জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার কে কে পাচ্ছেন, তা নিয়ে যেমন আলোচনা হয়, তেমনি মর্যাদাপূর্ণ এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক কে হচ্ছেন, তা নিয়েও চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে থাকে জল্পনাকল্পনা। জানা গেছে, এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন চলচ্চিত্রের দুই প্রিয় মুখ ফেরদৌস ও পূর্ণিমা। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদ আজ শনিবার সকালে উপস্থাপক হিসেবে এই দুজন শিল্পীর নাম প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
গত ৪ এপ্রিল তথ্য মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ বিজয়ীদের নাম প্রকাশ করে। আগামী ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে ২০১৬ সালের ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ বিজয়ী শিল্পীরা পুরস্কার গ্রহণ করবেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে থাকবে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে উপস্থাপক হিসেবে ইদানীং খুব আলোচিত হন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা। এরপর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই দুই শিল্পীর উপস্থাপনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করছে বিভিন্ন আয়োজক। তবে গড্ডলিকাপ্রবাহে গা না ভাসিয়ে নিজেদের পছন্দের কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন তাঁরা। ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠান উপস্থাপনাকে অনেক বেশি সম্মানের মনে করছেন ফেরদৌস ও পূর্ণিমা।
প্রথম আলোকে ফেরদৌস বলেন, ‘আমি তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছি। এই অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা অনেক সম্মানের। তবে এই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে গিয়ে খুব চাপ অনুভব করি। কারণ, সামনে বসে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সব মিলিয়ে এক অবিশ্বাস্য রকম সুন্দর অনুভূতি হয়।’
ফেরদৌস আরও বলেন, ‘আমরা সাধারণত যেসব অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করি, সেখানে নিজের থেকে অনেক কিছু করার সুযোগ থাকে। অনেক মজা করি। কিন্তু এখানে সেই সুযোগ নেই। তারপরও সীমাবদ্ধতার মধ্যে যতটা মজা করা যায়, আমরা করি।’
পূর্ণিমা বলেন, ‘গত বছর এই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছিলাম আমি আর চঞ্চল চৌধুরী। এটা আমার জন্য খুব সম্মানের ছিল, আবার সৌভাগ্যের। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে উপস্থাপনা করেছি। আগে থেকেই স্ক্রিপ্ট তৈরি করা থাকে। সেখানে নিজে থেকে কিছু বলার সুযোগ নেই। ৮ জুলাই অনুষ্ঠান হবে। তার আগের দিন আমরা উপস্থাপনা নিয়ে বসব। স্ক্রিপ্ট পড়ব, আলোচনা করব।’
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যাপারে হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘৪৫ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুটা হবে অর্কেস্ট্রা পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। থাকবে সাদিয়া ইসলাম মৌয়ের নাচ। এই নাচের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বিবর্তন আর সরকারের উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরা হবে।’
পুরো আয়োজন সম্পর্কে বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক মাহবুবা ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের পর বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেবেন চলচ্চিত্রের শিল্পীর। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি থেকে একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় শাকিব খান, জয়া আহসান, বুবলী ও নুসরাত ফারিয়ার নাম নেই। তবে অন্য জনপ্রিয় শিল্পীদের নাম রয়েছে। তিনটি গান পরিবেশন করবেন কোনাল, রাজীব, বেলাল খান, অনুপমা মুক্তি ও প্রতীক হাসান।
এক নজরে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’
আজীবন সম্মাননা: ফারুক ও ববিতা
সেরা চলচ্চিত্র: অজ্ঞাতনামা (ফরিদুর রেজা সাগর)
সেরা পরিচালক: অমিতাভ রেজা চৌধুরী, (আয়নাবাজি)
সেরা অভিনেতা: চঞ্চল চৌধুরী (আয়নাবাজি)
যৌথভাবে সেরা অভিনেত্রী: তিশা (অস্তিত্ব) ও কুসুম শিকদার (শঙ্খচিল)
যৌথভাবে পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতা: আলীরাজ (পুড়ে যায় মন) ও ফজলুর রহমান বাবু (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেত্রী: তানিয়া আহমেদ (কৃষ্ণপক্ষ)
খল চরিত্রে সেরা অভিনেতা: শহীদুজ্জামান সেলিম (অজ্ঞাতনামা)
সেরা শিশুশিল্পী: সাঁজবাতি (শঙ্খচিল)
সেরা সংগীত পরিচালক: ইমন সাহা (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
সেরা গায়ক: সৈয়দ ওয়াকিল আহাদ (দর্পণ বিসর্জন, গান: অমৃত মেঘের বারি)
সেরা গায়িকা: মেহের আফরোজ শাওন (কৃষ্ণপক্ষ, গান : যদি মন কাঁদে)
সেরা গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে, গান: বিধিরে ও বিধি)
সেরা সুরকার: ইমন সাহা (গান: বিধিরে ও বিধি)
সেরা কাহিনিকার: তৌকীর আহমেদ (অজ্ঞাতনামা)
সেরা সংলাপ রচয়িতা: রুবাইয়াত হোসেন (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)
সেরা চিত্রনাট্যকার: অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম (আয়নাবাজি)
সেরা সম্পাদক: ইকবাল আহসানুল কবির (আয়নাবাজি)
সেরা শিল্প নির্দেশক: উত্তম গুহ (শঙ্খচিল)
সেরা চিত্রগ্রাহক: রাশেদ জামান (আয়নাবাজি)
সেরা শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ, (আয়নাবাজি)
যৌথভাবে সেরা পোশাক ও সাজসজ্জা: সাত্তার (নিয়তি) ও ফারজানা সান (আয়নাবাজি)
সেরা রূপসজ্জা: মানিক (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)
সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: ঘ্রাণ (এস এম কামরুল আহসান)
সেরা প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: জন্মসাথী (একাত্তর মিডিয়া লি. ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর)