আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে সুদের ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। যা ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আরো ঘোষণা দেন যে সুদের অর্থ-সম্পদ ধ্বংস করে দেবেন। আর যারা তাদের সম্পদ থেকে দান সাদকা করবেন তাদের সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবেন।
আল্লাহ তাআলা বান্দার দানকে ডান হাতে গ্রহণ করে তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। যার পরিমাণ বর্ণনা করতে গিয়ে ওহুদ পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আর সুদের অর্থ-সম্পদ ধ্বংস হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা সুদের ধ্বংস ও দানের বৃদ্ধি সম্পর্কে সুস্পষ্টভাষায় ঘোষণার পাশাপাশি তার বিধান অমান্য করে যারা সুদ গ্রহণ করে সে সব পাপীষ্ঠদেরকে কোনোভাবেই পছন্দ করেন না উল্লেখ করে বলেন-
Quran-inner
আয়াতের অনুবাদ
Quran-inner
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২৭৬ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা সুদের ধ্বংস ও দানের বরকত এবং সুদ গ্রহণের বিধান অমান্যসহ সব সব পাপীষ্ঠদেরকে তিনি কোনোভাবেই পছন্দ করেন না তুলে ধরেছেন। যাতে মানুষ আল্লাহর এ ঘোষণায় সুদ প্রথা পরিত্যাগ করে এবং দানের প্রতি উৎসাহী হয়। যাতে রয়েছে বরকত ও কল্যাণ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, যদিও সুদের কারণে প্রকাশ্য দৃষ্টিতে অর্থ-সম্পদ বাড়তে দেখা যায় কিন্তু পরিণামে ধ্বংস আসে।’ (মুসনাদে আহমদ)
কুরআন বিশারদগণের ভাষ্য মতে, আল্লাহ তাআলা সুদ প্রথার মাধ্যমে অর্জিত ধন-সম্পদকে ধ্বংস করে দেন; অথবা সুদখোরের ধন-সম্পদের বরকতকে বিনষ্ট করে দেন।
আবার অনেকে বলেছেন, ‘সুদের অর্থ-সম্পদ ধ্বংস করার এবং দান-সাদকায় সম্পদ বৃদ্ধি সম্পর্ক আখেরাতের সাথে অর্থাৎ সুদখোর ধন-সম্পদের যে পাহাড় গড়ে তুলল তা এ ব্যক্তির পরকালীন জীবনের কোনো কাজে আসবে না; বরং তার কঠোর ও কঠিন শাস্তির কারণ হবে। পক্ষান্তরে যে দান-সাদকা করে তা আখেরাতে দাতার জন্য চির শান্তির কারণ হবে।
আরও পড়ুন- সুদের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে আল্লাহর ঘোষণা
হাদিসে পাকে এ বিষয়ে দানের ব্যাপারে সুন্দর নসিহত পেশ করা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি নিজের পবিত্র আয়-রোজগার থেকে একটি খেজুর দান করে, আল্লাহ পাক তা তার ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর সে দানকে তিনি লালন পালন করেন যেভাবে তোমরা গরুর বাছুরকে লালন-পালন কর।
আর সেই খেজুরের সাওয়াবকে পাহাড়ের সমান করে দেন আর আল্লাহ পাক পবিত্র বস্তু ব্যতিত অপবিত্র কোনো বস্তু কবুল করেন না।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘একটি খেজুর, যা আল্লাহ রাস্তায় দান করা হয়, আখেরাতে তার প্রতিদান ওহুদ পাহাড়ের ন্যায় হবে।
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘যে এক লোকমা খাদ্য-দ্রব্য যা আল্লাহর রাতে দুনিয়াতে দান করা হয়, তা কেয়ামতের দিন ওহুদ পাহাড়ের ন্যায় হাজির হবে। অতএব তোমরা আল্লাহর রাহে দান খয়রাত করতে থাক। (ইবনে কাসির, মাজহারি, রুহুল মাআনি)
উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা সুদ ও দান-খয়রাতের কথা এক সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যদিও বিষয় দুটি আলাদা আলাদা। কিন্তু এর মধ্যে রয়েছে গভীর সম্পর্ক। আর তাহলো দান-সাদকা মানুষকে করা হয় আর তার কোনো বিনিময় গ্রহণ করা হয় না। পক্ষান্তরে সুদ কোনো বিনিময় ছাড়া নেয়া হয় না।
তাই আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করেন, ‘তোমরা সুদ গ্রহণ করো না, তা ধ্বংস হয়ে যাবে। আর বেশি বেশি দান-সাদকা করো। যাতে সম্পদ বৃদ্ধি হয় এবং কল্যাণ আসে।
আল্লাহর বিধান অমান্য করে এমন কোনো পাপীষ্ঠদেরকে তিনি কোনোভাবেই ভালোবাসেন না। দান থেকে বিরত থেকে সুদের পেছনে যারা দৌড়ায় তারাও পাপী। সুতরাং সুদ পরিহার করে বেশি বেশি দান করাই এ ঘোষণার একমাত্র উদ্দেশ্য।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুদ থেকে বিরত থেকে বেশি বেশি দান করার তাওফিক দান করুন। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে হাদিসে ঘোষিত নেয়ামত ও কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন।