বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের মধ্যে। বুধবার সম্পাদিত ওই চুক্তির অধীনে কিছু রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ত্রিপক্ষীয় এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি ইউএনএইচসিআর, জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি বিষয়ক এজেন্সি ইউএনডিপি ও মিয়ানমার সরকার। মিয়ানমারের রাজধানী ন্যাপিডতে এই চুক্তি হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। এতে পারস্পরিক সহযোগিতার একটি কাঠামো (ফ্রেমওয়ার্ক অব কো-অপারেশন) গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে উভয়পক্ষ।
এর ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইয়াঙ্গুন থেকে এপি লিখেছে, ২৫শে আগস্ট রাখাইনে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা সৃষ্টির পর প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এসে ঠাঁই নেন বাংলাদেশে। তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরাতে বিভিন্ন রকম চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে এসব রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো নিয়ে একটি চুক্তি হয়। কিন্তু নানাবিধ জটিলতায় সে প্রক্রিয়া দৃশ্যত থমকে গেছে। এ জন্য উভয় দেশ একে অন্যকে দায়ী করছে। সর্বশেষ এ উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনার। বুধবার মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এরপর মিয়ানমারে নিয়োজিত আবাসিক ও মানবাধিকার বিষয়ক সমন্বয়কারী ক্লুত ওস্তবি বলেছেন, সংকট সমাধানে এই উদ্যোগটিই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রথম পদক্ষেপ। তিনি আরো বলেন, এখনো অনেক কাজ বাকি আছে, যা করতে হবে। এসব কাজকে খাটো করে দেখা উচিত হবে না। আমরা প্রায় ৭ লাখ উদ্বাস্তুর ফিরে যাওয়া নিয়ে আলোচনা করছি। কিন্তু এখনো তাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সমাজে তাদের পরিচিতি, তাদের নিরাপত্তা, সেবাখাত, জীবন-জীবিকা, বসবাসের স্থান ও অবকাঠামো কোনোকিছুই তাদের অনুকূলে আসেনি। জাতিসংঘ বলেছে, সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ও উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলো রাখাইন রাজ্য সফরের সুযোগ পাবে। এর মাধ্যমে শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মূল্যায়ন করতে পারবে। তারা সেখানে বিদ্যমান পরিবেশ সম্পর্কে উদ্বাস্তুদের জানাতে পারবে। তার ওপর ভিত্তি করে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, তারা দেশে ফিরে যাবেন কিনা। তবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন কখন সম্ভব হবে এ বিষয়ে নিরাশ মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলো। এক্ষেত্রে মিয়ানমার থেকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতির ঘাটতি আছে বলে মনে করেন তারা। কারণ, মিয়ানমার দশকের পর দশক ধরে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে শত্রুতাপূর্ণ আচরণ করে আসছে। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে তাদেরকে নাগরিক সুবিধা দেয়া হয় নি। সেই থেকে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে পরবাসী হয়ে বসবাস করছেন। তাই বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক কাইওয়া উইন বলেন, এসব রোহিঙ্গা ফিরে গেলে তাদেরকে আবারো নিষ্পেষণের মুখে পড়তে হবে না এমন কি নিশ্চয়তা এবং কীভাবে সেই নিশ্চয়তা দেবে মিয়ানমার সরকার? এই চুক্তি হলো মিয়ানমার সরকারের একটি রাজনৈতিক কৌশল। তারা এটা মানবে না।