সাক্ষাৎকার ছাড়া কোনো নারী কর্মীকে বিদেশ যেতে আর অনুমতি দেয়া হবে না। সম্প্রতি সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে নারী শ্রমিকদের দেশে ফিরে আসার পরিপ্রেক্ষিতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গতকাল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (বহির্গমন) ডি এম আতিকুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, নারী শ্রমিকদের বহির্গমন ক্লিয়ারেন্স দেয়া বন্ধ হয়নি। তবে এখন থেকে বিদেশগামী নারীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে আগে। তারপর ক্লিয়ারেন্স।
কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, এখানে অনেক সময় কম বয়সী আবার কখনো বেশি বয়সী মহিলা কর্মীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন। আবার অনেকে ভাষাও জানেন না ঠিকমতো। এসব ত্রুটির কারণে বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে বলে মনে করছি। এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করে বহির্গমন ছাড়পত্র দিলে শ্রমবাজারও ভালো থাকবে, আবার কোয়ালিটি লোকও বিদেশে যেতে পারবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার কযেক শ’ নারী শ্রমিক নিয়োগকর্তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তারা পালিয়ে প্রথমে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের শেল্টার হোমে অবস্থানে নেন। এরপর সরকারি টিকিটে তারা দেশে ফিরে আসেন।
সম্প্রতি দেশে ফিরে বিমানবন্দরে তাদের ওপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। চোখে মুখে নির্যাতনের চিহৃ দেখে স্বজনেরা আতকে উঠেন। তারা এ মুহূর্ত থেকে বিদেশে নারী কর্মী না পাঠাতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।
তবে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার যেসব মালিক বিদেশে মহিলা কর্মী প্রেরণ করছেন তারা বলছেন, বিদেশে যে পরিমাণ নারী বর্তমানে কাজ করছেন তার শতকরা একভাগও কর্মী সেখানে সমস্যায় নেই বলে দাবি করছেন।
তাদের অভিযোগ, আমাদের দেশের কিছু এনজিও সৌদি আরবের বিশাল শ্রমবাজার নষ্ট করতেই এখন উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা তো সরকারের সব নিয়মকানুন মেনেই বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠাচ্ছি। আমরা অবশ্যই নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এরপরও যদি কোনো নারী কর্মী সমস্যায় থাকেন তা অবশ্যই আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। এমন অনেককেই টিকিট দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তারা বলেন, শুধু ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে নারী কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না?
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অভিযোগ সেলের একজন উপসচিব গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা এখন যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাচ্ছি; প্রথমে তাদের দুই পক্ষকে ডাকছি। শুনানি করছি। যদি শুনানিতে কেউ না আসেন; তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিচ্ছি। অনেক সমস্যা উভয়পক্ষ বসেই মীমাংসা করে ফেলছেন। যারা সমাধান চাইছেন না তাদের লাইসেন্সের কার্যক্রম আমরা ব্লক করে দিচ্ছি। পরে নারী শ্রমিকদের দেশে আনা এবং ক্ষতিপূরণের টাকাও আদায় করে কর্মীর হাতে তুলে দিচ্ছি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার দেখা মতে, বিদেশে প্রায় দুই লাখের ওপর নারী শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু দেশে ফিরে আসছেন হাতেগোনা কয়েক শ’। এটা দেশ থেকে পাঠানো শ্রমিকের শতকরা একভাগও না। তবে অবশ্যই যারা বিদেশ গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিটিরই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
গতকাল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, নারী শ্রমিকের বাজার বন্ধ করতে কিছু এনজিও এখন তৎপর হয়ে উঠেছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে অবহিত হয়েছেন।