মিয়ানমারে জাতিগত নিধন, নির্যাতন ও নিপীড়নের স্বীকার হয়ে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে৷ আর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে।বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
রোহিঙ্গা নিপীড়ন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) অনুরোধের জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কবে বাংলাদেশ জবাব দিয়েছে তা উল্লেখ করেননি তিনি। তিনি শুধু বলেছেন, কার্যত এই অনুরোধের জবাব দেওয়া আবশ্যিক ছিল।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আদালত অনুরোধ জানিয়েছে। তাই বাংলাদেশ অনুরোধ অনুযায়ী তথ্য দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছিল এবং আমরা অভিজ্ঞতা থেকে যা জানি তার সব তথ্যই দেওয়া হয়েছে।’
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া পাঁচ দফা প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা এখনো এ বিষয়টি দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দায়িত্বশীল রাষ্ট্র। এ দেশের কর্মকাণ্ড সব সময় সর্বজনীন মূল্যবোধ ও আইন দ্বারা পরিচালিত।
এর আগে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইসিসির অনুরোধ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছিলেন, দুটি অগ্রাধিকার সামনে রেখে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে আইসিসির চিঠির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বাংলাদেশ আইসিসির চিঠির জবাব দিচ্ছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘যে জনগোষ্ঠীকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি আমরা চাই তারা সম্মানে, স্বেচ্ছায় ও নিরাপত্তার সঙ্গে চলে যাবে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সেটিকেও সংরক্ষণ করতে হবে। এ দুটিকে সামনে রেখেই বাংলাদেশ কাজ করছে।’
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশ যদি আইসিসির মাধ্যমে মিয়ানমারকে বিচার প্রক্রিয়ায় মুখোমুখি করে তবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। আবার একইভাবে ওই চিঠির জবাব দিতেও বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়ছিল।
মিয়ানমার আইসিসির সদস্য নয়। এ কারণে মিয়ানমারের ওপর আইসিসির সরাসরি এখতিয়ার নেই। অন্যদিকে আইসিসির সদস্য এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ওই আদালতে শরণাপন্ন হতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন। এমনকি আইসিসির একজন প্রসিকিউটর এ বিষয়ে আদালতের রুল চেয়েছেন। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর বিচারিক এখতিয়ার আছে কি না এ বিষয়ে জানতে চেয়ে গত মাসে বাংলাদেশকে চিঠি পাঠায় আইসিসি। ১১ জুনের মধ্যে ওই চিঠি জবাব দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করা হয়েছিল।