আম্মু কবরে কীভাবে একা থাকবেন, সেখানে একা কীভাবে ঘুমাবেন?

ছোট্ট শিশুটি কিছুক্ষণ পর পর আহাজারি করে বলছে, আম্মু মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াতো। আম্মুর বুকেই রোজ ঘুমাতাম। আম্মুই ছিলেন আমাদের সব। আজ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। এখন কার বুকে ঘুমাবো? আম্মুকে ছাড়া কীভাবে থাকবো?

প্রশ্নগুলো চট্টগ্রামে শুক্রবার সকালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো হাসিনা আক্তারের ১০ বছর বয়সী মেয়ে রুহী আক্তারের। মাকে হারানোর পর আহত ভাই ইমরান সাবিতকে নিয়ে চিকিৎসকরা যখন চমেক হাসপাতালের এক্স-রে রুমে ছোটাছুটি করছে তখন বাইরে দাঁড়িয়ে এসব প্রশ্ন করতে করতেই আহাজারি করছিল অবুঝ শিশুটি।

রুহী’র পাশে বসা বোন নাঈমা আক্তারেরও একই দশা। তিনি বাবা মাওলানা মো. হোসাইনকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছেন আর বলছেন, সব সময় আমরা কেউ না কেউ আম্মুর সঙ্গে থাকতাম। আম্মু কখনো একা থাকেনি। আম্মু কবরে কীভাবে একা থাকবেন? সেখানে একা কীভাবে ঘুমাবেন?

স্ত্রী হারানোর শোকে কাতর মো. হোসাইন দুই মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছেন। এই মানুষটির দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরলেও একদম চুপচাপ তিনি।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর বাকলিয়া থানাধীন শাহ আমানত সেতুসংলগ্ন এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয় হাসিনা আক্তারের । এসময় দুই নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও নয়জন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাহ আমানত সেতুর অদূরে মেরিনার্স সড়কের প্রবেশ মুখে যেখানে এ দুর্ঘটনা ঘটে, সেখানে বেশ কয়েকটি রিকশা ও অটোরিকশা যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল। টেম্পোতে ওঠার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকে। ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই ভিড়ের মধ্যে উঠে পড়ে।

নিহতদের মধ্যে তিনজন হলেন নাসরিন আক্তার (৩৫), হাসিনা (৪০) ও শাহপরান (২৮)।
পুরুষ আরেকজনের নাম ও পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।
এ ছাড়া আহত আবদুস সাত্তার (৪০), ইমরান (৬), আবদুর রহমান (৪০), অনিল বড়ুয়া (৪৫), শারমিন আক্তার (২৩), রিগান (৩৩), সিফাত (১৬), দিদার (৩০) ও জাহাঙ্গীর আলমকে (৪৫) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।