রমজান শুধু একটি মাসই নয়; বরং গোটা বছরের সঞ্চয়ের মৌসুম। পুরো বছরের ঈমানি প্রস্তুতি এ মাস থেকেই গ্রহণ করতে হয়। তাই তো রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য এর চেয়ে উত্তম মাস আর নেই এবং মুনাফিকদের জন্য এর চেয়ে ক্ষতির মাসও আর নেই।
মুসলমান এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সঞ্চয় করে। এ মাস মুমিনের জন্য অতি কল্যাণকর এবং মুনাফিকের জন্য অকল্যাণকর।’ (মুসনাদে আহমদ-২/৩৩০)।
রমজান মুমিনের ব্যবসার মৌসুম। কিন্তু কোন ব্যবসা? যে ব্যবসার মাধ্যমে মানুষ আখেরাতের কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পাবে, যে ব্যবসার মুনাফা হল আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতুন নাঈম। যে ব্যবসায় সফল হওয়া ছাড়া দুনিয়ার সব অর্জনই ব্যর্থ।
এমন ব্যবসার সন্ধান দিয়েই আল্লাহ বলছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদের এমন এক ব্যবসার কথা বলব, যা তোমাদের রক্ষা করবে যন্ত্রণাদায়ক আজাব থেকে? (তা এই যে,) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে এবং আল্লাহর পথে জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করবে। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জান।’ (সুরা সাফ্ফ-১১)।
সীমাহীন লাভের এ মৌসুমে আমাদের ব্যবসা কতটুকু হল? ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, আমরা তত মসজিদ ছেড়ে বাজারমুখী হচ্ছি। রমজানের দিনগুলো যত অতিবাহিত হচ্ছে, ততই কমে যাচ্ছে মুসল্লির সংখ্যা। এ কি আমাদের ব্যবসায় মুনাফার আলামত?
রমজানে সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্য নিষিদ্ধ নয়, তবে তাতে এমনভাবে মগ্ন হয়ে পড়ি যেন এ মাস পার্থিব ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এসেছে- এটা এ নেয়ামতের না শোকরি ছাড়া আর কিছুই নয়। বিশেষত ঈদের কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে রমজানের শেষ দশকে মার্কেটগুলোর যে অবস্থা দেখা যায়, তা খুবই দুঃখজনক। ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত তাদের বেচাকেনা নিয়ে আর অন্যরা শুধু কেনাকেটা নয়, এ মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে ঘোরাঘুরি ও আড্ডাবাজিতে সময় কাটায়। তারাবি তো দূরের কথা, বেশিরভাগ মানুষের ফরজ নামাজেরই খবর থাকে না। এ অবস্থায় বান্দার সিয়াম কতটুকু কাজে আসবে, তা ভেবে দেখা উচিত। অবশ্যই কেনাকাটা দোষণীয় কিছু নয়, কিন্তু এ উপলক্ষটিই যদি মূল লক্ষ্য হয়ে যায়, তাহলে তা অবশ্যই দোষণীয়।
রমজানের এ শেষ সময়ে রাসুল (সা.) আমাদের কদরের তালাশে থাকার আদেশ করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাতে কদর তালাশ করবে।’ (বুখারি)। তিনি আরও বলেন- ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশ দিন এত বেশি পরিশ্রম করতেন, যে প্রচেষ্টা-পরিশ্রম অন্য সময় করতেন না।’ তাই সচেতন বান্দা হিসেবে আমাদেরও উচিত এ সময়টুকু আখেরাতের ব্যবসায় পূর্ণ মনোযোগী হওয়া।
লাইলাতুল কদর শুধু ২৭ তারিখে সীমাবদ্ধ নয়, দল বেঁধে ২৭-এর রাতে মসজিদে কিছু সময় কাটানোকেই আমরা শবেকদর মনে করি। অথচ শবেকদর হল বান্দা ও রবের মাঝে ভালোবাসার বিশেষ একটি মুহূর্ত তৈরি করা। বান্দা যখন রবের তালাশে মত্ত হয়ে পড়বে, তখনই তার জীবনে আসবে কদরের বিশেষ সে ক্ষণটি। যে সময়টি হাজার বছরের চেয়েও দামি।
তাই তো রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শবেকদরকে রমজানের ৯ রাত বাকি থাকতে অথবা সাত রাত বাকি থাকতে অথবা পাঁচ রাত বাকি থাকতে অথবা তিন রাত বাকি থাকতে অথবা রমজানের শেষ রাতে (অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ রমজানের রাতে) তালাশ করবে। (তিরমিজি)।
রাসুল (সা.)-এর এসব হাদিস থেকে আমরা এটিই বুঝি যে, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি মুহূর্তই অত্যন্ত দামি। তাই দুনিয়াবি ব্যস্ততা ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থেকে এ সময়ে বেশি বেশি ইবাদত ও দোয়ায় মগ্ন থাকতে হবে। সময়কে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন কদরের সৌভাগ্য হাতছাড়া না হয়ে যায়। মূলত কদর হল প্রভুর প্রেমে মত্ত হওয়ার অন্তরঙ্গ এক মুহূর্ত। তাই আসুন! রমজানের বাকি দিনগুলোয় আমরা আল্লাহর প্রেমে মজে যাই।