শবে কদর এক মহিমান্বিত রজনী

হাজার রাতের চেয়েও উত্তম পবিত্র লাইলাতুল কদর সমগ্র মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনী।

মঙ্গলবার দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদরের রজনী।

পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআন লাইলাতুল কদরে নাজিল হয়। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, আমি কদর রাতে কোরআন নাজিল করেছি।

তাই মুসলিম উম্মাহ’র নিকট শবে কদরের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অত্যধিক। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যময় পরিবেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সারাদেশে পবিত্র শবে কদর পালন করবে।

শবে কদরের আমল:

মূলত উম্মতে মুহাম্মদীকে শবে কদর দেয়া হয়েছে ইবাদতের জন্য। পূর্ববর্তী নবীগণের অনুসারীদের বয়সসীমা অধিক ছিল বিধায় তারা দীর্ঘকাল যাবত ইবাদতের সুযোগ পেত। উম্মতে মুহাম্মদীর যেহেতু আয়ু কম, তাই ইবাদতের বাহুল্যতা নিয়ে সাহাবায়ে কিরামের একধরণের অপ্রাপ্তির অনুশোচনাবোধ ছিল। আর তা পুষিয়ে দিতে আল্লাহ পাক এমন এক রাত উপহার দিলেন, যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “লাইলাতুল কদরের বিশেষ আমল, সদক্বা, নামাজ, জাকাত- এগুলো এক হাজার মাসের আমল থেকেও উত্তম” (দুররে মনসুর)। এক হাজার মাসকে বছরের গণনায় হিসেব করলে তা দাঁড়ায় ৮৩ বছর ৪ মাস।

কোরআন তেলাওয়াত: পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, তা নাজিল হয়েছে পবিত্র কদর রজনীতে। এই রাতে কোরআন তেলাওয়াত না করলে আল্লাহর কিতাবের প্রতি আমাদের হক যথাযথ আদায় হবে না। বিশেষ করে সুরা কদর, ইয়াসিন, দুখান, মুজ্জাম্মিল, ত্বাহাসহ অধিকতর ফজিলতপূর্ণ সুরাসমূহ পাঠ করবে।

নফল নামাজ: এই রাতের অন্যতম কর্তব্য বেশিবেশি নফল নামাজ আদায় করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে কদরের রাতে নামাজে দাঁড়াবে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে” (সহীহ বুখারী)। নফল নামাজ অনেক ধরণের হতে পারে। তাহাজ্জুদ, আওয়াবিন, দুখুলুল মসজিদ, সালাতুত তাসবিহ, তাওবাহর নামাজ ইত্যাদি।

দোয়া করা: এই রাতের সুন্নাতসিদ্ধ আরেকটি আমল দোয়া করা। হযরত মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে ঐ রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফউয়া, ফাফু আন্নি” অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন (সুনানে ইবনে মাজাহ)। তাই প্রত্যেকের উচিত এই দোয়াটি বেশিবেশি পাঠ করা।

দান সদক্বা করা: দান সদক্বা সেবামূলক কাজ। ইসলামে অত্যন্ত প্রশংসিত আমল বলে এটি গণনীয়। আর শবে কদরে এক পয়সাও যদি কেউ দান করে, তবে সে ৮৩ বছর ৪ মাস দান করার নেকী অর্জন করতে সমর্থ হবে।

**অধিক হারে ইস্তেগফার করা।

** পিতামাতা ও নিকটাত্মীয়ের কবর জিয়ারত।

** জিকির-আজকারে মশগুল থাকা।

** দরুদ শরীফ পাঠ করা।

আরো অসংখ্য ইবাদত করা যেতে পারে উক্ত রাতে। সাথে সাথে পৃথিবীর নির্যাতিত সকল মুসলমানের মুক্তির জন্য দোয়া ও সমৃদ্ধি কামনা করতে হবে; এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে এই রাতেই। এইভাবে যদি আমরা ইবাদতের মাধ্যমে পবিত্র কদর রজনী পালন করতে পারি, তাহলে নিঃসন্দেহে আমাদের পরকালীন মুক্তি অনিবার্য।