হানিফ সংকেত বেসরকারি অনুষ্ঠান নির্মাণের পথিকৃৎ। তার নির্মিত ইত্যাদি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান। সমাজের বিরল সফলতা তুলে ধরেন তিনি। তুলে ধরেন নানা অসঙ্গতি। তুলে আনেন অনেক সুপ্ত প্রতিভা। তার ইত্যাদি পরিণত হয়েছে ঈদ ঐতিহ্যে। প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও আসছেন জমকালো আর চমকানো ইত্যাদি নিয়ে। ঈদের সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আজ তার আলাপন—
এবারের ঈদ ইত্যাদির বৈশিষ্ট্য কি?
ঈদ হচ্ছে আনন্দের। তাই ঈদের অনুষ্ঠানটিতে আমরা চেষ্টা করি মানুষকে নির্মল বিনোদন দিতে। তবে ইত্যাদি যেহেতু তথ্য-শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, তাই প্রতিটি বিষয়েই আমরা ইত্যাদির চরিত্র ধারণ করতে চেষ্টা করি। যেমন বিদেশি পর্বে উঠে এসেছে পারিবারিক শান্তি বিষয়ক বক্তব্য। নাচের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি ও মানুষের সংগ্রামময় জীবন। সাবিনা ইয়াসমিন ও অ্যান্ড্রু কিশোরের গানটি করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে। দর্শক পর্বে উঠে এসেছে ভিনদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা করার কথা। তারকাদের দিয়ে নৃত্য-গীত-ছন্দ-সুরে তুলে ধরা হয়েছে নারী নির্যাতন, নারীর সম্ভ্রম রক্ষা, ভিনদেশি সিরিয়ালের ক্ষতিকর প্রভাব ইত্যাদি বিষয়। মিউজিক্যাল ড্রামায় তুলে ধরা হয়েছে দোকানে দোকানে মূল্যহ্রাস, বিশেষ অফারের রহস্য। মিউজিক্যাল তর্কযুদ্ধের মাধ্যমে চার তারকা গণমাধ্যমের চারটি বিশেষ অঙ্গনের একাল-সেকালের চিত্র তুলে ধরেছেন। দলীয় সংগীতের মাধ্যমে ‘জন্ম থেকে মৃত্যু মধ্যখানে বিয়ে, সব ক্ষেত্রেই টাকা দেয় মানুষ চিনিয়ে’— এই বিষয়টি খুব চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি পর্বই বক্তব্যধর্মী। যা বিনোদনের মাধ্যমেই তুলে ধরা হয় এবং এবারও হবে।
আপনি তো সব সময় সব বয়সের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নিয়ে অনুষ্ঠান করেন। বিষয়টি খুবই জটিল, তারপরও দীর্ঘদিন ধরে সাফল্যের সঙ্গে করছেন, কীভাবে?
টেলিভিশন কোনো নির্দিষ্ট পেশার নয়, সবার— সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য। তাই ইত্যাদিতে উঠে আসে সবার কথা। সে জন্য ইত্যাদিকে বলা হয় সব বয়সের, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অনুষ্ঠান। এর কারণ দুই দশক আগে যখন কোনো স্যাটেলাইট চ্যানেলই ছিল না তখন থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে আমাদের প্রাচীন নিদর্শন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গিয়ে ইত্যাদি নির্মাণ করতে চেষ্টা করেছি। তুলে ধরেছি সেই সব স্থানের নানা তথ্য। আমরা আনন্দিত আমাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই বিভিন্ন স্থানে গিয়ে এখন অনুষ্ঠান করছেন।
ইত্যাদির একটি বড় আকর্ষণ বিদেশিদের পর্ব। বিদেশিদের নিয়ে এত বড় আয়োজনে অনুষ্ঠান করার ধারণাটা মাথায় এলো কি করে? আর এত বিদেশিই বা জোগাড় করেন কি করে?
একসময় আমরা ইংরেজি ছবির দৃশ্যে বাংলা সংলাপ জুড়ে দিয়ে একটি ভিন্ন ধরনের পর্ব করতাম। যেখানে সংলাপগুলো বলতাম আমরাই। এ যুগে এসে তা সম্ভব হচ্ছে না। ইউটিউবের কারণে কপিরাইট সংক্রান্ত জটিলতায় এখন আর বাইরের কোনো ছবির দৃশ্য দেখানো সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এখন সরাসরি বিদেশিদের দিয়েই বাংলা বলাব। এটিও নতুন সংযোজন হবে। আর হয়েছেও তাই। এর মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। বিদেশিদের দিয়ে আমরা আমাদের ভাষায় গ্রামের সহজ সরল মানুষের চরিত্রে অভিনয় করিয়ে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি আমাদের লোকজ সংস্কৃতি।
আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি তুলে ধরতে ইত্যাদিকে নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন স্থানে কিন্তু ঈদের ইত্যাদির মঞ্চ ধারণের জন্য ইনডোর স্টেডিয়ামকে নির্বাচন করলেন কেন?
বর্ষা মৌসুমে হয় বলে আমরা কখনোই ঈদের অনুষ্ঠানটি ঢাকার বাইরে করতে পারিনি। কারণ ইত্যাদি অনুষ্ঠানটি ধারণ হয় রাতে। তাই প্রচুর লাইট ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু বৃষ্টিতে লাইট জ্বালানো যায় না। সেটও নির্মাণ করা যায় না। ঈদ ইত্যাদিতে থাকে ব্যাপক আয়োজন। কখনো ৫০০ থেকে সহস্র শিল্পীর অংশগ্রহণ থাকে। যাদের নিয়ে ঢাকার বাইরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। এসব কারণেও বর্ষা মৌসুমে ঈদের অনুষ্ঠান ঢাকার বাইরে করতে পারি না। তবে শীতকালে যখন ইত্যাদি হবে তখন অবশ্যই ঢাকার বাইরেই ঈদ ইত্যাদি হবে।
আপনার নাটক ও ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্য কতটুকু?
তেমন কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। ইত্যাদির মতো বিনোদনের পাশাপাশি নাটকের গল্পের মাধ্যমেও আমি কিছু বলতে চেষ্টা করি।
দর্শকদের জন্য কিছু বলুন।
আনন্দময় হয়ে উঠুক সবার ঈদ উৎসব। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।