ফুটবল বিশ্বকাপ জ্বরে আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। কে জিতবে, কে হারবে এটা নিয়েই সব দেশের ক্রীড়ামোদীদের মাঝে আলোচনা। যে যার মতো করে সম্ভাব্য বিজয়ীর ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা করছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম তাদের নিজস্ব ভঙ্গিমায় পরিসংখ্যান, ট্রেন্ড, অতীত টুর্নামেন্টের ধরন ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে ধাপে ধাপে ৩১টি দেশকে বাদ দিয়ে একটি দেশকে বেছে নিয়েছে ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে। এই তত্ত্ব সঠিক হবে কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে তারা পর্যাপ্ত যুক্তি দেয়ার চেষ্টা করেছে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে।
থাকতে হবে সেরার তালিকায়: ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে যখন ৩২টি দেশ খেলতে শুরু করে তখন থেকে পরবর্তী সবকটি টুর্নামেন্টে এমন দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, যেটি সেরা দলের তালিকাতেই ছিল। এই তালিকার বাইরে থেকে যে দলটি সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেটি ছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ সালে। আর্জেন্টিনাকে শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনা আর তার ‘ঈশ্বরের হাত দিয়ে’ করা সেই আলোচিত গোল। এই একটি মাত্র বিবেচনা থেকে শুরুতেই ৩২ দলের ২৪টিকে সম্ভাবনার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো। রইলো বাকি আট। সেই আটটি দেশ হচ্ছে—ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজিল, পর্তুগাল, আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড ও রাশিয়া।
স্বাগতিক দেশ হওয়া যাবে না: বিশ্ব ফুটবলে রাশিয়ার র্যাংকিং ৬৬, তাই তারা সেরা আটের ভেতরে থাকতো না, যদি তারা স্বাগতিক দেশ না হতো। একটা সময় ছিল যখন স্বাগতিক দেশগুলোই চ্যাম্পিয়ন হতো। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর ১৯৩০ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত প্রথম ১১টির পাঁচটিতেই স্বাগতিক দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে গত নয়টি বিশ্বকাপে স্বাগতিক দেশ মাত্র একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেটি ১৯৯৮ সালে। বিশ্বকাপ নিজের দেশে রেখে দিয়েছিল ফ্রান্স। তার অর্থ হলো স্বাগতিক দেশ হওয়া এখন আর সাফল্যে পৌঁছানোর চাবিকাঠি নয়। যেমন চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৯৯০ সালে স্বাগতিক দেশ হয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ইতালি, ২০০৬ সালে স্বাগতিক দেশ ছিল জার্মানি, কিন্তু সেবারেও শিরোপা তাদের ঘরে উঠেনি। চার বছর আগে বিশ্বকাপ হয়েছিল ব্রাজিলে, সেবারও দেশটি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তাই এবার রাশিয়াকেও চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখা যাবার সম্ভাবনা কম। এখন বাকি রইলো সাতটি দেশ।
কম গোল খেতে হবে: যখন থেকে ৩২টি দল নিয়ে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট শুরু হয়, তারপর থেকে যে পাঁচটি দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা কেউই তাদের সাতটি ম্যাচে চারটির বেশি গোল খায়নি। বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনার তালিকায় যে সাতটি দেশ রয়ে গেছে, বাছাই পর্বের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল রক্ষণভাগ পোল্যান্ডের। প্রতি ম্যাচেই তারা ১ দশমিক ৪টি করে গোল হজম করেছে। জার্মানি ও পর্তুগাল খেয়েছে প্রতি ম্যাচে শূন্য দশমিক ৪ গোল, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স শূন্য দশমিক ৬, ব্রাজিল শূন্য দশমিক ৬১ এবং আর্জেন্টিনা শূন্য দশমিক ৮৮ গোল। ফলে পোল্যান্ড বাদ। বাকি রইলো ছ’টি দেশ।
সুদিন এখন ইউরোপের: দক্ষিণ আফ্রিকাতে স্পেনের সাফল্য এবং ব্রাজিলে জার্মানির জয় বিশ্বকাপের গতিপথ বদলে দিয়েছে। ইউরোপে আয়োজিত টুর্নামেন্টগুলোতে বেশিরভাগ সময়েই ইউরোপের দেশগুলোই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফলে সেই হিসাবে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বাদ পড়ে যাচ্ছে। বাকি রইলো চারটি দেশ- ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং পর্তুগাল।
চাই সেরা গোলরক্ষক:যে চারটি দেশ বাকি আছে তাদের মধ্যে বর্তমানের সেরা গোলরক্ষকরা হচ্ছেন জার্মানির ম্যানুয়েল নয়ার, ফ্রান্সের উগো লরিস এবং বেলজিয়ামের থিবাত কোর্তোয়া। এই হিসেবে বাদ পড়ে যাচ্ছে পর্তুগাল। এখন ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানি- এই তিনটি দেশ বাকি রইলো।
অভিজ্ঞতা থাকতে হবে: যেবার থেকে বিশ্বকাপে ৩২টি দেশ খেলতে শুরু করে সেই ১৯৯৮ সালের পর থেকে দেখা গেছে, সাফল্যের পেছনে একটা বড় ভূমিকা রাখে অভিজ্ঞতা। সে বছর চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স। তখন ফরাসী দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞতা ছিল গড়ে ২২.৭৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার। এবার ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে কম। তাদের একেকজন ফুটবলার গড়ে ২৪.৫৬ করে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। জার্মানির ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৪৩.২৬ এবং বেলজিয়ামের বেলায় ৪৫.১৩। ফলে ‘ফাইনাল হচ্ছে ’ বেলজিয়াম ও জার্মানির মধ্যে!
বর্তমান চ্যাম্পিয়নের ভাগ্য খারাপ: বিশ্বকাপে জয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা খুব কঠিন। একমাত্র ব্রাজিলই ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে পরপর দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছে। গত চারটি টুর্নামেন্টের তিনটিতেই আগের বারের চ্যাম্পিয়ন দল গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে গেছে। সেই হিসাবে ইতিহাস জার্মানির বিপক্ষে। ফলে বুঝতেই পারছেন ফাইনালে কারা চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। ২০১৮ বিশ্বকাপ ফুটবলে নতুন ‘চ্যাম্পিয়ন’ বেলজিয়াম। এখন দেখার অপেক্ষা এই গণনা কতটুকু সঠিক ছিল।