দুবছর আগের জঙ্গি হামলার ঘটনা বিবেচনায় রেখে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই মাঠে এটি হবে ১৯১তম ঈদুল ফিতরের জামাত। প্রতিবছরের মতো এবারও জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়।
ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ জামাতে ইমামতি করবেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে নিশ্চিদ্র করতে এবার প্রথমবারের মতো যুক্ত করা হয়েছে ড্রোন। নিরবচ্ছিন্ন নজরদারির জন্য তিনটি ড্রোন উড়বে শোলাকিয়ায় মাঠে। এটি দিয়ে ঈদগাহ ও এর আশপাশের এলাকা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এসপি মাশরুকুর রহমান জানান, নামাজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত এক মাস ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুরো ঈদগাহ ও আশপাশের এলাকাকে দশটি সেক্টরে ভাগ করে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, সহস্রাধিক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
“এছাড়াও মাঠের প্রবেশ পথগুলোসহ আশপাশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় জেলার পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ এবং চব্বিশটি চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। মাঠে স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। ঈদগাহ অভিমুখী সকল সড়কে বসানো হবে নিরাপত্তা চৌকি।”
ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশপথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে নামাজিদের ঢুকতে হবে। এর আগে আরও অন্তত তিন দফা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তাদের দেহ তল্লাশি করা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদগাহে আগত নামাজিদের কেবল পাতলা জায়নামাজ ছাড়া ছাতা বা কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না, বলেন এসপি।
নিরাপত্তার পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত নামাজিদের কাছে নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন, ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও পৌরসভাসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি সভাপতি মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, এরই মধ্যে মাঠে দাগ কাটা, বালু দেওয়া, দেওয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ শেষ হয়েছে। নামাজিদের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে কিশোরগঞ্জ পৌরসভা নির্মাণ করেছে কয়েকটি নতুন রাস্তা ও একটি সেতু। ওজুখানা ও শৌচাগার সংস্কার করা হয়েছে। চলছে শহরের শোভাবর্ধনের কাজও। বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হেয়েছে।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. কামরুজ্জামান জানান, দূর-দূরান্তের নামাজিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। একটি ট্রেন সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং অপর ট্রেনটি সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া মাঠের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। নামাজ শেষে ট্রেন দুটি দুপুর ১২টায় ফের ছেড়ে যাবে।
সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবারও শোলাকিয়ায় লাখো মানুষের ঢল নামবে বলে আশা করছেন জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয়রা।
মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ৬ষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির উপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিবর্তিত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠে। বিশাল এই মাঠের মধ্যে মোট কাতার রয়েছে ২৬৫টি। প্রতি কাতারে পাঁচ শতাধিক নানুষ নামাজে অংশগ্রহণ করে থাকেন। সেই সাথে মাঠের বাইরে আশে পাশের বিরাট এলাকা জুড়ে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা মিলিয়ে জামাতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আড়াই থেকে তিন লাখ ছাড়িয়ে যায় বলে ধারণা করা হয়।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ইদুল ফিতরের দিন সকালে এই ঈদগাহের অদূরে আজিমুদ্দিন স্কুলের পাশে পুলিশ সদস্যদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ হামলায় পুলিশের দুই সদস্য, এক জঙ্গি ও বাড়ির ভিতরে থাকা এক গৃহবধূসহ চারজন নিহত হন এবং আট পুলিশসহ তিন পথচারী গুরুতর আহত হন।