গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয় এবং এর পেছনে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ বুধবার বেলা ১১টায় গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই নির্বাচনে সমন্বয় কমিটির বিশেষ আইন শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা দুইটার দিকে সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন।
গত ১৫ মে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ছিল- সাংবাদিকদের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন সিইসি।
ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার কে এম আলী আজম সভার সভাপতিত্ব করেন। এতে সিইসি ছাড়াও অংশ নেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। সভায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থা অংশ নেয়।
সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশ্বাস দিয়ে সিইসি বলেন, আইন শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ মত প্রকাশ করেছেন সভায়। তাঁরা ২৬ জুন সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে ওই নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল-সাংবাদিকদের এমন মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে সিইসি বলেন, ‘প্রশাসন নির্বাচন “স্টাফিং” (ভোট জালিয়াতি) করেছে-এই বক্তব্য আমি প্রত্যাখ্যান করি। প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে, নির্বাচন (গাজীপুর সিটি) সুষ্ঠু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কোনো কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বা প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
নির্বাচনের দিন ভোটাররা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত-এমন উদ্বেগ নাকচ করে দিয়ে সিইসি বলেন, ‘গাজীপুর এত বড় সিটি। তফসিল ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত এখানে (গাজীপুর) কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করছি, নির্বাচনের দিনও পরিবেশ ভালো থাকবে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে’।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন বিএনপি মনোনীত হাসান উদ্দিন সরকার ও আওয়ামী লীগ মনোনীত জাহাঙ্গীর আলম। মেয়র পদ ছাড়াও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড মিলিয়ে ৭৬ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে। ১৮ জুন থেকে প্রার্থীরা সেখানে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। এবার ছয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার আচরণবিধি ভঙ্গের লাগাতার অভিযোগ জানিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সিইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, বিএনপি প্রার্থী কোন ক্ষেত্রে বিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তা সুনির্দিষ্ট করেননি। সেটি সুনির্দিষ্ট করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ বিকেল তিনটায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের মত বিনিময় শুরু হয়েছে।
এর আগে ইসির তফসিল অনুসারে ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তির প্রজ্ঞাপন ও নির্বাচনের তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের তফসিলের কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশন পৃথক তিনটি আবেদন করে। শুনানি শেষে ১০ মে আপিল বিভাগ এই নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করে ২৮ জুনের মধ্যে এ নির্বাচন করতে বলেন। এরপর ১৩ মে ইসির এক সভায় ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।