- বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ‘ভয়’ কালোটাকায়
- বহিরাগতদের নিয়ে ‘ভয়ে’ থাকার কথা বলছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী
- পেশিশক্তিও বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে ভয় অন্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের
কালোটাকা, পেশিশক্তি ও বহিরাগত—এই তিনটি বিষয় নিয়ে ভীত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। এর মধ্যে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ‘ভয়’ কালোটাকায়। বহিরাগতদের নিয়ে ‘ভয়ে’ থাকার কথা বলছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী। অন্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনে কালোটাকা ও বহিরাগতদের পাশাপাশি পেশিশক্তিও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ভোটের মাত্র চার দিন বাকি থাকতে গতকাল বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে কাছে পেয়ে প্রার্থীরা নিজেদের ভয়ের কথা তুলে ধরেছেন। আর সিইসি সবাইকে আশ্বস্ত করলেন, খুলনার মতো নির্বাচন গাজীপুরে হবে না। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয় এবং এর পেছনে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকে, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে এসে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, খুলনার মতো কারচুপি গাজীপুরে করলে ক্ষমতাসীনদের শিকড়ে নাড়া লাগবে।
নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রথমে নির্বাচন সমন্বয় কমিটির বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিইসি ছাড়াও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। পরে বিকেলে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিইসি ও কমিশনাররা।
খুলনার পুনরাবৃত্তি হবে না
গত ১৫ মে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে গতকাল সিইসি বলেন, ‘প্রশাসন নির্বাচন স্ট্যাফিং (ভোট জালিয়াতি) করেছে, এই বক্তব্য আমি প্রত্যাখ্যান করি। স্ট্যাফিং করার জন্য কিছু দুষ্কৃতকারী থাকে, তারা চেষ্টা করে। খুলনায় চার-পাঁচটা কেন্দ্রে তারা স্ট্যাফিং করার সুযোগ পেয়েছে। অন্যান্য কেন্দ্রে স্ট্যাফিং হয়নি। সেগুলোতে ভালো নির্বাচন হয়েছে। খুলনার ঘটনার পুনরাবৃত্তি গাজীপুরে হবে না।’
সিইসি বলেন, প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে, নির্বাচন (গাজীপুর সিটি) সুষ্ঠু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা-সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ২৬ জুন সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা দিয়েছে। ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। কোনো কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বা প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মতবিনিময়ে ‘ভয়ের আলাপ’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চার কমিশনার গতকাল বিকেলে গাজীপুরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এতে সাতজন মেয়র প্রার্থী, আটজন সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী বক্তব্য দেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। ভয় হচ্ছে, কালোটাকা। কালোটাকার সামনে হাঁপিয়ে উঠেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে জনগণ মেনে নেবে না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী কাজী রুহুল আমিন বলেন, দেশবাসী গাজীপুরের দিকে তাকিয়ে। কালোটাকা ও পেশিশক্তিমুক্ত নির্বাচন দেখতে চায় সবাই।
নির্বাচনে বহিরাগতদের নিয়ে নিজের শঙ্কার কথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, বহিরাগতরা যেন রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে। কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, কুৎসা না রটাতে পারে। তিনি বহিরাগতদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার নিয়ে প্রার্থীদের এমন শঙ্কাকে যৌক্তিক বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, কালোটাকা ও পেশিশক্তি এই দুটি থেকে পরিত্রাণ না পেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে ইসি মানমর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে চায় না।
সবার প্রত্যাশা সুষ্ঠু ভোট
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এমন প্রত্যাশার কথা জানান আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মো. নাছির উদ্দিন বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কী হয়েছে, তা পুরো জাতি দেখেছে। গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক দেওয়ান মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকে হলুদ কার্ড বা লাল কার্ড দেখাতে হয়নি।
সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা
জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে হাসান উদ্দিন সরকার আচরণবিধি ভঙ্গের বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেছেন। ইসির সঙ্গে মতবিনিময়ে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘সরকারি দলের লোকজন কিছু সুবিধা নেবে এটা মেনে নিয়েছি। বড় বড় সাইনবোর্ড, রঙিন পোস্টার লাগিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি।’
এ ব্যাপারে সিইসি বলেন, বিএনপির প্রার্থী কোন ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তা সুনির্দিষ্ট করেননি। সেটি সুনির্দিষ্ট করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রচারণা তুঙ্গে
আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম গতকাল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের গাজীপুরা এলাকায় পথসভার মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেন। পরে এরশাদনগর, বর্ণমালা হাউজ বিল্ডিং, নোয়াগাঁও, টিঅ্যান্ডটি বাজার, আমতলী মোড়সহ আরও কয়েকটি এলাকায় পথসভা এবং গণসংযোগ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি মহাজোটের শরিক অন্য দলের নেতারা অংশ নেন।
অন্যদিকে হাসান উদ্দিন সরকার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাঙ্গালগাছ বাজার, নীলের পাড়া, কানাইয়া বাজার, বালুচাকুলি এলাকায় পথসভা ও গণসংযোগ করেন। তাঁর পক্ষে পৃথকভাবে প্রচার চালান কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, শায়লা, শিবা শানু, মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।