গত ৩ জুন যারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন তারাই আজ কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে ঢাকা ছাড়ছেন। অগ্রীম টিকিট বিক্রি অনুযায়ী গত ১০ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা, সেই হিসেবে আজ তৃতীয় দিনের মতো কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে দেশের নানা প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ।
বিগত দিনগুলোর তুলনায় আজ কমলাপুরে ঈদ উদযাপনে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের ভিড় ছিল বেশি। তবে স্টেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ৩ দিন ঘরে ফেরা মানুষের সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার মোট ৬৬টি ট্রেন কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
কমলাপুর স্টেশনের প্লাটফর্মে সকাল থেকেই কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় ছিল সাধারণ যাত্রীরা। তাদের প্রায় সবার হাতেই ব্যাগ-লাগেজ।
সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে ৭ নম্বর কাউন্টারে এসে পৌঁছালো দিনজপুর থেকে ছেড়ে আসা একতা এক্সপ্রেস। কমলাপুর থেকে আবার কিছুক্ষণ পরই অর্থাৎ ১০টায় দিনাজপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে ট্রেনটি। আগে থেকেই প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষায় ছিলেন হাজারো মানুষ। ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানো মাত্রই যাত্রীদের হুড়োহুড়ি। ধাক্কাধাক্কি করে ট্রেনে উঠছে সবাই।
টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত যেন ভোগান্তি-বিড়ম্বনার শেষ নেই তবুও ঈদে আসলেই প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য, আর নাড়ির টানে ঘুরমুখো মানুষের ছুটে চলা যেন এটাই রীতি।
৯টা ১৫ মিনিটে ৩ নম্বর প্লাটফর্ম থেকে ছেড়ে যায় উত্তরবঙ্গগামী রংপুর এক্সপ্রেস। সেখানেও ছিল ব্যাপক যাত্রীর উপস্থিতি। ঈদ উদযাপনে সবাই যেন ছুটছে। সেই ট্রেনের জন্যই আগে থেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে কমলাপুর স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রায় ১১ ঘণ্টা টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে আজকের টিকিট পেয়েছিলাম, আবার ট্রেনে হুড়োহুড়ি করে উঠতে হবে, মানুষের ভিড়ে টিকিট অনুযায়ী আসনের কাছে পৌঁছানোই কঠিন। ঈদ আসলে টিকিট সংগ্রহ থেকে বাড়ি ফেরা আবার ফিরে আসা পর্যন্ত পদে পদে বিড়ম্বনা-ভোগান্তি। তবুও মানুষ সেসব উপেক্ষা করে নিজ গ্রামে ছুটে যায়। আর এত ভোগান্তি উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে প্রিয়জনের মুখ দেখলেই সব ভোগান্তি ভুলে যায় সবাই।
এদিকে যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার সুন্দরবন এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ও দিনাজপুর এক্সপ্রেস কিছুটা দেরি করে ছেড়েছে।
জামলাপুরগামী অগ্নিবীনা ট্রেনটি তখনও কমলাপুর ছেড়ে যায়নি। টিকিট অনুযায়ী ট্রেনের আসন খুঁজে ইতোমধ্যেই বসে পড়েছেন বেশিরভাগ যাত্রী। তাদের মধ্যে একজন আজাদুর রহমান। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনিও যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি। তিনি বলেন, সবার কাছে শুনছি এবারের ঈদ যাত্রায় ট্রেনের সিডিউল এখন পর্যন্ত ঠিক আছে। ঈদে যেহেতু সাবাই খুব কষ্ট করে যাতায়াত করে আর এই বিড়ম্বনা আরও বেড়ে যায় ট্রেনের সিডিউল ঠিক না থাকলে। তাই সংশ্লিদের বলতে চাই তারা যেন, যেকোনো মূল্যে ঈদের সময় সঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়ার ব্যবস্থা করেন।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানান, ঈদ উপলক্ষে প্রতিদন কমলাপুর থেকে প্রায় ৬০/৭০ হাজার মানুষ বিভিন্ন প্রান্তে যাবেন। যাত্রী চাপ সামলাতে প্রায় প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত বগি লাগানো হয়েছে। এছাড়া যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা আছে।
তিনি যাত্রীদের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, নিজেদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কোনো অবস্থাতেই যেন যাত্রীরা ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ না করেন।