নোয়াখালীতে প্রবাসী খুন, ৬ মাসেও গ্রেপ্তার হয়নি আসামি

স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে নোয়াখালীতে প্রবাসী খুনের ঘটনায় ৫০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছে মামি-ভাগিনা। সিমা আক্তার ও পরকীয়া প্রেমিক ভাগিনা রনিকে আপত্তিজনক অবস্থায় রাতে প্রবাসী মামার হাতে ধরা পড়লে প্রবাসী শাহ আলম আরজুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টের জন্য আটকে আছে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জুনদপুর গ্রামের প্রবাসী শাহ আলম আরজু হত্যার রহস্য। হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ দিনেও আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আরজু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে এলাকাবাসী।
তবে আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, জুনদপুর গ্রামের শাহ আলম আরজু দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার সুবাদে তারই ভাগিনা রনির সঙ্গে স্ত্রী সিমা আক্তার পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি আরজু জানতে পেরে দেশে চলে আসেন। তিনি দেশে এসে স্ত্রীকে নানাভাবে বুঝিয়েও পরকীয়া থেকে ফেরাতে পারেননি। এদিকে মামা আরজু হঠাৎ দেশে আসায় ভাগিনা রনিও তার ওপর চরম ক্ষুব্ধ হয়। তাই পথের কাটা সরাতে চলতি বছরের ২৭শে জানুয়ারি রাতে স্ত্রী সিমা আক্তার, ভাগিনা রনি ও তার কয়েক জন সহপাঠী আরজুকে হত্যা করে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে বলে প্রচার চালায়। এরপর দিনই নিহতের হত্যাকারীরা এলাকাবাসীকে না জানিয়ে কৌশলে ভাড়াটে লোকজন নিয়ে তড়িঘড়ি করে আরজুর লাশ বাড়ির সামনের দাফন করে। বিষয়টি এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তারা সোনাইমুড়ী থানা পুলিশকে জানায়। থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার বা অভিযুক্তদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় এলাকাবাসী হতাশ হয়। তারা আরজু হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও ফেসবুকে ব্যাপক লেখালেখি করে। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর পক্ষে ইউপি সদস্য বাবলু আহমেদ বাদী হয়ে নিহতের স্ত্রী সিমা আক্তার ও পরকীয়া প্রেমিক ভাগিনা রনিসহ ৩ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। আদালতের নির্দেশে গত ৮ই ফেব্রুয়ারি পিবিআই আরজুর লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করলেও এখনো ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ভিসেরা রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। এদিকে আরজু হত্যার রহস্য উদঘাটন ও মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে হতাশ এলাকাবাসী। তারা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদকারীদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আরজু হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে তার হতভাগা মা জানান, আমি আমার সন্তানের হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। পিবিআই মামলাটি সঠিক তদন্ত করছে না ও আসামি গ্রেপ্তারে তৎপর নয় বলে অভিযোগ করে মামলার বাদী ও ইউপি সদস্য বাবুল আহমেদ বলেন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় আমরা হতাশ। আমরা চাই পুলিশ যেন আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই-এর পরিদর্শন আসাদুজ্জামান আসাদ। অভিযুক্ত নিহত আরজুর স্ত্রী সিমা আক্তার ও ভাগিনা রনির বক্তব্য নেয়ার জন্য তাদের বাড়িতে গেলে পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোকজন জানায়, আরজু নিহত হওয়ার পর থেকেই পালাতক রয়েছে তারা। এমতাবস্থায় আলোচিত আরজু হত্যা রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে প্রশাসন- এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের। সূত্র জানায়, মামার দেয়া দুটি সিএনজি গাড়িও বিক্রি করে ভাগিনা খুনি রনি ও মামি সিমা আক্তার পালিয়ে থেকে ডাক্তার ও পুলিশকে ম্যানেজ করে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটি ধামাচাপা দিতে দালালের মাধ্যমে দৌড়-ঝাঁপ চালাচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আসািমদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এই নিয়ে জনমনে চরম ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠছে।