রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিসের নামে নৈরাজ্য দিনদিন ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। সাধারণ মানুষের মতে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ত্রুটিপূর্ণ ও নিম্নমানের যানবাহন এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনসহ নানা অভিযোগে নগরীতে বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে এই সিটিং সার্ভিস।
সিটিং কিংবা গেইটলক অথবা বিরতিহীন নামে কোনো শব্দ সিটি বাস সার্ভিসের রুট পার্মিটের কোথাও লেখা না থাকলেও নিজেদের প্রভাব এরই মধ্যে বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা। কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, অর্থলোভেই মূলত নগরীতে সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে সীমাহীন যাত্রীদুর্ভোগের কারণ তৈরি করেছে পরিবহণ মালিকরা।
রাজধানীর কুড়িল, নতুনবাজার ও উত্তরা থেকে যেসব বাস কালশী, মিরপুর-১০, ২, ১ নম্বর হয়ে আনসারক্যাম্প যায়, সেগুলোর সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ টাকা। এই রুটের জাবালে-নূর, আকিক, প্রজাপতি বাসে যাত্রীদের টিকেট দেওয়া হয় না।
সিটিং সার্ভিসেও রাস্তার মাঝখানে ঝুঁকি নিয়ে তোলা হয় যাত্রী। যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুটের অনাবিল, সালসাবিল, তুরাগ এবং সদরঘাট থেকে চলাচলকারী সুপ্রভাত, ভিক্টর পরিবহনের বাসগুলো সিটিং সার্ভিস হিসাবে রাস্তায় নামলেও এখন পুরোপুরি লোকাল সার্ভিসে পরিণত হয়েছে। অথচ এর ভাড়া নেওয়া হয় সিটিং সার্ভিসের সমান।
বসুন্ধরার বাসিন্দা খাদিজা আক্তার জানালেন, জাবালে-নূর ও আকিক বাসগুলো বিশ্বরোড থেকে কালশী, কিংবা নতুন বাজার থেকে শেওড়া গেলেও ২৫ টাকা নেয়। বসুন্ধরা থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত ২০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়, যা লোকাল বাসে ১০/১২ টাকা।
সবচেয়ে বড় কথা, এরা কোনো টিকেট দেয় না। টিকেট দেওয়া হয় না বলে বারবার ভাড়া চাইতে আসে, অনেক সময় এ নিয়ে তর্কাতর্কিও হয়। কোনো কোনো বাসে টিকেট দেওয়া হলেও তাতে যাত্রীর গন্তব্য আর টিকেটে লেখা গন্তব্যের মিল থাকে না।
এসব কিছু স্বীকার করে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক কোনো নীতিমালা না থাকায় নিজেরাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না এ নৈরাজ্য। আর বিআরটিএ বলছে, খুব শিগগিরই নীতিমালা তৈরি করে সিটিং সার্ভিসের অনুমতি দিয়ে সমস্যার সমাধান করা হবে।
এই প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কামাল বলেন, সিটিং সার্ভিসে স্ট্যান্ডিং প্যাসেঞ্জার থাকে। একজন লোক পল্লবীতে থেকে ফার্মগেট উঠে গেল, কিন্তু তার মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া। এটা এখন চলছে। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি, কিন্তু এখন পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।
এ দিকে শিগগিরই ভাড়া নির্ধারণ, সীমিত স্টপেজ করার সুপারিশের মাধ্যমে নীতিমালা ঠিক করে সমস্যা সমাধান করার কথা জানান পরিবহন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিআরটিএ।