মো. আবু তালহা তারীফ: ইসলামের মৌলিক রোকন ও প্রধান আর্থিক ইবাদত হল যাকাত। যাকাতের ওপরই ইসলামি রষ্ট্রের অর্থ ব্যবস্থ্যার ভিক্তি গড়ে উঠেছে। যাকাত ধনী ও দরিদ্রের মাঝে অর্থনৈতিক সেতু বন্ধন রচনা করে। রাসুল (সা.) বলেন,“যাকাত হল ইসলামের (ধনী গরীবের মধ্যকার) সেতু বন্ধন”।(তাবরানী)
যাকাত শব্দের অর্থ জবাই করা, প্রশংসা, প্রাচুর্য ও পবিত্রতা। সুফিয়ান সাওরী (রাহ:) বলেন, স্বীয় মালিকানাধীন সম্পত্তি হতে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট অংশ শরীয়তের নির্দেশানুপাতে বের করে দেয়াকে যাকাত বলা হয়। মহান আল্লাহ নিসাব পরিমান সম্পত্তি যার নিকট রয়েছে তাকে যাকাত দেওয়া জন্য বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। আল্লাহপাক নামাজের সাথে পবিত্র কোরআনে ৮২ স্থানে যাকাত দেওয়ার কথা উল্লোথ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কর,যাকাত প্রদান কর এবং রুকু কারীদের সাথে রুকু কর।(বাকারা-৪৩)
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলী: ধনী নির্ধন নির্বিশেষে সবার উপর যাকাত ফরজ করা হয়নি। যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নয়টি শর্ত রয়েছে। সে গুলো হল, ১. মুসলিম হওয়া ২. জ্ঞানবান হওয়া ৩.স্বাধীন হওয়া ৪. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ৫.ঋনমুক্ত হওয়া ৬.নেসাবের মালিক হওয়া ৭.মালিকানায় এক বছর থাকা ৮.সম্পদ মৌলিক প্রয়োজনীয় না হওয়া ৯. সম্পদ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ভাবে বর্ধন শীল হওয়া, যেমন পশু, স্বর্ন, রোপ্য ইত্যাদি। (আনওয়ারুল কোরআন)
যে সকল সম্পদে যাকাত ফরজ: সকল প্রকার সম্পদের উপর যাকাত ফরজ নহে। যাকাত পাঁচ প্রকার সম্পদে ফরজ: যেমন-১.গৃহপালিত পশু, ২.স্বর্ন-রৌপ্য বা নগদ ক্যাশ, ৩.ব্যবসায়ের পন্য, ৪.খনিজ সম্পদ, ৫.ফল ও ফসল।
যাকাতের নিসাব: যে পরিমান সম্পদ থাকলে যে পরিমান যাকাত দিতে হবে তা হল-১.অর্থ সম্পদ ব্যবসায়িক সম্পদের যাকাত শতকারা আড়াই টাকা হারে। ২. জমিতে উৎপন্ন ফসলের যাকাত পানি সেচের প্রয়োজন না হলে দশ ভাগের একভাগ এবং পানি সেচের প্রয়োজন হলে বিশ ভাগের একভাগ। ৩.স্বর্নের নিসাব সাড়ে সাত ভরি এবং রৌপ্যের নিসাব সাড়ে বায়ান্ন ভরি।৪.গরুর নিসাব ৩০টি ১টি বাছুর, ছাগলের নিসাব ৪০টিতে ১টি ছাগল এবং উটের নেসাব ৫টিতে ১টি উট ৫. মাটির তলদেশ থেকে খনিজ সম্পদে পাঁচ ভাগের একভাগ।
যাকে যাকাত দেওয়া যাবে : ইসলামে যাকাত বন্টনের জন্য নির্দিষ্ট খাত রয়েছে যাকে মাসারিফুস যাকাত বলা হয়। পবিত্র কোরআনে যাকাত বন্টনের আটটি খাতের বনর্না করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, “সদকা (যাকাত) কেবল ফকির, মিসকিন, যাকাত আদায়ের কর্মচারী যাদের চিত্তাকর্ষন করা প্রয়োজন তাদের জন্য এবং দাসমুক্তি,ঋনগ্রস্থ, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুশাফিরদের জন্য। এটা মহান আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞানী,প্রজ্ঞাময়”।(সূরা তাওবা-৬০)
যাকাত প্রদান করার সুফল: যাকাত আদায় করে সম্পদ পবিত্র হয় এবং সম্পদে বরকত হয়। যাকাত আদায় করলে সম্পদ বৃদ্ধি হয়ে থাকে সম্পদ কখনো কমে যায় না। মহান আল্লাহ বলেন, “যাতে মানুষের ধন সম্পদ বৃদ্ধি পায় সে জন্য তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক আল্লাহর দৃষ্টিতে তা দন সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তোমরা যে য়াকাত দিয়ে থাক তাই বদ্ধিত হয়”।(সূরা রুম-৩৯)
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর জন্য তার নিদিষ্ট সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ যাকাত দিবে তাহার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা পুুরুস্কারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্য়ই যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে নামাজ প্রতিষ্ঠা করে যাকাত দেয়, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে পুরুস্কার। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত ও হবেনা”।(বাকারা-২৭৭)
যাকাত দান নয় অধিকার: যাকাত ধনী পক্ষ থেকে দান বা অনুগ্রহ নয়। বরং যাকাত পরিশোধ করা বিত্তবানদের অপরিহার্য কর্তব্য বা ফরজ। আল্লাহ তায়ালা নিজেই যাকাত কে ধনীদের সম্পদে অসহায় ও বঞ্চিতদের অধিকার হিসেবে ঘোষনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তার ধন দ্যেলতে বঞ্চিত ও প্রার্থীদের অধিকার রয়েছে”।