সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষ। কেউ বাসে, কেউবা ট্রেনে আবার কেউ লঞ্চে। এর মধ্যে সড়ক পথে ভোগান্তির আশঙ্কা রমজানের শুরু থেকেই করেছিলেন সাধারণ যাত্রী ও পরিবহণসংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কের যানজট ও এখনো মেরামতের দৃশ্য দেখে সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, এবার ঈদে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী যা বলেছেন তা করে দেখাতে পারেননি। তিনি গত ৮ জুনের মধ্যে সড়ক মেরামত করে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার নির্দেশ দিয়েছেলন। সে নির্দেশ উপেক্ষা করেই সড়ক বিভাগ বলেছিল, এমন কোনো নির্দেশনা নেই। তারা নিয়মিত উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে সড়ক মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঈদ যাত্রা শুরুর আগে এ কাজের কতটা শেষ করতে পারবেন তাও জানাতে পারেননি তারা। এছাড়াও মন্ত্রীর বার বার নির্দেশ দেওয়ার পরও এখনো ঘুমিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ফিটনেসবিহীন গাড়ি মেরামত ও সড়কে চলাচল বন্ধে মন্ত্রীর নির্দেশ মানছে না বিআরটিএ। এদিকে, ঘরমুখো মানুষদের ঈদ যাত্রা শুরু হয়ে গেলেও এখনো সড়ক-মহাসড়কের সংস্কারকাজ শেষ করতে পারেনি সড়ক বিভাগ। গত ৮ জুন পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে সংস্কার কাজ এখনো চলছে। তাও আবার সময় স্বল্পতা ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে নির্ধারিত সময়ে শেষ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতা আর জ্যামের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে ঢাক-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বেশিরভাগ অংশে এখনো চলছে সংস্কার। কিছু জায়গায় শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে চলছে পাথর বা সুড়কি ফেলে খানাখন্দ ভরাটের কাজ। ভোগান্তির শিকার সাধারণ যাত্রীরা জানান, এখনো পর্যন্ত রাস্তার কোনো কাজই হয়নি। এতে ঈদে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে। রাস্তায় চলাচলের কোনো অবস্থা নেই। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত আসতে এখনই সময় লাগছে তিন ঘণ্টা। আর দু-একদিন পর সময়টা আরও বাড়বে। এ দৃশ্য দেখে ভয়াবহ ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন সাধারণ যাত্রীরা।প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বাড়ি ফেরা মানুষজনের ভিড় বাড়ছে বাস-লঞ্চ আর ট্রেন স্টেশনে। দুর্ভোগ আর দুর্দশা কাঁধে নিয়ে তাদের এ ঈদযাত্রা। এ যাত্রার দ্বিতীয় দিন সোমবার কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। দিনের প্রথম ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসের মাধ্যমে ঈদ যাত্রা শুরু হয়। গতকাল স্টেশনে গিয়ে যাত্রীদের প্রচ- ভিড় ঠেলে ট্রেনে উঠতে দেখা যায়। বগিতে জায়গা না পেয়ে অনেককে ছাদে উঠতে দেখা যায়। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে কমলাপুর স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৩টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৩০টি আন্তনগর, বাকিগুলো মেইল ও ঈদ স্পেশাল। তেমন কোনো ঝামেলা কিংবা দুর্ভোগ চোখে না পড়লেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী দু-একদিন পর থেকে প্রচ- ভিড় হবে ট্রেনে। এখন যারা যাচ্ছেন তারা মূলত অতিরিক্ত ভিড় এড়াতেই যাচ্ছেন। ঈদের ছুটি এখনো শুরু হয়নি, যে কারণে পরিবারের অন্য সদস্যদের পাঠিয়ে দিয়ে কর্মব্যস্ত মানুষরা যাবেন পরে। যাত্রীদের কেউ কেউ বলছে, সড়কের কারণে ট্রেনে দু-একদিন পর যাত্রীচাপ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানিয়েছে, প্রথমদিন স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ৬৩টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। দু-একটি ছাড়া সবগুলো ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে। শিডিউল বিপর্যয় তেমন একটা ছিল না। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী জানিয়েছেন, গত রোববার থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোয় ভিড় স্বাভাবিক। উপচেপড়া ভিড় এখনো শুরু হয়নি। তবে আগামীকাল ১২ জুন থেকে শুরু হতে পারে। ট্রেনের সময়সূচিতে জটিলতা নেই দাবি করে তিনি বলেন, সকালে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে শুধু সুন্দরবন এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আধা ঘণ্টা দেরি করেছে। সেটা দেরি করেই স্টেশনে এসেছিল। বাকি ট্রেনগুলো সব ঠিক সময়ে ছেড়েছে। এদিকে, ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ১৭ জেলার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এবার আপনজনের কাছে ফিরবেন নদীপথের ৪১টি নৌ-রুট দিয়ে। তাই প্রস্তুত করা হয়েছে দুই শতাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চ। তবে মাস্টাররা বলছেন, প্রয়োজনীয় বয়া-বাতি না থাকা ও অনিয়ন্ত্রিত মালবাহী নৌযানের পাশাপাশি ঈদে ঝড় মৌসুম হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণই থেকে যাবে এবারের ঈদের নৌপথ। যদিও নৌমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঈদের আগে পরে তিনদিন করে নৌপথে সব মালবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকবে। মাস্টাররা বলছেন, ঈদের আগে নদীতে প্রয়োজনীয় বয়া-বাতির পাশাপাশি লঞ্চে আধুনিক যন্ত্রপাতি না বসালে ঈদে নদীপথ ঝুঁকিমুক্ত হবে না। সদরঘাটে সোলায়মান নামের এক মাস্টার বলেন, বালুবাহী বলগেটগুলো যেভাবে এলোমেলোভাবে নদীতে চলাফেরা করে তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। তাছাড়া ঝড়ের ভয় তো আছেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝড় মৌসুমের মধ্যেই উত্তাল নদী পাড়ি দিয়ে এবারের ঈদে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদীপথে ঢাকা থেকে কম করে হলেও পঞ্চাশ লাখ মানুষ নিজ নিজ ঘরে ফিরবেন ঈদ পালন করতে। তাই সবকিছু বিবেচনা করে বাস্তবিক অর্থেই যদি ঈদ মৌসুমে নদীপথে চলাচলকারী অবৈধ মালবাহী নৌযান ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে নদীপথ।