রাজধানীতে পুলিশের অভিযানের মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে মাদক!

রাজধানীতে পুলিশের অভিযানের মধ্যেই মাদক বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগে কিছুটা প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হলেও এখন তা চলছে অনেকটা গোপনে। খুচরা আকারে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজা। পুলিশের ‘লাইনম্যান’দের পাহারার মধ্যেই চলছে মাদকের কেনাবেচা। তবে এখন একটু যাচাই-বাছাই করে মাদক বিক্রি হচ্ছে। মাদক বিক্রেতাদের মোবাইল ফোনগুলো বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকছে। নির্দিষ্ট মাদকসেবীর কাছে বিক্রেতা ফোন করে ইয়াবা পৌঁছানোর তথ্যটি নিশ্চিত করছেন। এসব খুচরা মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীরা বলছেন, র‌্যাব ও পুলিশের চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের কারণে আগের মতো মাদক বিশেষ করে ইয়াবা সহজে মিলছে না। একটু দাম বেশি দিয়ে ইয়াবা কিনতে হচ্ছে। গেন্ডারিয়া রেল বস্তি, খিলগাঁও ঝিলপাড় বস্তি, বালুরমাঠ ও ভাষানটেক বস্তি ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

গেন্ডারিয়া: গেন্ডারিয়া রেলবস্তির রেলগেটের দক্ষিণের ফুটপাতে টিনের চালার নিচে পুলিশ ডিউটি করে। বস্তির কয়েকজন জানান, পুলিশ এখন নিয়মিত রুটিন করেই বস্তিতে ডিউটি করেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা মাদক বেচাকেনা করেন। সপ্তাহখানেক আগে গেন্ডারিয়া রেল বস্তিতে পুলিশ অভিযান চালালেও মাদক বিক্রি বন্ধ হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, অভিযানের পর মাদক বিক্রি একটু কমে গেছে। এলাকায় এককভাবে মাদক বিক্রি করে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ রহিমা। তবে তার ছেলেরাও এলাকা থেকে পালিয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে রুবেল নামের এক উঠতি যুবক। শহীদ (ছদ্মনাম) নামের একজন মাদকসেবী জানান, ইয়াবার দাম বেড়ে গেছে। এ কারণে আগে যেখানে একটি ইয়াবা সে ২৫০-৩০০ টাকায় কিনত, এখন তাকে ৫০-১০০ বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আর দিনের বেলা কোনো ইয়াবাই মিলছে না।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, নামাপাড়া বস্তিতে রহিমার প্রভাব থাকলেও তিনি এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। তার অবর্তমানে এই আখড়া নিয়ন্ত্রণ করছে তার শিষ্য ‘ফর্মা জামাল’। এই ফর্মা জামাল দীর্ঘদিন পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেছে। নামাপাড়া মসজিদ গলিতে বাবুনি, ফেনসি শফিক, এলাকার ইয়াবা সম্রাটখ্যাত মোল্লা আনোয়ার, হারুন, ফইটকা দেলা এখনো ইয়াবা বিক্রি করছেন। এরা সবাই ইয়াবার ডিলার।

খিলগাঁও: খিলগাঁওয়ের নবীনবাগ বালুরমাঠ বস্তিতে ইমাম হোসেন ওরফে কানা হোসেন ও তার তিন ছেলে তুষার, সিফাত ও তুহিন ইয়াবা ব্যবসা করেন। তবে এদের মধ্যে প্রথম তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র তুহিন আত্মগোপনে থেকে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

খিলগাঁওয়ের ঝিলপাড় বস্তিতে খালেক, তার মেয়ে নাজমা, রেহেনা, ছেলে সিদ্দিক, রাসেল ও নাতনি জামাই রাজিব মাদক ব্যবসা করেন-এমন অভিযোগ ছিল পুলিশের কাছে। সম্প্রতি চলমান অভিযানে পুলিশের হাতে সিদ্দিক ও রাজিব গ্রেফতার হলেও অন্যরা বাইরে থেকে ইয়াবা ব্যবসা করছেন। নবীনবাগে মর্জিনা বেগম, মেরাদিয়া কমিশনার গলির স্বপন ওরফে বাটার ও মিজান, নন্দীপাড়ায় রুবেল, ঈমামবাগে নাজমা, দক্ষিণ গোড়ানে ইব্রাহিম, উত্তর গোড়ানে মোকাদ্দেছ ওরফে মোকা ও সোহেল হাওলাদার ওরফে জুনা, বি-ব্লকের ইদ্রিস হাওলাদার এবং ত্রিমোহীন এলাকায় আইয়ুব আলী ওরফে টুক্কা ইয়াবা ও গাঁজার অন্যতম ব্যবসায়ী। চলমান অভিযানের মধ্যেও তাদের কারবার থেমে নেই।

ভাষানটেক: ভাষানটেক ১ নম্বর বস্তি, ২ নম্বর বস্তি, ৪ নম্বর বস্তি, শ্যামল পল্লী, রূপসী বাংলা, শিল্পীর টেক, আমানত সমিতি আবাসিক এলাকা এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় ইয়াবা বিক্রি হয় অনেকটা প্রকাশ্যে। এক সময়ে ভারত থেকে ফেরত আনা শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিম খলিল ভাষানটেকের মাদক ব্যবসার স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন। বর্তমানে ইব্রাহিম মালয়েশিয়ায় আত্মগোপন করেছেন। সেখান থেকে ইব্রাহিম তার মাদকের স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন বলে পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এসব ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতরে অপরাধ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, রাজধানীতে মাদক বিরোধী অভিযান চলবে। প্রয়োজনে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতে ব্লক রেইড দেওয়া হবে। মাদকসেবীদের তালিকা করে তাদের অভিভাবকদের জানাতে হবে। প্রয়োজনে মাদকসেবীদের সুস্থ ও পুনর্বাসন করতে অভিভাবকদের নির্দেশ দিতে হবে।