• গাজীপুর সিটি নির্বাচন
• জাহাঙ্গীরের পক্ষে ১৪ দলের নেতা ও হাসান উদ্দিনের পক্ষে বিএনপি নেতাদের প্রচার।
• ৫৬ ওয়ার্ডে আ. লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশন গত বুধবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব পক্ষকে সমান সুযোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও জানিয়েছিলেন, কোনো পক্ষকে হয়রানি করা হবে না। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই দলীয় নেতা-কর্মীদের আটক ও হয়রানির অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বিএনপির অভিযোগ, বুধবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। দলটির পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের হয়রানি বন্ধে গতকাল সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে কাশিমপুর অঞ্চল নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব মো. শাহীন, কোনাবাড়ী কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. মিলন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য শাজাহান ও তাইজুল ইসলাম, কেন্দ্র আহ্বায়ক ছাত্রদলের নেতা মিলন মিয়া এবং কোনাবাড়ী কেন্দ্র পরিচালনা কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলামকে।
এ ছাড়া গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বালিয়াড়া কেন্দ্র কমিটির সদস্য আবদুস সামাদ, শাহ আলম এবং ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আবু সায়েমকে। এর আগে ১৪ জুন সাবেক কাশিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং কাশিমপুর অঞ্চলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শওকত হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, বিএনপির সমর্থকদের পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার, ভয়ভীতি প্রদর্শন, মিথ্যা মামলা দায়েরসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ২০-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে। পুলিশ নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির নেতা-কর্মীদের তালিকা ধরে গ্রেপ্তার করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), চার নির্বাচন কমিশনার, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে সব পক্ষকে সমান সুযোগ দেওয়ার এবং কোনো পক্ষের নেতা-কর্মীদের হয়রানি না করার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক বলেন, প্রার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় সভার পরদিন বিএনপির নির্বাচনসংশ্লিষ্ট নেতাদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। বুধবার রাতে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে অভিনব কায়দায় আটক করে অন্য জেলার পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নামে পরোয়ানা আছে কি না, তা জানতে চেয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ‘এতজন গ্রেপ্তারের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে পরোয়ানাভুক্ত দুজন আসামিকে গত বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
জাহাঙ্গীরের প্রচারে ১৪ দলের নেতারা
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে গতকাল ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। গণসংযোগে অংশ নেন খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। ১৪ দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদত হোসেন, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের রেজাউর রশীদ খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের করিম সিকদার ও শওকত রায়হান, তরীকত ফেডারেশনের সৈয়দ রেজাউল হক প্রমুখ।
মাঠে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা
বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার গতকাল মহানগরীর কোনাবাড়ী বাজার, জরুন, কাশিমপুর এবং টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় পথসভা ও গণসংযোগ করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে সারা দিন হাসান উদ্দিনের পক্ষে গণসংযোগ করেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে প্রচারে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক প্রমুখ।
ইসলামী আন্দোলনের প্রচার
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুহাম্মদ নাসির উদ্দিনের পক্ষে গণসংযোগে যোগ দেন সংগঠনের আমির চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মো. রেজাউল করিম। প্রার্থীর পক্ষে দিনভর মহানগরীর চান্দনা, চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী এবং শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পথসভা ও গণসংযোগ চালায় দলটি।
বিদ্রোহ দমাতে পারল না আওয়ামী লীগ
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতিমধ্যে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। বাকি ৫৬টি সাধারণ ওয়ার্ডের প্রতিটিতেই আওয়ামী লীগের এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।
সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীক থাকলেও তবে কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারেন না। কাউন্সিলর পদে দল প্রার্থীদের সমর্থন দেয়। গাজীপুর সিটির কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ একক প্রার্থীকে সমর্থন দিলেও বিএনপি সরাসরি কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয়নি।
গাজীপুর সিটির ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গিয়াস সরকার। ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী তিনজন। সবাই নিজেদের আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী দাবি করছেন।
গিয়াস সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, তারা কেউ বসতে রাজি না। দলের দায়িত্ব ছিল একক প্রার্থী নিশ্চিত করা। প্রার্থীরা জেতার জন্য নিজেদের সুবিধামতো প্রচার চালাচ্ছে, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী।’
২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটির নির্বাচনেও কোনো ওয়ার্ডে একক প্রার্থী দিতে পারেনি দলটি। গতবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে নির্বাচিত হন বিএনপির আবদুল মান্নান। মেয়র নির্বাচনে পরাজয়ে কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী না দিতে পারাটা একটি কারণ বলে বিবেচনা করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, একাধিক প্রার্থী কোনো সমস্যা নয়। মেয়র নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে না।