার্থে আদালতের কাছে আবেদন করলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ময়নাতদন্তের জন্য মরদে উত্তলোন করা হয়েছে। কঙ্কালটির ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার পুণরায় দাফন করা হবে।