মাদক ও নেশাদ্রব্য মানবসভ্যতার চরম শত্রু। এটা জীবন ও সম্ভাবনাকে নষ্ট করে, শান্তির পরিবারে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে সমাজে অনাচার ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে সুসৃঙ্খল জীবনের চাকাকে পেছন দিকে ঘুরিয়ে দেয়। কারণ ইসলামপূর্ব জাহেলি সমাজেও মাদকের দাপট ছিল। মাদকের যতই বিস্তার হবে, সভ্যতা ততই পশ্চাদপদ হবে। ফিরে যাবে জাহিলিয়াতের সেই ভয়ঙ্কর যুগে।
কল্যাণের ধর্ম ইসলামে নেশা ও মাদক সম্পূর্ণ হারাম। জাহিলিয়াতের সেই মাদককে চরমভাবে ঘৃণার বস্তুতে পরিণত করেছে ইসলাম। মদক প্রসঙ্গে সুস্পষ্টভাবে পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয় করার শর তো কেবল ঘৃণার বস্তু, শয়তানের কাজ। তাই তোমরা সেগুলো বর্জন করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। শয়তান তো এ-ই চায় যে, মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে বিরত রাখবে। সুতরাং তোমরা কি নিবৃত্ত হচ্ছ।’ (সূরা মায়েদা-৯০, ৯১)।
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মাদককে ঘোষণা করেছেন ঘৃণ্য ও বর্জনীয় বস্তু হিসেবে। সুতরাং নাম যা-ই হোক না কেন, সব ধরনের মাদকই হারাম ঘৃন্য। বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে একটি হাদিসে। আবু মূসা আশ’আরী (রা.) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে (আবু মূসাকে গভর্নর নিযুক্ত করে) ইয়েমেনে পাঠিয়েছেন। তখন তিনি ইয়েমেনে তৈরি করা হয় এমন কতিপয় শরাব সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ওইগুলো কী কী? আবু মূসা (রা.) বললেন, তা হলো বিত্ত ও মিশ্র শরাব।
বর্ণনাকারী সা’ঈদ (রহ.) বলেন, আমি আবু বুরদাহকে জিজ্ঞাসা করলাম, বিত্ত কী? তিনি বললেন, বিত্ত হলো মধু থেকে গ্যাজানো রস আর মিশ্র হলো যবের গ্যাঁজানো রস। (সা’ঈদ বলেন) তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সব নেশা উৎপাদক বস্তুই হারাম। (বোখারি)। মাদক অন্যতম শীর্ষ কবিরা গুনাহ। যারা মাদক গ্রহণ করে আর যারা মাদকের ব্যবসা করা সবাই আল্লাহ তাযালার পক্ষ থেকে অভিশপ্ত। পরকাল তো ধ্বংস হবেই, আল্লাহর অভিশাপ নিয়ে কেউই দুনিয়াতেও শন্তি পাবে না।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : মদ, তা পানকারী, পরিবেশনকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, উৎপাদক ও শোধনকারী, যে উৎপাদন করায়, সরবরাহকারী এবং যার জন্য সরবরাহ করা হয় এদের সবাইকে আল্লাহ লা’নত করেছেন (আবু দাউদ)। মাদক সেবনকারী কিংবা মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের যতই চালাক কিংবা ক্ষমতাধর মনে করুক আল্লাহর অভিশাপ নিয়ে চুড়ান্তভাবে তারা সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হবে। বাহ্যিকভাবে ক্ষমতা কিংবা কৌশলে দুনিয়ার আদালতে ফাঁকি দিলেও পরকালের আদালতে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে তাদে নিশ্চিতভাবে।
মদ, গাঁজা, অফিম কিংবা ইয়াবা যে নামেই হোক না কেন মাদক হারাম। যদি কেউ এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তাহলে ইসলাম তাঁকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনবেই। নবীজি (সা.) প্রয়োজনে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথাও বলেছেন। হজরত দায়লাম আল-হিময়ারি (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসুল! আমরা শীতপ্রধান এলাকায় বসবাস করি। আমাদের সেখানে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আমরা গম থেকে তৈরি মদ পান করে ক্লান্তি দূর করি ও শীত প্রতিরোধ করি। তিনি প্রশ্ন করলেন, তাতে কি নেশার সৃষ্টি হয়? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তবে তা বর্জন করো। আমি বললাম, কিন্তু লোকেরা তা বর্জন করবে না। তিনি বললেন, যদি তারা এটা বর্জন না করে তাহলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর (সুনানে আবু দাউদ)।
ইসলামী শরিয়া মাদকের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি যে দলেরই হোক না কেন তাকে শাস্তির আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। নির্ধারণ করে দিয়েছে মাদকের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি। ইসলাম বলে, মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে আশি দোররা বা বেত্রাঘাত করতে হবে। হযরত জাবের রা. হতে বর্ণিত রাসুল সা. বলেন; যে ব্যক্তি মদপান করে তাকে বেত্রাঘাত করো। যদি চতুর্থবার পান করে তবে তাকে হত্যা করো। তিনি বলেন পরে অনুরূপ এক ব্যক্তিকে তার নিকট আনা হলে তিনি তাকে প্রহার করেন কিন্তু হত্যা করেননি। (মিশকাত- ৩৬১৭)।
শুধু শহরই নয়, মাদকের বিষাক্ত ছোবলে আজ গ্রাম, পাড়া, মহল্লা সবই আক্রান্ত। মাদকের কারণেই বাড়ে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধ। ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় মাদকসেবী কিংবা মাদকের ব্যবসায়ীদের প্রকাশ্যে বেত্রাঘাতের আওতায় আনলে সমাজ মুক্তি পাবে মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে। আল্লাহ তায়ালা মাদকের সঙ্গে জড়িত সবাইকে তাওবা করে সুপথে ফিরে আসার তাওফিক দিন!