ডিটক্স স্পা

দ গেল। খাওয়াদাওয়ার চাপ তো আর কম যায়নি। ঈদে কি আর ক্যালরি মেপে খাওয়া যায়? মনের খুশিমতো খাওয়ার ধকল তো আর শরীর বুঝতে চায় না। ঢুকে পড়ে টক্সিন। আর ঘোরাঘুরির কথাই বা বাদ যায় কেন? পরিবেশে বিরাজ করা পারদ, লেড, আর্সেনিকের মতো ৩৫টি ভারী ধাতুর কারণেও শরীরে টক্সিন ঢুকে যেতে পারে। এদের প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্র ও কিডনির সমস্যাও হতে পারে। সাধারণত পানি, মাটি ও বায়ুদূষণ থেকেই এসব ধাতু শরীরে ঢোকে।

শরীর বা ত্বককে ডিটক্স করা যায় কিভাবে? ডিটক্স করাই বা কাকে বলে? আশপাশের পরিবেশ, খাবার থেকে রোজ কিছু বিষাক্ত পদার্থ আমাদের শরীরে ঢুকে পড়ে। সুস্থ থাকতে এসব টক্সিন শরীর থেকে দূর করা খুব দরকার। সোজা কথায়, শরীরকে ডিটক্স করা প্রয়োজন। নয়তো শরীরে রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ হবে। যাতে হতে পারে বড় কোনো শারীরিক অসুস্থতাও।

কিভাবে শরীর টক্সিন বা বিষমুক্ত করা যায়? ডায়েটের দিকে খেয়াল রেখে শরীর টক্সিনমুক্ত করা যায়। আনারস, ব্রকোলি, লেবু, সবুজ শাকসবজি, গ্রিন টি—এসব খেলে ডায়েটের মাধ্যমে সহজেই শরীর টক্সিনমুক্ত হয়। আবার বাহ্যিকভাবেও টক্সিনমুক্ত করা যায় শরীর ও ত্বক। গ্রিন টি শুধু পানীয় হিসেবে নয়, ত্বকের ডিটক্সিফিকেশনেও ভালো ফল দেয়। গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীর ডিটক্স করতে সাহায্য করে। যার প্রভাব পড়ে ত্বকেও। আধাকাপ গ্রিন টির সঙ্গে ২ থেকে ৪ টেবিল চামচ চিনির দানা মিশিয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করুন। পুরো মুখে এই স্ক্রাব লাগিয়ে গোলাকার মোশনে ম্যাসাজ করুন। ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে গ্রিন টি। চোখের কোণে বা নিচে কালি পড়লে গ্রিন টিতে তুলা ভিজিয়ে নিয়ে বা ব্যবহৃত গ্রিন টি ব্যাগ চোখের ওপর চাপা দিয়ে রাখতে পারেন। চোখের তলার কালো দাগ, চোখের কোণার ফোলা ভাব দূর হবে। গ্রিন টির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ অ্যাকনে সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধেও কার্যকর। ঠাণ্ডা গ্রিন টিও অ্যাকনে প্রতিরোধক হিসেবে ভালো।

গোসলের পানিতে সৈন্ধব লবণ দিয়েও শরীর ডিটক্স করা যায়। আর আছে স্পা। বিশেষ ধরনের বডি ম্যাসাজ। শরীর ও মনের ক্লান্তি দূর করতে স্পা অসাধারণ এক পদ্ধতি। সেই স্পা যদি হয় ডিটক্স স্পা, তবে তো কথাই নেই!

ডিটক্স স্পা কী?

ডিটক্স স্পা অন্য স্পার মতোই বিশেষ বডি ম্যাসাজ। পার্থক্য শুধু বডি ম্যাসাজের কৌশল আর দু-একটি উপাদানে। ত্বকের রোমকূপের মধ্য দিয়ে বাতাসের যেসব বিষাক্ত পদার্থ শরীরে ঢুকে পড়ে, ডিটক্স স্পার বিশেষ বডি ম্যাসাজ সেসব দূর করতে সাহায্য করে। ডিটক্স স্পা ম্যাসাজে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতিও ঠিকঠাক চলতে শুরু করে। এই ম্যাসাজ শরীরে অতিরিক্ত তরল পদার্থ তৈরি রোধ করে, ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দমন করে। মোট কথা, শরীরে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ডিটক্স বডি স্পার আবিষ্কারক ডেভিড গদার্ড নিজেই বলে গেছেন, ‘এটি ত্বকের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী ডিপ ক্লিনজিং’।

ডিটক্স বডি স্পা সব ধরনের দুশ্চিন্তা আর ক্লান্তি থেকে মুক্তি দানকারী আরামদায়ক এক আয়ুবর্ধক পদ্ধতি। ত্বকের জন্য নানা স্পা আছে। সুইডিশ, অ্যারোমা থেরাপি, ডিপ টিস্যু আর থাই পদ্ধতি। আমাদের দেশে অ্যারোমা থেরাপি আর থাই পদ্ধতিই সবচেয়ে প্রচলিত ও জনপ্রিয়।

ডিটক্স স্পার সুফল

শরীর ও ত্বক টক্সিনমুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে এই স্পার আছে অনেক গুণ।

♦ যাঁদের অ্যালার্জির সংক্রমণ আছে, আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন কিংবা ত্বকের নানা সংক্রমণে কষ্ট পাচ্ছেন, ডিটক্স স্পা তাঁদের স্বস্তি দেবে নিঃসন্দেহে। তবে স্পা নেওয়ার আগে একবার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অবশ্যই নিয়ে নিতে হবে।

♦ রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে হওয়া, চোখের ফোলা ভাব কমা ও আরামের জন্য, পায়ের গোড়ালি, হাঁটুর নানা সমস্যা কিংবা হাড়ের সংযোগস্থলকেও আরো মজবুত করে তোলে এই স্পা পদ্ধতি।

ডিটক্স স্পা যাঁদের মানা

♦ যাঁদের উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ আছে, তাঁরা এই স্পা সেবা নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

♦ জ্বর হলে ডিটক্স স্পা নেবেন না।

♦ কোনো ইনফেকশনে আক্রান্ত রোগী, কিডনি সমস্যায় ভুগছেন কিংবা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরাও এই স্পা নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

ডিটক্স স্পা নেওয়ার পর প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া ভালো। আর এর সঙ্গে প্রয়োজন ডিটক্স গোসল। এই গোসল বাড়িতেই সারতে পারেন অনায়াসে। ডিটক্স গোসলের রয়েছে নানা উপকারিতা। এটি রক্ত সঞ্চালনের গতিপ্রবাহ ঠিক রেখে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। শরীর ও ত্বকের টক্সিন দূর করে শরীরকে করে তরতাজা ও ফুরফুরে। সৈন্ধব লবণ, অ্যাপল সিডার ভিনেগার, ক্লোরক্স, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, বেকিং সোডা, আদা, মাটি ইত্যাদি নানা প্রাকৃতিক উপাদানেই হয়ে যাবে আপনার ডিটক্স গোসল।