মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর এবার বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট তৈরির প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘একটি স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল ১৫ বছর। একটি স্যাটেলাইট তৈরি করতে ৫-৬ বছর লেগে যায়। সেজন্য আমরা এখন থেকেই বঙ্গবন্ধু-২ তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। একটা থাকতে থাকতে আরেকটি যেন চালু হয়ে যেতে পারে সেটা মাথায় রেখেই আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি।’
গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে রুস্তম আলী ফরাজীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের টাইম শেষ হয়ে এলে আমরা বঙ্গবন্ধু-৩ তৈরি করব। এভাবে পর্যায়ক্রমে আমাদের ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। যখন যে প্রযুক্তি আসবে সেটা যেন আমরা গবেষণা, ধারণ ও ব্যবহার করতে পারি সেই ব্যবস্থা নেবো। দেখি আগামীতে নতুন কী যুগ আসে, তখন আমরা সেদিকেও যাবো। যখনই যেটা আধুনিক ও যুগোপযোগী হবে সেটাই আমরা চিন্তাভাবনা করব।’
স্যাটেলাইট নিয়ে বিএনপির অভিযোগ সম্পর্কে ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্যাটেলাইট উৎপেণে দেশ-বিদেশের সব বাঙালি খুশিতে উদ্বেলিত। সবার চোখে আনন্দ অশ্রু। সব মানুষ যখন এত খুশি, তখন বিএনপি কেন এত দুঃখী। পৃথিবীর অনেক দেশ আমাদের অনেক আগেই স্যাটেলাইট উৎপেণ করেছে। আমরা কেন পারলাম না?’
স্যাটেলাইটের মালিকানা নিয়ে বিএনপির অভিযোগের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্যাটেলাইটের মালিকানা অবশ্যই বাংলাদেশের। সরকার যেভাবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মালিক হয় সেইভাবে আমরা এর মালিক হয়েছি। তবে এটি ব্যবহার করার েেত্র যারা যতটুকু ভাড়া নেবে তারা ততটুকু মালিক হবে। দুটি ব্যক্তি তো এর মালিক হতে পারে না। এ ধরনের মন্তব্য করাটাও লজ্জাজনক। এর ৪০টি ট্রান্সপন্ডার আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে ২০টি। বাকি ২০টি আমরা সার্কভুক্ত দেশসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশের কাছে ভাড়া দিতে পারব। এখানে দুই ব্যক্তি মালিক কিভাবে হলো সেটা বুঝতে পারছি না। কোনো মানুষ দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকলে এবং স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলে ওই ধরনের মন্তব্য করতে পারে না। স্যাটেলাইটের ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টেলিভিশন টু হোম) টেকনোলজি ব্যবহারের জন্য দু’জনকে ভাড়া দেয়া হয়েছে। বিএনপি দু’জন মালিক বলতে সেটাকে বুঝেছে কী না বোধগম্য নয়। অর্বাচীনের মতো এই ধরনের কথা বলা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এর থেকে বোঝা যায় তারা মানুষকে ভালোবাসে কি না। কাজেই এরা দেশ চালালে দেশের উন্নতি হবে কী করে?’
প্রযুক্তি সম্পর্কে বিএনপির কোনো ধারণাই নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তাদের চিন্তাভাবনা এত সংকীর্ণ যে, এই অঞ্চলে যখন সাবমেরিন ক্যাবল আসে তখন বিনা পয়সায় দেয়া হলেও বিএনপি সরকার তথ্য পাচার হবে বলে তারা সেটি নিলো না। এই কথা বলে আমাদের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। জানি না বিএনপির কাছে কী এমন গোপন তথ্য থাকে যে কুগিত রাখতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘সাগরের তলদেশ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশের মর্যাদাকে উন্নত করেছি। অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে এজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’
স্যাটেলাইটের সুবিধা পাওয়া বিষয়ে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্যাটেলাইট ইতোমধ্যে তার কপথে পৌঁছে গেছে। সিগন্যাল দিতে শুরু করেছে। একবার যখন কাজ শুরু করে দেবে তখন কোনো সমস্যা হবে না। কোনো সন্দেহ করার কিছু নেই। এটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার দরকার নেই।’