আমার মেয়ে কই, মেয়েটারে একটু দেখাও!

গতকাল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন উঠতি মডেল তিথি বড়ুয়া। তিথির বয়স হয়েছিল ২১ বছর। চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া থানার ইছামতী গ্রামের সুদান বিকাশ বড়ুয়ার দুই মেয়ের মধ্যে ছোট তিথি বড়ুয়া। তিথি চট্টগ্রামের সরকারি মহিলা কলেজে অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন মডেলিংয়ের সাথে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামের কসমোপলিটন এলাকায় তিথি বাবা মার সাথে থাকত। তিথি বড়ুয়া ও আরও কয়েকজন অটোরিকশা করে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে বাস ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। অন্যরা সুস্থ আছেন।

তিথির মৃত্যুর খবর পেয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসেন তিথির বাবাবা সুদান বিকাশ বড়ুয়া। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিথির লাশ রাখা ছিল হাসপাতালের হিমঘরে। সুদান বিকাশ বড়ুয়া কাঁদতে কাদেতে তিথিকে খুঁজেতেছিলেন। কিন্তু তাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। স্বজনদের কাছে আকুতি জানাচ্ছিলেন, তাঁকে যেন মেয়ের কাছে নিয়ে যায়। লাশঘরে মেয়ের নিথর দেহ থাকলেও তা ছিল তালাবদ্ধ। সড়ক দুর্ঘটনায় আদরের সন্তান যে পৃথিবীতে আর নেই, তা তখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল তাঁর। তাই বারবার মেয়েকে দেখতে চাচ্ছিলেন তিনি।

গতকাল ২৯ জুন মঙ্গলবার বিকেল সোয়া চারটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। এর পৌনে দুই ঘণ্টা আগে বেলা আড়াইটায় নগরের জাকির হোসেন সড়কের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের সামনে বাসের ধাক্কায় মারা যান কলেজছাত্রী তিথি বড়ুয়া। তাঁকে বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে শহর এলাকার একটি বাস ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তিথির। এ অটোরিকশায় তিথির আরও তিন বন্ধু ছিলেন। তবে তাঁরা অক্ষত রয়েছেন। তাঁরা নগরের ফয়’স লেকে বেড়াতে যাচ্ছিলেন বলে জানান আত্মীয়রা।

মডেল তিথি বড়ুয়ার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে প্রথমে ছুটে আসেন বড় বোন চৈতি বড়ুয়াসহ আত্মীয়স্বজন। কিছুক্ষণ পর আসেন বাবা সুদান বিকাশ বড়ুয়া। এসেই মেয়ের জন্য আহাজারি শুরু করেন, ‘আমার মেয়ে কই। আমাকে একটু দেখাও। আমার কলিজা চলে গেছে। ওরা আমার কলিজাকে শেষ করে দিয়েছে।’ আত্মীয়স্বজনের সান্ত্বনাতেও কান্না থামছিল না সন্তানহারা এই বাবার।

তিথির জন্য বাবা বিকাশ বড়ুয়া যখন হাসপাতালের লাশঘরের সামনে আহাজারি করছিলেন, তখন মা সুজাতা বড়ুয়াকে যেতে হয় নগরের খুলশী থানায়। ঘাতক বাস ও চালকের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

খুলশী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাদেকা আফরোজা জানান এক্সিডেন্টের জন্য দায়ী বাসচালক মোহাম্মদ পারভেজকে (২০) আটক এবং বাসটি জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। দ্রুত তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।